সপ্তাহের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার দিন জুমা। দিনভর আমল ইবাদতের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জুমার দিনের সুন্নাত আমলগুলো কী?
Advertisement
জুমার দিনের সেরা আমল
জুমার দিনের সেরা আমল নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে জুমার ফরজ নামাজ আদায়ে আগে আগে মসজিদে চলে আসা। মসজিদে প্রবেশ করে কাউকে অতিক্রম না করে নামাজ পড়ে খুতবা শোনার অপেক্ষায় বসে বসে থাকা। কারো সঙ্গে কথা না বলে চুপচাপ জিকির-আজকার করা। ইমামের খুতবা দেওয়া শুরু করলে তা মনেোযোগের সঙ্গে শোনা।
জুমার দিনের সুন্নাতি আমলের দিকনির্দেশনা
Advertisement
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার নামাজ পড়া ছাড়াও বিশেষ কিছু সুন্নাতি আমলের কথা একাধিক হাদিসের বর্ণনায় বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তাহলো-
১. দোয়া করা
হজরত আবু লুবাবা ইবনু আবদুল মুনজির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিন হলো সপ্তাহের দিনসমূহের নেতা এবং তা আল্লাহর কাছে বেশি সম্মানিত। এ দিনটি আল্লাহর কাছে কোরবানির দিন ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়ে বেশি সম্মানিত। এ দিনে রয়েছে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য
আল্লাহ তাআলা এ দিনে আদমকে (আলাইহিস সালাম) সৃষ্টি করেন। এ দিনই আল্লাহ তাঁকে পৃথিবীতে পাঠান আর এ দিনই আল্লাহ তাঁর মৃত্যু দান করেন। এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে; যখন কোনো বান্দা আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে তখন তিনি তাকে তা দান করেন; যদি না সে হারাম জিনিসের প্রার্থনা করে। আর এ দিনই কেয়ামত সংঘটিত হবে। (এ কারণে) নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারা, আসমান-জমিন, বায়ু, পাহাড়-পর্বত ও সমুদ্র সবই জুমার দিন শংকিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহামদ, মিশকাত)
Advertisement
২. দরূদ পাঠ
হজরত শাদ্দাদ ইবনু আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের সর্বোত্তম দিন হলো জুমার দিন। এ দিন আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে এবং তাতে বিকট শব্দ হবে। অতএব তোমরা এ দিন আমার উপর প্রচুর পরিমাণে দুরূদ পাঠ করো। তোমাদের দুরূদ অবশ্যই আমার কাছে পেশ করা হয়। এক ব্যক্তি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কীভাবে আমাদের দুরূদ আপনার কাছে পেশ করা হবে, অথচ আপনি তো অচিরেই মাটির সঙ্গে একাকার হয়ে যাবেন? তিনি বলেন, ‘আল্লাহ নবিদের দেহ মাটির জন্য খাওয়া হারাম করেছেন।’ (ইবনে মাজাহ, ইবনে খুজাইমাহ, আবু দাউদ, মিশকাত)
৩. ইমামের পাশে বসে খুতবাহ শোনা
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে জুমার নামাজে এসে ইমামের কাছাকাছি হয়ে বসলো এবং নীরবে মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শুনলো, তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সময়ের এবং আরও তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। আর যে ব্যক্তি কংকর স্পর্শ করলো, সে অনর্থক কাজ করলো।’ (ইবনে মাজাহ, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহের কাফফারা স্বরূপ, যদি না কবীরা গুনাহ করা হয়।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, তারগিব)
৪. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া
হজরত আওস ইবনু আওস আস-সাকাফি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন (স্ত্রী সহবাসজনিত) গোসল করলো এবং নিজে গোসল করলো এবং সকাল সকাল যানবাহন ছাড়া পায়ে হেঁটে মসজিদে গিয়ে ইমামের কাছাকাছি বসলো, মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে খুতবাহ শুনলো এবং অনর্থক কিছু করলো না, তার জন্য প্রতি কদমে এক বছরের রোজা রাখা ও রাত জেগে নামাজ পড়ার সমান সাওয়াব রয়েছে।’ (তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
মনে রাখা জরুরি
যারা আগে আগে মসজিদে যাবে নীরবে ইমামের পাশ বসে খুতবাহ শুনবে তাদের জন্য কোরবানির সাওয়াব নির্ধারিত। হাদিসের বর্ণনা থেকেও তা প্রমাণিত-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জুমার দিন হলে মসজিদের প্রতিটি দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং লোকেদের আগমনের ক্রমানুসারে তাদের নাম লেখেন। যেমন প্রথম আগমনকারীর নাম প্রথমে।
ইমাম যখন খুতবাহ দিতে বের হন, তখন তারা তাদের নথি গুটিয়ে নেন এবং মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শোনেন। নামাজ এ প্রথম আগমনকারীর সাওয়াব একটি উট কোরবানিকারীর সমান; তারপরে আগমনকারীর সওয়াব একটি গরু কোরবানিকারীর সমান; তারপর আগমনকারীর সওয়াব একটি মেষ কোরবানিকারীর সমান; এমনকি তিনি মুরগী ও ডিমের কথা উল্লেখ করেন। অন্য বর্ণনায় সাহল ইবনু আবু সাহলের রেওয়ায়েতে আরও এসেছে, ‘এরপর যে ব্যক্তি আসে, সে কেবল নামাজ পড়ার সাওয়াব পায়।’ (ইবনে মাজাহ, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, মুয়াত্তা মালিক, দারেমি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার দিন নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পায়ে হেঁটে মসিজদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া। জুমার দিন সুন্নাতি আমলে নিজেদের নিয়োজি রাখা। হাদিসের ওপর আমল করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিন যথাযথভাবে সুন্নাতি আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস