বরগুনার সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলার উন্নয়নে ২০ প্রকল্পের জন্য ৩৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৮ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু। এর মধ্যে ১৪টি প্রকল্পের কাজ না হলেও ৩২ লাখ ৭ হাজার ৬৮৮ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব প্রকল্পে দেখানো হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সড়ক। তবে প্রকল্প সম্পর্কে জানেন না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সড়কের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কেউই।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির দ্বিতীয় কিস্তিতে আমতলী সরকারি কলেজের মাঠ উন্নয়ন করতে চলতি বছরের ১৮ মার্চ নগদ ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু। কাজ শেষ দেখিয়ে চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে ২ লাখ টাকা বিল তুলে নেওয়া হয়।
তবে আমতলী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কোনো ধরনের কাজ হয়নি কলেজে। বরাদ্দের কথা আমরা কিছুই জানি না।
একই তালিকায় চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা নুরুল হক নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংস্কারে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন সংসদ সদস্য। জুন মাসেই কাজ শেষ দেখিয়ে উত্তোলন করা হয়েছে পুরো টাকা। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, কাজ হয়নি এক টাকারও।
Advertisement
প্রকল্পের তালিকায় দেখা গেছে, আমতলী এম ইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও আসবাবপত্র সংস্কারে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ সাত হাজার টাকা, নুরজাহান ক্লাব সংস্কারে ৩ লাখ টাকা। অথচ বাস্তব চিত্রে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত আসবাবপত্র পড়ে আছে আগের মতোই। নুরজাহান ক্লাবের অবস্থা জরাজীর্ণ।
এদিকে উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের হারুন ডাক্তারের বাড়ি থেকে আজিজ গাজীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ফেলতে ২ লাখ টাকা, চাওড়ার আতাহার ব্যাপারীর বাড়ি থেকে দুলাল গাজীর বাড়ি পর্যন্ত মাটি ফেলতে ৩ লাখ টাকা, হলদিয়া থেকে তুজির হাট ও তক্তাবুনিয়া মাদরাসা থেকে শীল বাড়ি পর্যন্ত মাটি ফেলতে ৩ লাখ টাকা ব্যয় করেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
তবে স্থানীয়রা জানান, এসব কাজের ছিটেফোঁটাও হয়নি এখানে। রাস্তার পাশে মাটি নেই। রাস্তা দেখলেই পুরোপুরি বোঝা যাবে বিষয়টি।
চাওড়া গ্রামের বাসিন্দা শহিদ হাওলাদার জানান, ছয়মাস কেন গত দেড় বছরেরও এই রাস্তায় কোনো কাজ হয়নি। রাস্তায় মাটি দেওয়া তো দূরের কথা, রাস্তার পাশের ঝোপঝাড়ও কখনো পরিষ্কার করা হয়নি।
Advertisement
কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জালাল আহমেদ বলেন, এ রাস্তায় অনেক আগে শুধু মাটির কাজ করানো হয়েছিল। তবে গত ছয়-সাত মাসে এ রাস্তায় কোনো কাজ করা হয়নি।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিন্টু মল্লিক বলেন, আমার সময়ে এ রাস্তায় কোনো ধরনের কাজ করা হয়নি। আমার আগের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের সময়ও কোনো কাজ করা হয়নি। এক টাকার কাজও করা হয়নি। বরাদ্দের পুরো টাকা লোপাট করা হয়েছে। এসব রাস্তায় জনগণের ভোগান্তির শেষ নেই।
মোট ১৪টি প্রকল্পে ৩৯ লাখ টাকার বিল কাজ না হলেও উত্তোলন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুর রহমানের অফিসে একাধিকবার গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। ফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তার ফোনে মেসেজ করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু জাগো নিউজকে বলেন, প্রত্যেকটি প্রকল্পই জনগণের সুবিধার জন্য দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ না করিয়ে বিল তুলে নেওয়ার জন্য দায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমাদের কাছে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত করে দেখবো। এর সঙ্গে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসজে/জেআইএম