রংপুরে জমে উঠেছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গ্রিন মাল্টার বেচাকেনা। অল্প জমিতে এ ফলের উৎপাদন করে লাভবান হওয়ায় ব্যাপকহারে মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এখানকার কৃষকরা। ফলে রংপুর অঞ্চলে প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে মাল্টা ফলের বাগান।
Advertisement
বর্তমানে প্রতিদিন ২০০ মণেরও বেশি মাল্টা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। যার মূল্য প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা। এছাড়াও বাগান থেকে সরাসরি বিক্রি হচ্ছে মাল্টা। এর আর্থিক মূল্যও কম নয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর সিটি বাজার ও এর আশেপাশে ৩০ এর অধিক পাইকারি ফলের দোকানে অন্যান্য দেশি-বিদেশি ফলের মধ্যে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে গ্রিন মাল্টা। দুই বছর আগেও এমন দৃশ্য চোখে পাড়েনি।
রুবেল ফল ভান্ডারের মালিক মো. রুবেল বলেন, প্রতিদিন তার ৬০ মণেরমতো গ্রিন মাল্টা বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বিক্রেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাল্টা বিক্রির দাবি করে তিনি বলেন, গত দুই বছর আগেও তেমন এই মাল্টার চাহিদা ছিলো না। অনেককে জোর করে এই মাল্টা দিতে হতো। গত কোরবানি ঈদের সময় থেকে এখন পর্যন্ত মাল্টা বিক্রি করছেন। আরো মাসখানেক পর্যন্ত স্থানীয় মাল্টা পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।
Advertisement
রংপুর সিটি বাজারের তারেকুল ইসলাম মিলন এবং বাচ্চু মোল্লাসহ একাধিক পাইকারি ফল বিক্রেতা বলেন, আমাদানিকৃত মাল্টার দাম কেজি প্রতি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় মাল্টার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবাব মাল্টার দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এবারে প্রথম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নিজেরাই আগ্রহী হয়ে গ্রিন মাল্টা কিনে আমেরমতো পাড়ায় পাড়ায় ফেরি করে বিক্রি করছেন।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য কিছু প্রদর্শনীর মাধ্যমে মাল্টা চাষ করা হয়। কিন্তু অল্প জমিতে ফলন ভালো এবং লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের মাঝে মাল্টা চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
২০১৯-২০ মৌসুমে এ অঞ্চলে মোট ৯৮ দশমিক ২ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর জেলায় মাল্টার আবাদ হয়েছে ৫০ হেক্টর জমিতে, গাইবান্ধায় আবাদ হয়েছে ৩ হেক্টর, কুড়িগ্রামে আবাদ হয়েছে ৯ হেক্টর, লালমনিরহাটে আবাদ হয়েছে ২২ হেক্টর এবং নীলফামারীতে আবাদ হয়েছে ১৪ দশমিক ২ হেক্টর।লালমনিরহাট জেলার এয়ারপোর্ট এলাকায় মো. একরামুল গড়ে তুলেছেন ৬ একর জমিতে ২ হাজার ৮০০ মাল্টার বিশাল বাগান।
Advertisement
২০২০ সালে সামান্য কিছু মাল্টা পেলেও চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ দেখা না দিলে ২ হাজার মণ ফলন আশা করছেন তিনি। গত ২২ সেপ্টেম্বর ৮০ মণ মাল্টা সংগ্রহের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলন পাওয়া শুরু হয় বলে তিনি জানান। প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি করেছেন ৯০ টাকা করে।
নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার চরাই খোলা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রহিম বসুনিয়া জানান, ২০ শতক জমিতে ২০১৭ সালের মে মাসে ৭০টি বারি মাল্টা-১ জাতের কাটিং চারা রোপণ করেন তিনি। এর মধ্যে ৪০টি কৃষি অফিস বিনা মূল্যে সরবরাহ করেছে। বাকি ৩০টি কাটিং চারা ১০০ টাকা করে কিনেছেন। ২০১৯ সালে প্রথম ৬০ কেজি ফলন পেয়েছেন। ২০২০ সালে ফলন পেয়েছেন ১৬ মণ। চলতি মৌসুমে প্রায় ২৫ মণ মাল্টা সংগ্রহ করেছেন।
তিনি বলেন, এবছর ৮০ টাকা কেজি দরে মাল্টা বিক্রি করেছেন। আগে এই ২০ শতক জমিতে শুধু বছরে একবারে আলু চাষ হতো। তার বিবেচনায় মাল্টা চাষ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। তার দেখাদেখি চরাই খোলা ইউনিয়নে অনেকে মাল্টা চাষ শুরু করেছেন বলে তিনি জানান।
এ অঞ্চলের মধ্যে রংপুর জেলায় উল্লেখযোগ্য হারে মাল্টা চাষের সম্প্রসারণ হয়েছে। মাল্টা চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের বলদিপুকুর মৌজার পারঘাট গ্রামে বৃক্ষপ্রেমীক মামুনুর রশীদ।
২০১৬ সালে দেড় একর আয়তনের বাগানে ১১২টি মাল্টা গাছ রোপণ করেন। এখন পর্যন্ত ৪ বার ফলন পেয়েছেন। আগে বিভিন্ন ফসল আবাদ করলেও মাল্টা চাষে লাভ বেশি হওয়ায় মাল্টা আবাদে ঝুঁকেছেন।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মাহবুবর রহমান বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের পুষ্টিকর খাবারের ঘাটতি পূরণ এবং সহজ প্রাপ্তির জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ফলের আবাদ বৃদ্ধিতে ২০১৬ সাল থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মাল্টার আবাদ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কৃষকরা মাল্টা চাষ করে লাভবান হওয়ায় প্রতিবছর মাল্টার জমি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জিতু কবীর/এমএমএফ/জিকেএস