শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে ১২ অক্টোবর(২০২১) থেকে এদেশে যখন অনাবিল আনন্দযজ্ঞ চলছে তখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে একদল খুনি মানুষ মেতে ওঠে। কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কথিত পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনায় সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের হাজার বছরের সম্প্রীতির ঐতিহ্য এক নিমিষে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপপ্রচার সম্বল করে বিভিন্ন ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের মাধ্যমে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার এ ধরনের প্রচেষ্টা নতুন নয়। এসব কাজে ইসলামের নামে উগ্র সাম্প্রদায়িক-রাজনৈতিক শক্তির ইন্ধন সাধারণ বিষয়।
Advertisement
১৩ অক্টোবর(২০২১) সকালে কুমিল্লায় নানুয়া দিঘীরপাড় পূজামণ্ডপে কথিত ‘কুরআন অবমাননার’ অভিযোগ তুলে বেশ কিছু মন্দিরসহ শহরের সালাউদ্দীন রোড কালীগাছতলা ও কাপুড়িয়া পট্টির মণ্ডপেও হামলা হয়। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে শহরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এর জের ধরে গাজীপুর, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও মৌলভীবাজারে বেশ কিছু মন্দির ও পূজামণ্ডপেও হামলা-ভাঙচুর হয়। চাঁদপুরে হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে প্রাণহানিও ঘটে। পরে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ১৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বান্দরবানের লামা উপজেলায় মিছিল করে এসে মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে। এ সময় দুইপক্ষের সংঘর্ষে ১২-১৩ জন আহত হন। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে একজন এসআইসহ তিন পুলিশ সদস্যও আহত হন।
দুর্গোৎসবের মধ্যে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মকে ব্যবহার করে যারা সহিংসতা সৃষ্টি করছে তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ১৪ অক্টোবর(২০২১) মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি আয়োজিত শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমীর অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেছেন, যেখানে যেখানে যারাই এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটাবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের খুঁজে বের করা হবে। আমরা অতীতেও করেছি, ভবিষ্যতে আমরা করতে পারব এবং যথাযথ শাস্তি তাদের দিতে হবে। এমন শাস্তি- ‘যেন ভবিষ্যতে আর কেউ সাহস না পায়, সেটাই আমরা চাই।’ অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, ‘স্বার্থান্বেষী মহলের উদ্দেশ্যমূলক কাজ এটি। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ উসকানি দিলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যারা এসব অপচেষ্টা করছে ও করবে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’
আজ যে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, ধর্মীয় সহাবস্থানকে নষ্ট করছে তাদের সমূলে উৎপাটন জরুরি হয়ে উঠেছে। কারণ ২০১৯ সালে ভোলা জেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনা নিশ্চয় সকলের মনে থাকার কথা। সেসময় সেখানে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যে আইডি থেকে ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছিল, সেটি ‘হ্যাকড’ হয় বলে পুলিশ নিশ্চিত করে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, মেসেঞ্জারে ওই বক্তব্যের ‘স্ক্রিনশট’ ব্যবহার করেই বোরহানউদ্দিনে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়। ২০ অক্টোবর(২০১৯) বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে ‘মুসলিম তাওহিদী জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয় এবং এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায় শত শত মানুষ।
Advertisement
বেলা পৌনে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উপজেলা সদরে দফায় দফায় ওই সংঘর্ষে এক মাদ্রাসাছাত্রসহ চারজন নিহত ও আহত হয় ১০ পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক। ১৮ অক্টোবর রাতে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য নামের ২৫ বছর বয়সী এক যুবক বোরহানউদ্দিন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। সে জানায় তার ফেসবুক আইডি ‘বিপ্লব চন্দ্র শুভ’ হ্যাক করা হয়েছে। এজন্য ভোলার পুলিশ সুপার ধর্ম অবমাননার গুজবের বিষয়টি নিয়ে ১৯ অক্টোবর স্থানীয় আলেমদের শান্ত রাখার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তারপরও পরেরদিন ওই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজনে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক জড়ো করা হয়। অর্থাৎ স্থানীয় জনগণকে কেউ বা কারা উসকানি দিয়েছে, সহিংস জমায়েতের আয়োজন করেছেÑ এসবই ছিল দুর্ভাবনার বিষয়। বোরহানউদ্দিনের ওই হিন্দু যুবকের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার অভিযোগে দুই মুসলমান যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত দুই মুসলিম তরুণ মুসলমান হয়েও নবীজী (সা.) সম্পর্কে বাজে কথা লিখে আরেকজনকে জড়াবার চেষ্টা করেছে- যা সাম্প্রদায়িক উস্কানির নির্মম দৃষ্টান্ত। কক্সবাজারের রামুর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনার মতো অন্যের ক্ষতি করার জন্য, অন্যকে ফাঁসানোর জন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে কিছু মানুষ। ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামু উপজেলায় হামলা চালিয়ে লুটপাটসহ ১২টি বৌদ্ধ মন্দির ও ৩০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে রসরাজ নামে এক হিন্দু মৎস্যজীবীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে লোকজনকে খেপিয়ে তুলে ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়। অর্থাৎ ২০২১ সালের কুমিল্লার ঘটনা নতুন নয়।
২.
