খেলাধুলা

সেমিফাইনালও খেলে ফেলতে পারে বাংলাদেশ: সুজন

ঘুরেফিরে সেই একটি প্রশ্নই উঠে আসে। ১৪ বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে জিততে না পারা বাংলাদেশ কি এবার না পারার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে জয়ের দেখা পাবে?

Advertisement

যদিও গ্রুপিংয়ের বিবেচনায় টাইগাররা এবারো খুব টাফ গ্রুপে (যদি প্রথম পর্ব উৎরে আসতে পারে)। গ্রুপে বিশ্বসেরা ভারত, দুই কঠিন প্রতিপক্ষ পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড আছে। এমনকি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের আরেক বিপজ্জনক দল আফগানিস্তানও বাংলাদেশের গ্রুপে। কাজেই এই ৪ দলের যে কারো সাথে জেতা বেশ কঠিন। এখন ভরসা একটাই, বাছাই পর্ব থেকে যদি আয়ারল্যান্ড উঠে আসে । ’ তাহলে সেই দলের সাথে জেতার কথাই ভাবছেন সবাই।

কিন্তু খালেদ মাহমুদ সুজন তা মনে করেন না। দেশের ক্রিকেটের এ লড়াকু ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের দৃষ্টি আরও সামনে। তার বোধ, উপলব্ধি ও বিশ্বাস, বাংলাদেশ সেমিফাইনালও খেলে ফেলতে পারে।

জাগো নিউজের সাথে আলাপে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ সম্ভাবনা নিয়ে একান্তে কথা বলতে গিয়ে জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়ক ও ম্যানেজার অনেক কথার ভিড়ে জানিয়েছেন, ‘আশা করি ভাগ্য সহায় হলে, আর মোমেন্টাম ঠিক থাকে তাহলে আমরা সেমিফাইনালও খেলতে পারি। দুইটা দল বিশেষ করে আফগানিস্তান আর পাকিস্তানকে হারানো খুব কঠিন কাজ না। নিউজিল্যান্ডকে হারানো যাবে না এমন নয়। সে ক্ষেত্রে সবার আগে আমাদের বেসিক কাজগুলো ঠিকঠাকমত করতে হবে।’

Advertisement

খালেদ মাহমুদ সুজনের ধারনা- বাংলাদেশ দল আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়েই গেছে। তার ভাষায়, যারাই দলে থাকুক না কেন নাম তো অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। তাদের হারানোর চাট্টিখানি কথা নয়। সে জয় আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর দাওয়াই, রসদ অবশ্যই। আমরা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে জিততে পারি, এমন একটা কনফিডেন্স প্রয়োজন ছিল। সেটা হয়েছে।’

বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত, পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ড ভাল দল। অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ; কিন্তু খালেদ মাহমুদ সুজন তা মানতে নারাজ। তার চোখে টি-টোয়েন্টি এমন এক ফরম্যাট, যেখানে বড় দল নেই তেমন।’

সে বক্তব্যর পক্ষে একটি যুক্তি দাঁড় করিয়ে সুজন বলেন, ‘একটু অতীতে ফিরে যান, দেখবেন আমরা জিততে না পারলেও ভারতের মত বিশ্বসেরা দলকেও এই ফরম্যাটে কয়েকবার বেশ বাগে পেয়েছিলাম। যেমন ব্যাঙ্গালুরুর কথা। আমরা জেতার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারিনি। একদম জয়ের খুব কাছে গিয়েও পারনি। সুযোগ হাতছাড়া করেছি।’

২০ ওভারের ফরম্যাটে সাফল্যের পূর্বশর্ত কী কী? সুজনের মত, আমার মনে হয় মোমেন্টামটা ধরতে পারাই আসল । দুটি ভাল পার্টনারশিপ আর গোটা দুয়েক দুর্দান্ত স্পেলই পারে ম্যাচ জেতাতে।’

Advertisement

তার স্থির বিশ্বাস, সে সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের বোলারদের। ‘আমাদের সে অ্যাবিলিটি আছে। মোস্তাফিজ-সাকিব ম্যাচ উইনার। আজকাল সাইফউদ্দিনও বেশ ভাল বল করে।’

