ফিচার

টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার

মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। প্রধান ভিডিও জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন সময় টেলিভিশনে। বর্তমানে সিনিয়র লেকচারার হিসেবে শিক্ষকতা করছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)। নিজের কাজের নানা অভিজ্ঞতায় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কথা বলেছেন সাংবাদিক ও শিক্ষক মাহবুবুল হক ওসমানীর সঙ্গে।ওসমানী: আপনি তো এখন পুরোদস্তুর শিক্ষক। কিন্তু এর আগে আপনার দীর্ঘ একটা বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার আছে ভিডিও জার্নালিস্ট হিসেবে মাঠে কাজ করার। তো টেলিভিশনে লাইভ কাভারেজ করতে গিয়ে কোন কোন প্রযুক্তিতে আপনাকে কাজ করতে হতো এবং প্রযুক্তির কী ধরণের পরিবর্তন আপনি লক্ষ্য করেছেন?মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন: লাইভ কাভারেজে ভিডিও জার্নালিস্ট হিসেবেও মূলত কাজ ছিল ছবি নেয়া এবং ছবি পাঠানোর জন্য কানেকটিভিটি তৈরি করা। লাইভের জন্য একটা আউটপুট ডিভাইস থাকে। এখন এই আউটপুট ডিভাইস দিয়ে ভিডিও ক্যামেরার ছবিটা কীভাবে যাবে, অডিও-ভিডিও একসাথে যাবে নাকি আলাদা যাবে, কোন চ্যানেলে অডিওটা যাচ্ছে এবং সেটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে এসব বিষয় যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি সেই টেলিভিশন স্টেশনকে জানাতে হত। এছাড়া আইটি’র (Information Technology) যারা থাকবে তাদেরকে জানানো যে আমি কোন চ্যানেলে কোন অডিওটা দিচ্ছি, পিসিআর যেন সেটা কানেক্ট করতে পারে কেননা অডিওটা দুই চ্যানেলে থাকে তাই কোন চ্যানেল দিয়ে অডিওটা আসবে সেটি জানিয়ে দেয়াটা জরুরি। কারণ অডিওটা খুব সেনসেটিভ। আর এর জন্য সবার সমন্বয়ও প্রয়োজন।শুরুর দিকের কথা যদি বলি, আমি বাংলাদেশে প্রথম কাজ শুরু করি  “বাংলাভিশন” এ। সে সময়টাতে তখন লাইভের একটাই পদ্ধতি ছিলো “এসএনজি” (Satellite News Gathering)। সময়টা ২০০৬ সালের দিকে। তখন চাইলেই লাইভে যাওয়া যেত না। কারণ লাইভ করাটা বেশ সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল ব্যাপার ছিলো। বাংলাদেশে তখন স্যাটেলাইটের ব্যবহারও স্বল্পভাবে ছিলো। বাংলাদেশ বিশেষত সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ার স্যাটেলাইট ব্যবহার করতো। এই স্যাটেলাইটগুলো যাদের তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হত। তাদেরকে আগে থেকে বলতে হত যে আমরা এই নির্দিষ্ট দিনে এ্ই নির্দিষ্ট সময়ে লাইভ করতে চাই। এরপর তাদের স্যাটেলাইট বুকিং দিতে হত এবং মানি ট্রান্সফার হওয়ার পর এই বুকিং কনফার্ম হত, আর তখন একটা পাসওয়ার্ড দিয়ে দিত। এরপর সেই পাসওয়ার্ডটি দিয়েই আসলে লাইভে যেতে হত এবং ওই নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই লাইভের জন্য নির্দিষ্ট করা থাকতো। পাঁচ-দশ মিনিটের জন্য লাইভ হলে সাধারণ আধা ঘন্টার জন্য চাঙ্ক কেনা হত। কিন্তু লাইভ করতে যদি ১-২ ঘন্টা পিছিয়ে যায় অর্থাৎ যে অনুষ্ঠানটি লাইভ কাভারেজ হবে সেটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে শুরু হলে সমস্যায় পড়তে হত। কারণ ওই নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই আসলে টাকা প্রদান করা ছিল। লাইভ না হলে পরে আর সেটা ফেরত দেয়া হত না।তারপরে যেটা আসলো তা হল DSNG (Digital Satellite News Gathering) OB Van. সিএসবি নিউজে (CSB Television) যখন কাজ শুরু করলাম তখন টেকনোলোজির বেশ ব্যবহার লক্ষ্য করি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ক্যাবল নেটওয়ার্কিং শুরু হয়ে গেছে। ক্যাবল নেটওয়ার্কিংটা হলো ঢাকার মধ্যের বিশেষ কিছু প্রতিষ্ঠান অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে নেটওয়ার্কিং তৈরি করা। এর মালিকরা এই নেটওয়ার্ক ভাড়া দেয়া শুরু করলো। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে যেমন বিশেষত ডাটা ট্রান্সফারের কাজে ব্যবহার  হত, পাশাপাশি টেলিভিশনেও এই নেটওয়ার্কটা ব্যবহার করা শুরু করলো। তারা কয়েকটি স্পটে বিশেষ করে যে যে জায়গাগুলো সংবাদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ, সব সময় সেখানে সংবাদের উপাদান থাকবে সে সব জায়গায় টেলিভিশনের জন্য নেটওয়ার্কটা তৈরি করে দিত। সে সময়টাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে দেশে বেশ আলোড়ন ছিলো। সে জন্য গণভবন, প্রেসক্লাব, বঙ্গভবন, সচিবালয় এরকম কয়েকটি জায়গা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠলো যেখান থেকে নিয়মিত সংবাদ হচ্ছিল এবং এই ক্যাবল নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে এসব জায়গার সাথে টিভি স্টেশনগুলোর একটা কানেকটিভিটি তৈরি করা হল। এই কানেকটিভি দিয়েই আসলে লাইভ করা শুরু হল। সেক্ষেত্রেও ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ আগে থেকে যোগাযোগ করতো। তারপরে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যেমন হাফ শিফট বা এক শিফট এর জন্য সময় বরাদ্দ করা হত। তাদের একজন আইটি এক্সপার্ট ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে কানেকটিভিটি তৈরি করে দিত যার সাথে টিভি স্টেশনের লাইভ সংযোগ সম্পন্ন হত। সময় টিভিতে এসে ডিএসএনজি’র বহুল ব্যবহার পেলাম। এসএনজির সাথে এর পার্থক্য ছিলো এখানেই যে এটা লাইভের ক্ষেত্রে অটো কানেকটিভিটি তৈরি করতে পারতো। ম্যানুয়ালি করা লাগতো না। আর ম্যানুয়ালি করাটাও আসলে কঠিন কাজ ছিলো। বিভিন্ন অ্যাঙ্গল যেমন ফাইভ ডিগ্রি ডানে বা বায়ে এভাবে ম্যানুয়ালি কাজ করাটা সত্যিই খুব দুরূহ এবং সময় সাপেক্ষও ছিলো। তবে এই সমস্যা সমাধান করলো ডিএসএনজি নেটওয়ার্ক যেখানে খুব সহজেই কানেকটিভিটি নেওয়া যায়। এর আগে যারা OB Van দিয়ে লাইভ করতো তারা আসলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লাইভের কানেকটিভিটি বরাদ্দ পেত। সময় টিভি এখানে পরিবর্তন আনলো। তারা এই নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি ব্যবহারকে মাস ভিত্তিক বরাদ্দ পদ্ধতিতে নিয়ে নিল। তারা মাস ভিত্তিক টাকা পরিশোধ করবে এবং সব সময়ই এই কানেকটিভিটি ব্যবহার করতে পারবে। মাসের যে কোনো সময় যে কোনো দিন তারা স্যাটেলাইটের সাথে কানেকটিভিটি পেয়ে যাবে। এটা যদিও অনেক ব্যয়বহুল ছিলো কিন্তু সময় টিভি সফল এবং অনেক লাইভ কাভারেজের মাধ্যমে সেটাকে সাশ্রয়ের মধ্যে নিয়ে আসলো। পরবর্তীতে্ আরো অনেক টিভি চ্যানেল এই কানেকটিভিটি নিয়ে আসে।এরপরের প্রযুক্তি হলো সরাসরি ইন্টারনেট ব্যবহার করা। সেই অভিজ্ঞতাও আমার সময় টেলিভিশনেই হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে ভালো স্পিড নিয়ে বিশেষত হাই ব্যান্ডইউডথ (Bandwidth is the width of the range or band of frequencies that an electronic signal uses on a given transmission medium. Bandwidth is often used as a synonym for data transfer rate.) এবং মডেমের মাধ্যমে এ্ই লাইভ কাভারেজ শুরু হলো। সেখানে সফলতা যেমন ছিলো তেমনি কিছুটা ব্যর্থ্যতাও ছিলো্। একটা নিয়ন্ত্রিত জায়গা থেকে লাইভ করতে হত এবং ইমেজের কোয়ালিটিও ভালো ছিল না। আগে ডিএসএনজিতে ইমেজ কোয়ালিটির কোনো সমস্যা ছিলো না। এখানে তা অনেক নিম্নমানের হয়ে গেল। কিন্তু এটা যেহেতু যে কোনো তাৎক্ষণিক ঘটনায় যে কোনো জায়গা থেকে লাইভ করা যায় ফলে এটারও এক ধরনের দর্শক তৈরি হলো। কিন্তু এটি বেশি সময় আবার দর্শক নিতে চাইলো না। দেখা গেল এই কোয়ালিটির ইমেজ দর্শক গ্রহণ করছে না এবং কোয়ালিটি নিয়ে টিভিগুলোর মধ্যে এক ধরণের প্রতিযোগিতাও শুরু হলো। সেখান থেকেই আবারো নতুন প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকতে হয়। অনেকগুলো মডেমকে এক সাথে যুক্ত করে সেই ব্যান্ডইউডথের একটা একত্রিকরণের মাধ্যমে ইমেজ কোয়ালিটি ডেভেলপ করার একটা চেষ্টা শুরু হল। সেটারই নামকরণ হলো ব্যাকপ্যাক (Backpack)। সেখানে ইন্টারনেট কানেকটিভিটি তৈরির জন্য সিনেমাটোগ্রাফার সেটাকে পিঠের সঙ্গে ঝুলিয়ে নিল।এছাড়াও স্কাইপের মাধ্যমে সময় টিভিতেই লাইভ কাভারেজ দেখেছি। স্কাইপের আউটপুটটাকে পিসিআরের মাধ্যমে অন এয়ারের জন্য ব্যবহার করা হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে লাইভ করার মাধ্যমে একটা স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া গেল। ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে ক্যামেরার মোবিলিটি বেড়ে গেল। চা্ইলেই যেকোন জায়গাতে ক্যামেরা রেখে লাইভ করা যায়। সারা দেশেই মোবাইল নেটওয়ার্কটা ভালো হচ্ছে আর সেটাকে টেলিভিশনের লাইভে ব্যবহার করাও সহজ এখন।ওসমানী: প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে টেলিভিশনের আধেয়ের (Content) কী ধরণের পরিবর্তন আসলো?মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন: আসলে বিভিন্ন লাইভের চরিত্রগত পার্থক্যের জন্যই কনটেন্টেরও পার্থক্য তৈরি হয়ে গেল। প্রথম দিকে যখন শুধু এসএনজি ছিল তখন পূর্বে পরিকল্পনা করা কোনো প্রোগ্রোমেই লাইভ করা সম্ভব ছিল। অর্থাৎ আমি জানি যে আাগামীকালকে এমন একটা ইভেন্ট হবে এরপর আমি সেটার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখলাম এবং আগে থেকে জেনে রাখা যে এই সময়টাতে অনুষ্ঠানটি শুরু হবে এবং এই সময়ে শেষ হবে, এরকম জানা থাকলেই তখন লাইভে যাওয়া যেত। তবে নিউজ কিন্তু আসলে সেভাবে চলে না। কারণ অনেক সময় হেরফের হতে পারে। যখন থেকে মোবিলিটি বাড়লো এবং অনাকাঙ্খিত জনগুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সামনে আসলো তখন এই এসএনজি প্রযুক্তি আসলে খুব একটা কাজে আসলো না। যেমন সেই ২০০৬/২০০৭/২০০৮ এর সময়টাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে ঠিক কখন কোথায় কী ঘটনা হবে তা কেউই জানতো না। তো এই ইন্টারনেট কানেকটিভিটি আসার কারণে রিপোর্টিংটাই আসলে এখন ভিন্নরকম হয়ে গেল। কেউ কোনো ইভেন্ট জানে না কিন্তু কয়েকটি স্পটে লাইভের সরঞ্জাম নিয়ে একরকমের পাহারা দেয়ার মত অপেক্ষা করতে লাগলো। কখনো কোনো