মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেয়া বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। স্বাধীনতার মাসে তার (খালেদা জিয়া) এমন বক্তব্যে হতবাক দলটির নেতাকর্মীরাও।সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে মুক্তিযোদ্ধা দলের আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে উল্লেখ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ কে খন্দকার তার বইয়ে সত্য কথা লিখেছে তা প্রত্যাহার না করায় তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করেনি। চাটুকারদের জন্য শেখ সাহেব মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনতে পারেনি।’বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ভালোভাবে বিশ্লেষণ না করলে বোঝা যাবে না তারা কত নোংরা আর হিংস্র।’রাজাকারদের মন্ত্রী বানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী বিএনপির প্রতি যে অভিযোগ করেছেন তা অস্বীকার না করলেও এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া।এদিকে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে খালেদা জিয়ার শঙ্কা প্রকাশ করার কারণে নতুন করে বিতর্ক যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত শহীদের সংখ্যা নিয়ে দ্বিধায় থাকলে একাধিকবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার পরও এসব বিষয় নিয়ে বেগম জিয়া কেন কাজ করেননি তা নিয়েও গোলক ধাঁধায় পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগরীর এক নেতা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অনেক বড় পাওয়া। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা নিয়ে বিজয়ের মাসে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) এরকম বক্তব্য না দিলেই ভালো হতো।দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ডাকে দেশের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। যুদ্ধে শহীদের সংখ্যা যাই হোক না কেন এসব বিষয় নিয়ে বক্তব্য না দেয়াই উত্তম।আওয়ামী লীগকে মনের গভীর থেকে ‘ভালোবাসেন’ এমন এক কর্মী রিহান ক্ষোভ প্রকাশ করে এই প্রতিবেদককে বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে জাতিকে বিভাজন করার চেষ্টায় মত্ত বিএনপি। তার মধ্যে আবার স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির খেলায় নেমেছেন খালেদা।সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে নানা মত থাকতে পারে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্য অপ্রত্যাশিত।এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, ‘এটা আমি আর কি বলবো, অনেকেই তো বলাবলি করে ৩০ লাখ নিহত হয় নাই, তবে ম্যাডাম কেনো বলছেন তা তো আমি জানি না।’বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বলেন, ‘আমি কোনো বক্তব্য দিতে চাই না, যেহেতু ম্যাডাম বলেছেন, এটা দলীয় মুখপাত্র ক্লারিফাই করবেন।’বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বলেন, ‘৩০ লাখ শহীদের প্রত্যেককে অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা করি। সংখ্যা যদি বেশিও হয় তাতে শ্রদ্ধার হেরফের হবে না।তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কোনো বিষয় নিয়ে দেশে বা বিদেশের কোনো স্থান থেকে কোনো প্রকার বিতর্ক সৃষ্টি করা হোক এটা কাম্য নয়। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সব কিছুকেই বিতর্কের ঊর্ধ্বে স্থান দেয়ার আহ্বান জানাই। জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদেরও শ্রদ্ধা জানাই।এমএম/একে
Advertisement