ব্যাটিংয়ের সম্ভাবনার কথা জানাতে গিয়ে সুজন বলে ওঠেন, ‘ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব ও লিটন দাস আছে। এর সাথে তরুণরা যদি জায়গামত জ্বলে উঠতে পারে তাহলে আমাদের ভাল চান্স হয়ে যাবে।’

সুজনের কেন যেন মনে হয় এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য এক অন্যরকম আসর হয়ে থাকতে পারে। তার আশা, বাংলাদেশ উইকেট থেকেও একটু-আধটু সাপোর্ট পেতে পারে।

তাই মুখে এমন কথা, ‘যদিও আইসিসির যে কোন ইভেন্টে উইকেট ফ্ল্যাট হয়, তারপরও যদি একটু সাপোর্ট থাকে, সেটা বাংলাদেশের জন্য অ্যাডভান্টেজ হবে বলে আমি মনে করি।’

কী কী কাজ করতে পারলে মূল পর্বে গ্রুপে পরাশক্তিগুলোর সাথে সমানতালে লড়াই এবং জেতা সম্ভব? এ প্রশ্নের জবাবে সুজন বলেন, ‘আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে যে খুব পাকা দল হয়নি, সেটা সবাই বিশ্বাস করে। এ ফরম্যাটে আমরা বড় দল না এখনো। ওয়ানডেতে যেমন যে কোন দিন বড় দলকে হারিয়ে দিতে পারি, এ ফরম্যাটে তা পারি না। তাই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমাদের মনে সব সময় একটা ভাব থাকা উচিৎ। তাহলো- আমাদের এখানে হারানোর কিছু নেই। কারণ, এ ফরম্যাটে আমাদের সামনে কোন বড় টার্গেট থাকে না। তাই প্রত্যাশার চাপ না নিয়ে একদম নির্ভার, ভয়হীন ও স্বাধীন ক্রিকেট খেলার চিন্তা ও চেষ্টা থাকা উচিৎ।’

‘আমরা বিশ্বকাপে যদি তা করতে পারি তাহলে চান্স ভাল থাকবে। আমি মনে করি ফিয়ারলেস এবং ফ্রিডম নিয়ে খেলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধরুণ, সৌম্য ওপেন করতে গিয়ে প্রথম বলে আউট হয়ে যায়। যেতে পারে। তারপরও আমাদের ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে হবে।’

তামিম নেই। লিটন-নাইমের ওপেনিং ভাল হচ্ছে না। বিশ্বকাপের মূল পর্বে তাদের নিয়ে তার প্রত্যাশা কী? জবাব দিতে গিয়ে সুজন উল্টো প্রশ্ন করে বসেন, ‘লিটন রান করে না, কেন করে না- সেটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করে!’

তার বিশ্বাস টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লিটনের ব্যাট কথা বলবে। হাসবে। সুজনের অনুভব, ঢাকায় যে উইকেটে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা হয়েছে, সেখানে নাইম, লিটন, সৌম্য, সাকিব, আফিফ ও শামীম পাটোয়ারীদের রান করা কঠিন। এদের জন্য দরকার ট্রু উইকেট। এরা মূলতঃ টাইমার। এরা পেসটাকে কাজে লাগায়। শট খেলতে পছন্দ করে। ভাল উইকেট পেলে তাদের ব্যাট কথা বলে। হাসে।

সুজন প্রশ্নচ্ছলে বলেন, ‘লিটন কেমন মারতে পারে? এটা দেখার ও জানার জন্য একটি ইনিংস মনে করিয়ে দেই। ২০১৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে লিটনের ৯৪ রানের একটি ইনিংস আছে। সেটা দেখলেই বোঝা যায়। আসলে তার ভাল ব্যাটিংয়ের জন্য দরকার ভাল ও ট্রু উইকেট। লিটনের ওই অ্যাবিলিটি আছে। লিটন, আফিফ, শরিফুল এ বিশ্বকাপে আমাদের হয়ে নজর কাড়তে পারে। সৌম্যকেও ফেলা যাবে না। তারও পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে ভাল উইকেটে দারুণ ব্যাটিং করার।’

এআরবি/আইএইচএস/