ঘটনা ঘটে গেলে সেটা দ্রুত কাভার হত সে সময়টাতে। তখন ঢাকার অপটিক্যাল ফাইবারের নেটওয়ার্কটা খুবই কাজে আসলো। কথাই থাকতো এমন যে, যে কোনো সময়ে বললে আধা ঘন্টার মধ্যে ক্যাবল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠান কানেকটিভিটি তৈরি করে দিতে পারতো। মোবিলিটি আসার পর যে কোনো সময় যে কোনো ইভেন্ট কাভার করা যাচ্ছে। ডিএসএনজি কানেকটিভিটি আসলে সব জায়গা থেকে ব্যবহার করা যায় না কারণ এটি বড় একটি গাড়ি যা সব জায়গায় নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হয় না যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে। যেমন লঞ্চ ডুবির মত ঘটনাতে ডিএসএনজির এক ধরণের ব্যর্থতা তৈরি হল। কারণ প্রতিকূল যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য গাড়ি নিয়ে আশেপাশের জায়গাতে যাওয়া যায় না। তবে আগের যে পোর্টেবল এসএনজি ছিলো কিংবা ডিএসএনজির মধ্যেও পোর্টেবল আছে তারা সেটি গাড়ি থেকে শিফট করে নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় বসাতে পারে। প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে সাথেই আসলে এই কনটেন্টের পরিবর্তনটা হচ্ছে।ওসমানী: সে সময়টাতে ভিডিও জার্নালিস্টদের প্রযুক্তির জ্ঞান প্রদানের কী ধরণের ব্যবস্থা ছিল?মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন: সাধারণত প্রশিক্ষণের কোনো আয়োজন ছিল না। কিছু আইটি এক্সপার্ট এবং ব্রডকাস্ট ইঞ্জিনিয়ার তারাই আসলে মূল দায়িত্বটা পালন করতো। লাইভ কানেকটিভিটি মানেই হলো ব্রডকাস্ট ইঞ্জিনিয়ারদের একনিষ্ট দেখভালের দায়িত্ব। শুধু ভিডিও জার্নালিস্টরা তাদের চাহিদা অনুযায়ি আউটপুটটা চাইতো। অডিও কোন চ্যানেলে যাচ্ছে, ভিডিও আউটপুটটা কোন চ্যানেলে যাচ্ছে, সেই আউটপুটটা অন করা আছে কিনা এসব বিষয় কনফার্ম হবার পর মনিটরে আউটপুটটা পেত। মনিটরে আউটপুট পাওয়াই মানে হল সিনেমাটোগ্রাফারের কাজ আপাত দৃষ্টিতে শেষ! এরপর সেটাকে ব্রডকাস্টে নিয়ে যাওয়া, লাইভের কানেকটিভিটি তৈরি করা এসব তখন আইটি দেখে। কিন্তু প্রযুক্তি যখন পরিববর্তন হওয়া শুরু হল তখন কিন্তু ভিডিও জার্নালিস্টের দায়িত্ব ধীরে ধীরে বাড়া শুরু হল। ল্যাপটপের মাধ্যমে ইন্টারনেট কানেকটিভিটি দিয়ে নেটওয়ার্ক তৈরি হলো। তখন আইটির লোকজন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থাকতো না। ভিডিও জার্নালিস্টকেই বুঝতে হত আইপি এড্রেস কী! (IP Address: An Internet Protocol address, a numerical label assigned to each device (e.g., computer, printer) participating in a computer network that uses the Internet Protocol for communication.) কানেকটিভিটি কীভাবে তৈরি করতে হয়, আবার সেটা নির্দিষ্ট সার্ভারে কীভাবে পাঠাতে হয় এবং অন্য কেউ যেন এটা ব্যবহার করতে না পারে সেসব দিকেও ভিডিও জার্নালিস্টদের প্রযুক্তি জ্ঞান দরকার। এরপর কী ফরমেটে দিতে হবে, HD নাকি অন্য কিছু তাও জানতে হত। তবে এরজন্য আলাদাভাবে কোনো ট্রেনিং আসলে দেয়া হয়নি। সাধারণত আইটি’র লোকজন প্রথম দিকে মূলত এই দায়িত্বগুলো পালন করতো। তারা তাদের মত করে জনবল প্রস্তুত করে নিত। তাদের সাথে কাজ করতে করতে অন্যরাও তখন শিখে নেয় অর্থাৎ একটা টিম যখন কাজ করে তখনই্ আসলে টিমওয়ার্কের মধ্যদিয়েই শেখা হয়। যারা ভালো ক্যাচ করতে পারতেন তারা বেশি ভালো করতেন। আর প্রযুক্তিতে কোনো ভিডিও জার্নালিস্ট দূর্বল হলে আইটি বা ব্রডকাস্ট তাদের নিয়ে আলাদাভাবে কর্মশালার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিতেন।