মতামত

প্রকৃত অপরাধী যেন পার না পায়

সবার দাবি আমরা নই, এজন্য ওরা দোষী। কুমিল্লায় নানুয়া দিঘীরপাড় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার ঘটনায় দেশের সবমহল নিন্দা জানাচ্ছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোসহ বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার কথায় তৎপর হয়ে উঠেছে। এক অপরকে দোষ দিয়ে শাস্তি দাবি করে চলেছে। এজন্য তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। আজকাল প্রযুক্তির যুগে তদন্ত করা বেশ সহজ এবং দ্রুত অপরাধীকে শনাক্ত করা যায়। তবুও কেন দেরি হচ্ছে? তাই বিষয়টি নিয়ে যারপরনাই সন্দেহ শুরু হয়েছে।

Advertisement

সিসি ক্যামেরা ও সশরীরে পাহারাদার সবকিছুই ছিল সেখানে। তারা কি ঘুমাচ্ছিল? আইপিএস বা জেনারেটর দিয়ে সার্বক্ষণিক বিদ্দুৎ-এর ব্যবস্থা ছিল সব পূজামণ্ডপে। পূজা কামিটির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী বা কমিটি ছিল। তাদের সবার হাতে আধুনিক মোবাইল ফোন না থাকার কথা নয়। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা প্রায় সকল পূজামণ্ডপে নেয়া হয়েছে সরকারি ও বেসরকারিভাবে। তাদের চোখ ও প্রযুক্তির বলয় পেরিয়ে কেউ কুকর্ম করতে ঢুকলে অনায়াসে চিহ্নিত করার কথা। তাহলে এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেবার কথা ও সংবাদ কি খুব দুর্বল অথবা শুধু কথার কথা ?

পাহারাদারগণ কেউ দেখতে পেল না, কিন্তু সিসিটিভি ক্যামেরার রেকর্ড কী বলে? সরকারি লোকেরা বলছেন নির্বাচনের আগে দেশের পরিবেশ ঘোলাটে করার জন্য -এটা বিরোধীদলের কাজ। আর বিরোধী পক্ষের লোকেরা দুষছেন সরকারকে। করোনাকালে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। প্রযুক্তির উপকারিতা নিয়ে বাহাদুরি করে চলেছে অনেকেই। কিন্তু এখনও বার বার লোডশেডিং,বিদ্দুৎবিহীনতা ও দ্রুতগতিহীন ইন্টারনেট প্রযুক্তির বড় সীমাবদ্ধতার কারণে এর অসার দিকগুলো নিয়ে তেমন কোন সংবাদ চোখে পড়ে না।

বাজার থেকে শুধু মেশিন কিনে লাগালেই হবে না। সেসব মেশিন কতকাল আগের প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি তা কেনার আগে যাচাই করতে হবে। এক বছর আগের তৈরি সফটওয়্যার পরের বছরই অচল হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে নিত্য-নতুন প্রযুক্তির কাছে। চতুর মেধাবী হ্যাকাররা দিনরাত সেগুলো নিয়ে স্কুল খুলে গবেষণা চালাচ্ছে। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠতে হলে প্রযুক্তি ব্যবহারকারীতে আরো বেশি কুশলী ও শ্রম দিতে হবে প্রতিদিন। তা করা না গেলে বিদেশের গুদামে পড়ে থাকা সামগ্রী কমদামে কিনে এসব আমদানী নির্ভর, ধার করা প্রযুক্তি আমাদেরকে মুহূর্তেই অন্ধকারের গহীন অতলে ঠেলে দিতে পারে।

Advertisement

এক শ্রেণির মানুষ যখন বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে ঠাঁই নিতে গিয়ে পেরে উঠে না বা পারে না, তখন না বুঝেই অপরকে দোষারোপ করে। যাকে বলা হয়-‘উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানো’। আমাদের দেশে এই সমস্যা বেশি প্রকট। নিজে বকলম হয়ে কেরানিকে গালাগালি করে সময় পার করে দিতে আমরা খুব ওস্তাদ। আবার কোন কিছুর গভীর জ্ঞান না থাকলেও তা নিয়ে বাহাদুরি করি। এই মুহূর্তে পবিত্র কোরআন অবমাননাকারীকে শাস্তি দেবার কথা আমরা সবাই বলছি। দাবি করছি কঠিন শাস্তি দেয়া হোক। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে। আশা করা যায় অপরাধী ধরা পড়বে।

ধর্ম নিয়ে খেলা করার পরিণাম কখনোই ভাল হয় না। বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা ভাল কাজ নয়। এটা আমাদের মহানবী (সা.)-এর নিকটও বড় অপছন্দের বিষয়। তাই সব জায়গায় চালাকি না করে যুক্তি, সততা, সৎকাজ, ন্যায়পরায়ণতা দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টায় লিপ্ত হোন সবাই। তবেই প্রকৃত অপরাধীকে দ্রুত খুঁজে পাওয়া যেতে পারে এবং সবার দাবি অনুযায়ী অবমাননাকারীকে শাস্তির আওতায় আনা যেতে পারে। অন্যথায়, রাজনৈতিক গ্যাঁড়াকলে পড়ে আজকের এ দাবি আগামীকালই বাসী হয়ে- হবে অরণ্যে রোদন মাত্র।

লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন, সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সাবেক চেয়ারম্যান। fakrul@ru.ac.bd

এইচআর/এএসএম

Advertisement