শেখ হাসিনা সরকারের সম্প্রীতি রক্ষার শত চেষ্টা এবং সম্প্রীতি বাংলাদেশের একাধিক ইতিবাচক কর্ম তৎপরতা সত্ত্বেও এদেশে ধর্ম নিয়ে এখনো খেলা চলছে। মনে রাখতে হবে এই খেলা ২০১৬ সালে কেবল নয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও চলেছে। সেসময় গ্রামের পর গ্রামের অমুসলিম জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হয়েছেন। বীভৎস অত্যাচার আর লুটপাটের শিকার হয়েছেন সাধারণ সহজ-সরল নারী-পুরুষ। আহত ও নিহতের সংখ্যা দিয়ে সেই নিপীড়ন বিবেচনা না করে বরং ধর্মীয় সংখ্যালঘুর অস্তিত্ব সংকটের বাস্তবতা পর্যালোচনা করা দরকার। কারণ আমরা কথায় কথায় বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে থাকি। কিন্তু অত্যাচার থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয় না সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও নির্মম সব ঘটনা ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির দ্বারা। ২০১২ সালে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের পর সংবাদপত্র লিখেছিল, ‘দেশ ও জাতির জন্য এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হলো। গত শনি ও রবিবার কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার কয়েকটি স্থানে যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছে তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ দেশের ইতিহাসে এ ধরনের জঘন্যতম ঘটনার উদাহরণ আর একটিও পাওয়া যাবে না। অন্য দেশের সাম্প্রদায়িক ঘটনার সুযোগ গ্রহণ করে অতীতে কুচক্রী মহল বিচ্ছিন্নভাবে সাম্প্রদায়িক সংঘাত ঘটালেও গত শনি ও রবিবারের ঘটনা নজিরবিহীন।’ বৌদ্ধ সম্প্রদায় যে এদেশেরই ভূমিসন্তান; অনেক আগে থেকেই বসতি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে আসছে; তারও অনুপুঙ্খ পর্যালোচনা উপস্থাপন করে তাদের ওপর জঘন্য হামলার নিন্দা ও বিচারের দাবি জানানো হয়েছিল সেসময়।
‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’কে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক এবং সাপ্তাহিকসহ অনেক ইলেক্ট্রনিকস ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যম একাত্ম হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য এদেশের মিডিয়ার এই ইতিবাচক ভূমিকা আমাদের মতো খ্রিস্টান ধর্মবিশ্বাসীদেরও আশান্বিত করে তুলেছে। তবে ২০০১ সালে নির্বাচনোত্তর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের সময় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদদপুষ্ট কয়েকটি পত্রিকার নেতিবাচক আচরণ সকলের স্মরণে আছে নিশ্চয়। সেসব পত্রিকার নেতিবাচক আচরণ বাদ দিলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিডিয়ার যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সেসময় দেখেছিলাম তাও ছিল গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষের শক্তির জাগরণের অবদান হিসেবে তাৎপর্যবহ। বর্তমান সংসদীয় গণতন্ত্রের যুগে একমাত্র মিডিয়াই জনগণের পক্ষে কথা বলছে; আর সেই কথা যদি হয় সম্প্রীতি, শান্তি ও মঙ্গলের পক্ষে তখন আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। তবে বিস্ময়কর হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর তা-বের মতো বিএনপি-জামায়াত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস চালিয়েছে।
Advertisement
২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত দেশে দুই হাজার মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩৫০ জন হত্যা এবং ৪০০ জন ধর্ষণের শিকার হন। দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর জঘন্যতম হামলা হয়েছে। তার আগে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারির ৯ ও ১০ তারিখে চট্টগ্রামের হাটহাজারির হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা এবং অগ্নিসংযোগ আর সাতক্ষীরার মতো ঘটনা যেন রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
২০১৩ সালের ৩১ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল সাতক্ষীরার অগ্নিসংযোগ ও তাণ্ডবের ঘটনায় ছিল জামায়াতের প্রত্যক্ষ ইন্ধন। স্থানীয় একটি পত্রিকায় উস্কানিমূলক খবর প্রকাশের পর কালীগঞ্জের ঘর-বাড়িতে যে আগুন জ্বলেছে, তাতে একইসঙ্গে পুড়েছে হিন্দু ও মুসলমানের পবিত্র গ্রন্থ ‘গীতা’ আর ‘কোরআন’। ধর্মীয় মৌলবাদীরা সুযোগের সন্ধানে ছিল; তারই স্পষ্ট আলামত দেখা গিয়েছিল সেখানকার ঘটনায়। স্কুলের ছাত্রদের দ্বারা অভিনীত একটি নাটককে কেন্দ্র করে স্থানীয় একটি পত্রিকার উস্কানি ধর্মান্ধ রাজনীতির সংস্কৃতির পরিপূরক হয়ে উঠেছিল। উপরন্তু নিষিদ্ধ ঘোষিত ধর্মভিত্তিক গোপন সংগঠনের কার্যক্রম যে থেমে নেই তারও দৃষ্টান্ত পাওয়া গেছে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে।
অতীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মানুষ হত্যা ও নারী ধর্ষণ মুখ্য ঘটনা ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে কুমিল্লায় ১৩ অক্টোবর এবং কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার দিবাগত রাতের পরিস্থিতি ও হামলার ধরন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা। দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে উন্নতি ঘটেছে; সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবকেই ধ্বংস করতে চায় মৌলবাদী জনগোষ্ঠী। আসলে মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে ফায়দা লুটেচ্ছে কেউ কেউ। মৌলবাদী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রচারণায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর প্রচেষ্টা রয়েছে এখনো। তবে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার হয়েছেন; তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সকল ধর্মের মানুষ।
সত্যিই ‘ধর্মীয় বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা’ আমাদের মতো অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগজনক ঘটনা। তবে সুখের বিষয় শেখ হাসিনার সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনার পর পরই অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোনো কর্মকা- সরকার বরদাশত করবে না বলেও প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়েও দিয়েছেন। ‘সম্প্রীতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের বিকল্প নেই’ বলা হচ্ছে বারবার। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ হতে হবে দল-মত নির্বিশেষ মানুষের দ্বারা; তাহলে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ সম্মিলিতভাবে বেঁচে থাকার প্রয়াস সফল ও সার্থক হয়ে উঠবে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু আর আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির যা কিছু প্রাণিত সম্পদ তার জন্য দরদ ঢেলে আকাঙ্ক্ষার মেঘ হয়ে ঝরে পড়া আমার বাংলাদেশ। অথচ দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় পাল্টে যায় তার রূপ। এখনো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের উস্কানি থেমে নেই।
মূলত পরিকল্পিতভাবে যারা আমাদের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করছে তারা দেশ, জাতি ও সকল ধর্মের শত্রু। সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই শত্রুদের মোকাবেলা করতে হবে। দেশবাসীকেও গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষের স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। যার যার ধর্ম তার তার কাছে। সব ধর্মের মানুষ এদেশে বাস করবে। সেভাবেই তিনি দেশটাকে গড়ে তুলতে চাইছেন। দেশে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। ফেসবুকে নানা ধরনের অপপ্রচার সব জায়গায় ছড়ানো হচ্ছে। এ দেশ এখন ভালোভাবে চলছে, অগ্রগতি হচ্ছে। তবু একটা শ্রেণি নানাভাবে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। কারণ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার যত ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে কোনোটির সাথেই ধর্ম নয়, রাজনীতি জড়িত। এজন্যই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ অক্টোবর(২০২১) আরো বলেছেন, ‘কিছু মানুষের ভেতরে এই দুষ্টবুদ্ধিটা আছে, যখন একটা জিনিস খুব সুন্দরভাবে চলছে, সেটাকে নষ্ট করা। বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, সে সময় এই যাত্রাটাকে ব্যাহত করা, সেই সঙ্গে দেশের ভেতরে একটা সমস্যা সৃষ্টি করা। যারা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে না, বিশ্বাস অর্জন করতে পারে না, রাজনীতি নেই, কোনো আদর্শ নেই, তারাই এ ধরনের কাজ করে।’
লেখক : ইউজিসি পোস্ট ডক ফেলো, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।drmiltonbiswas1971@gmail.com
এইচআর/এএসএম