ওসমানী: বর্তমানে বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোর লাইভ কাভারেজে প্রযুক্তির ব্যবহারকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন: আসলে লাইভের যে কোনো টেকনোলজিই এখন ইন্টারনেট বেসড। ইন্টারনেট ছাড়া যেগুলো তাতে খরচ বেশি এবং অনেক ঝামেলাও পোহাতে হয়। এজন্য ইন্টারনেট ভিত্তিক লাইভ কাভারেজ ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হবে। মূলত এখন যে সমস্যা সেটা হলো ইমেজ কোয়ালিটির জায়গাতে। আর এই কোয়ালিটি নির্ভর করে আমি ব্যান্ডইউডথটা কেমন পাচ্ছি, আপলোড এবং ডাউনলোড স্পিডটা কেমন পাচ্ছি এসবের ওপর। এটা দিন দিন আরো উন্নত হবে এবং ব্যবহারও বাড়বে। এর সাথে সাথে ফুটেজের কোয়ালিটিও বাড়বে। তো সবারই প্রতিযোগিতা এখন ফুটেজের কোয়ালিটি বাড়ানো নিয়ে। আর ইন্টারনেট নির্ভর লাইভটাই দিনকে দিন বাড়তে থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা হল ইন্টারনেট কানেকটিভিটি হল খুবই সাশ্রয়ী। ইন্টারনেটের যে সব প্রযুক্তি আমাদের আছে যেমন অলরেডি থ্রি চলে আসছে সেখানে ভিডিও আদান-প্রদানের বিষয়গুলো যত ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেটাই বিবেচ্য বিষয় হবে। আর ধীরে ধীরে আইটি’র ওপন নির্ভরতা কমবে এবং নিউজ রিপোর্টার বা ভিডিও জার্নালিস্টরা নিজেরাই এসব সামাল দিতে পারবে। তো ফলে লাইভ কাভারেজ দিন দিন সহজ এবং সস্তা হয়ে যাবে। তবে প্রথম দিকে লাইভের যে একটা চাহিদা কিংবা আকর্ষণ ছিলো সেটি এখন কী পর্যায়ে আছে সেটা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। লাইভটা সস্তা হবার কারণে এত বহুল ব্যবহার করে ফেলছে আমাদের টেলিভিশনগুলো যে লাইভ তার গুরুত্ব হারাচ্ছে। কোন লাইভটা দেখানো কতটা জরুরী সেটাও আসলে ভেবে দেখতে হবে। আমরা এখনো বিবিসি, সিএনএনকে যে কোনো ব্যাপারে অনুকরণের চেষ্টা করি কিন্তু তাদের লাইভের সাথে আমাদের লাইভ কাভারেজ অনেক ফারাক আছে। হুটহাট লাইভে যাওয়া কিংবা কোনো পরিকল্পনা ছাড়া লাইভ কাভারেজ করার একটা প্রবণতা আমাদের টেলিভিশনগুলোর আছে। লাইভে নিউজের দিক থেকে মাঝে মাঝে জটিল একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিশেষ করে সাংবাদিকতায় এডিটরিয়াল পলিসির সরাসরি ব্যবহার না থাকলে লাইভে কখনো কখনো সমস্যায় পরতে হয়। খুব সিনিয়র জার্নালিস্ট না হলে লাইভের ব্যবহারে বরং ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে। পরিকল্পনা করে সব কিছু বিবেচনার পর লাইভে যেতে হবে।আমাদের দেশে প্রশিক্ষিত জনশক্তি তৈরিতে লাইভ কাভারেজের কানেকটিভিটির এই বিষয়গুলোর জন্য সেন্স ডেভেলপ করতে হবে আগে। এজন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের মধ্যে টেলিভিশনের লাইভের এই প্রযুক্তিগত বিষয়গুলোও অন্তর্ভূক্ত করা উচিত বলে আমি মনে করি। তাতে একটা সময় শিক্ষিত একটি জনগোষ্টি তৈরি হবে যারা টেলিভিশনের লাইভ কাভারেজে শতভাগ পারদর্শী হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারবে।ওসমানী: ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় দেবার জন্য।মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

Advertisement