সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পূর্বদেলুয়ার বাসিন্দা মো. আলমগীর হোসেন। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বেসরকারি জীবন বিমা প্রতিষ্ঠান হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিমা পলিসি কেনেন তিনি। নিজের ক্ষুদ্র সঞ্চয় দিয়ে নিয়মিত পরিশোধ করেন বিমা পলিসির প্রিমিয়ার টাকা। ২০১৮ সালে বিমা পলিসিটির মেয়াদ শেষ হলেও এখনো বিমা দাবির টাকা পাননি তিনি।
Advertisement
শুধু আলমগীর হোসেন নন, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উল্লাপাড়ার পূর্বদেলুয়া শাখার মাধ্যমে বিমা পলিসি কেনা অনেক গ্রাহক মেয়াদ শেষে বিমা দাবির টাকা পাচ্ছেন না। বিমা দাবির টাকা পেতে কোম্পানিতে ধর্না দিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা।
এ বিষয়ে আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, অধিক মুনাফার কথা বলে আমাদের কাছে বিমা পলিসি বিক্রি করেন হোমল্যান্ড লাইফের কর্মকর্তারা। এখন মুনাফা তো দূরের কথা কোম্পানিতে যে টাকা জমা দিয়েছি তাই ফেরত পাচ্ছি না। ২০১৮ সালের মার্চে আমার বিমা পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর তিন বছর চলে গেলেও এখনো বিমার টাকা পাইনি।
‘যার মাধ্যমে বিমা করেছিলাম তার কাছে গেলে বলেন প্রধান কার্যালয় থেকে টাকা দিচ্ছে না। কিন্তু আমরা তো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, বিমার সব কাগজপত্র জমা দিয়েছি। নিয়মিত পলিসির টাকা দিয়েছি। তাহলে এখন কেন এভাবে হয়রানির শিকার হবো। আমরা গরিব মানুষ। অনেক কষ্ট করে জমানো টাকা দিয়ে বিমা পলিসি কিনেছি। এখন সেই টাকা পেতেই নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’
Advertisement
হোমল্যান্ড লাইফ থেকে বিমা দাবির টাকা না পেয়ে সম্প্রতি উল্লাপাড়া পূর্বদেলুয়ার শাখার মাধ্যমে বিমা পলিসি কেনা ২৪ জন গ্রাহক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাদের মধ্যে ২১ জনের বিমা পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালে। ২০২০ সালে শেষ হয়েছে বাকি তিনজনের পলিসির মেয়াদ।
এসব গ্রাহকের পক্ষে আইডিআরএ’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন পূর্বদেলুয়ার ইসলামী ডিপিএস (তাকাফুল) প্রকল্পের ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার মো. আমিরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ ২৪ জন বিমা গ্রাহকের মূল পাস বই, মূল প্রিমিয়ার রসিদ, গ্রাহকের নাম, পলিসি নম্বর ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন।
আমিরুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, তিনি উল্লাপাড়া অফিস থেকে ঢাকা হেড অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা পাননি। অন্যদিকে পাওনা টাকা না পেয়ে এজেন্ট ও বিএমদের মারধর, তাদের বাড়ি-ঘরে গিয়ে অশোভন আচরণ এবং রাস্তাঘাটে চলাফেরায় অসুবিধা করছেন বিমা গ্রাহকরা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আমিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমি অনেকদিন ধরে হোমল্যান্ড লাইফে কাজ করছি। আমার আত্মীয়-স্বজনসহ আশপাশের অনেকের কাছে হোমল্যান্ড লাইফের বিমা পলিসি বিক্রি করেছি। এখন যেসব গ্রাহকের বিমা পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে তারা টাকা পাচ্ছেন না। কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। বলে কোম্পানিতে এখন টাকা নেই। এভাবে দিনের পর দিন ঘুরাচ্ছে।
Advertisement
‘কোম্পানি টাকা না দেওয়ায় আমি বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়েছি। আমার আরেকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। বিমা পলিসি কেনা গ্রাহকরা এসে সেখান থেকে এটা-ওটা (পণ্য) নিয়ে যান। টাকা চাইলে বলেন বিমার টাকা পেলে তারপর দেবো। আবার কিছু এলাকা আছে যেখানে আমি ভয়েই এখন যেতে পারি না। আমি যে কী বিপদে আছি বলে বোঝাতে পারবো না।’
তিনি আরও বলেন, কোম্পানি যেসব গ্রাহকের পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাদের দাবির টাকা দিচ্ছে না। এখন আর আমি কারও কাছে বিমার নতুন পলিসি বিক্রি করছি না। এরপরও সব সময় নানা দুশ্চিন্তায় থাকি। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। আমার এলাকার মানুষ যাতে তাদের বিমা দাবির টাকা পান সেজন্য আইডিআরএ’র কাছে আবেদন করেছি। কারণ একটি মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি যেসব বিমা গ্রাহক মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও দাবির টাকা পাচ্ছেন না, তাদের কাছ থেকে আইডিআরএ আবেদন চেয়েছে।
হোমল্যান্ড লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আজিজুল ইসলাম তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা গ্রাহকদের বিমা দাবির টাকা দিচ্ছি না এমন অভিযোগ ঠিক নয়। হয়তো প্রসেসিংয়ের জন্য দাবির টাকা পরিশোধ করতে একটু সময় লাগছে। আমরা নিয়মিত গ্রাহকদের বিমা দাবির টাকা পরিশোধ করছি। যদি কোনো গ্রাহক বিমা দাবির টাকা না পেয়ে থাকেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন, কাগজপত্র ঠিক থাকলে আমরা অবশ্যই বিমা দাবির টাকা পরিশোধ করবো।
এমএএস/এমএএইচ/এএ/এএসএম