খেলাধুলা

বিশ্বকাপের উইকেট হতে পারে বোলারদের দুঃস্বপ্ন: ইমরান

জালাল আহমেদ চৌধুরী প্রয়াত হয়েছেন অল্প ক’দিন আগে। আরেক নামি, অভিজ্ঞ ও সফল প্রশিক্ষক ওসমান খান ক্লাব কোচিং ছেড়েছেন বেশ কয়েক বছর হয়ে গেছে। বর্তমান সময়ে ক্লাব তথা জাতীয় পর্যায়ের কোচিংয়ে সারোয়ার ইমরানই সবার চেয়ে বড়।

Advertisement

গত দুই যুগে যত ক্রিকেটার এসেছেন জাতীয় দলে, তাদের প্রায় সবাই তার ছাত্র, শিষ্য। তিনি বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট কোচ। তার কোচিংয়েই শুরু হয়েছিল টাইগারদের টেস্ট যাত্রা। এখনো ক্লাব ও বিপিএলে নিয়মিত কোচিং করান। এবারের লিগে শিরোপা বিজয়ের সম্ভাবনা জাগানো প্রাইম ব্যাংকের কোচ ছিলেন সারোয়ার ইমরান।

কাজেই ক্রিকেটারদের খুব কাছ থেকে দেখেন। তাদের কার কী অবস্থা? কার সামর্থ্য কী? ভুল-ত্রুটি, প্লাস পয়েন্ট, মাইনাস পয়েন্ট- সবই তার খুব ভালো জানা। জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে সেই আলোকেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জাতীয় দলের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন সারোয়ার ইমরান।

আসুন শোনা যাক দেশের অন্যতম সিনিয়র, অভিজ্ঞ ও দক্ষ কোচ সারোয়ার ইমরানের মূল্যায়ন-

Advertisement

জাগো নিউজ: বিশ্বকাপের এই দলটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী, তারা কতটা কী করতে পারবে?ইমরান: আমি তো চাই বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলুক; কিন্তু মনে হয় না আমরা সেমিফাইনাল খেলতে পারবো বা অতদুর যাওয়া সম্ভব হবে।

জাগো নিউজ: কেন মনে হয় না?ইমরান: সামর্থ্যে ঘাটতি তো আছেই। এছাড়া বাংলাদেশ টিমের প্র্যাকটিস ভাল হয়নি। মানে যথাযথ প্রস্তুতি হয়নি।

জাগো নিউজ: কেন এই দলই তো জিম্বাবুয়ের মাটি থেকে সিরিজ জিতে এসেছে। আর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকেও সিরিজ হারিয়েছে। টিম ম্যানেজমেন্টের দাবি বেশ ভাল প্রস্তুতি নিয়েই গেছে রিয়াদের দল!

ইমরান: আমার সেটা মনে হয় না। আমরা একমাত্র কয়েকটি ম্যাচ জয়ছাড়া আর কিছু সঙ্গে নিয়ে ওমান ও আরব আমিরাত যাচ্ছি না। ওখানকার উইকেট আমাদের বোলারদের ‘দুঃস্বপ্ন’ হতে পারে। আমাদের বোলাররা দেশের মাটিতে খেলে কিছুই শেখেনি। কোন লড়াই সংগ্রাম করেনি। উইকেটের সহায়তায় উইকেট পেয়েছে। সেটা বিশ্বকাপের মত বিশ্ব আসরে চলবে না।

Advertisement

জাগো নিউজ: কিন্তু মোস্তাফিজ তো শেরে বাংলায় খেলে গিয়ে আরব আমিরাতে আইপিএলে ভাল করছে। সেটা কী করে সম্ভব হলো?

ইমরান: মোস্তাফিজ ভাল বোলার। একমাত্র মিস্ট্রি বোলার আমাদের। তার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। সাকিব ছাড়া বাকি বোলারদের জন্য কাজটা সহজ হবে না।

জাগো নিউজ: সাকিব আর মোস্তাফিজ আরব আমিরাতে আইপিএল খেলছে। তাদের এই আইপিএল খেলার কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ দলে?

ইমরান: আমার মনে হয় না তেমন কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বরং সাকিবের আইপিএলে ম্যাচ কম খেলাটা তার ও আমাদের দলের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

জাগো নিউজ: সেটা কিভাবে?

ইমরান: আইপিএলে সব দেশের ক্রিকেটাররা ম্যাচ খেলছেন। আরব আমিরাতের উইকেটের সাথে একটা চমৎকার অ্যাডজাস্টমেন্ট হয়ে যাচ্ছে। নিজেদের ম্যাচ কন্ডিশনের সাথে তারা ঝালিয়েও নিচ্ছে। মোট কথা, অনেক দলের বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশের ক্রিকেটারের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ভাল হচ্ছে। সেখানে আমাদের আশা ভরসার কেন্দ্রবিন্দু এবং মূল চালিকাশক্তি সাকিবকে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয়েছে ড্রেসিং রুম। ডাগআউটে। খেলতে পারেনি (শেষের কয়েকটি ম্যাচ ছাড়া, তাও ব্যাটিং করেছে একটিতে)। সাকিবের এই কম ম্যাচ খেলাটা তার নিজের প্রস্তুতিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এবং আমার মনে হয়, এতে করে সাকিববের ওয়ার্ল্ডকাপ প্রস্তুতিতে একটা ঘাটতি থেকে যাবে।

আর শেষদিকে মোস্তাফিজের মার খাওয়া ৪ ওভারে ৫০-এর বেশি রান দিয়ে দেয়াটাও আমার কাছে ভাল ঠেকেনি। মনে হচ্ছে ব্যাটিং উইকেট হলে মোস্তাফিজের সমস্যা হবে। যদিও আগের ম্যাচগুলো তার ভাল কেটেছে। আমি বোলিং নিয়ে চিন্তিত। দ্বিধান্বিত।

জাগো নিউজ: তাহলে আপনার কি মনে হয়, বাংলাদেশ ঠিকমত প্রস্তুতি না নিয়ে অগোছালো অবস্থায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে নামবে?

ইমরান: আমিতো সেটা শুরুতেই বলেছি যে, আমাদের প্রস্তুতি ভাল হয়নি। বিশ্বকাপের মত সর্বোচ্চ পর্যায়ে অংশ নিতে যতটা সাজানো গোছানো আর সুপরিকল্পিত, সুবিন্যস্ত প্রস্তুতি দরকার ছিল তা হয়নি। আমি ভেবে পাই না, আরব অমিরাতের মাঠে আমাদের বোলিং প্ল্যান কী হবে? আমরা ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনজন স্পিনার নিয়ে পাওয়ার প্লে’তে বোলিং করিয়েছি। মানে স্পিন দিয়ে বোলিং শুরু হয়েছে। এখন সেই ফর্মুলা কী ওয়ার্ল্ডকাপেও অনুস্মরণ করা হবে? আমরা কী বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চেও স্পিন দিয়েই বোলিং শুরু করবো? নাকি অন্য ফর্মুলা ফলো করবো। এটা একটা বড় প্রশ্ন আমার মনে।

ওদিকে ব্যাটসম্যানদের অনেকেই ফর্মে নেই। ফর্মে ছিলও না। আর স্লা ও লো এবং খানিক টার্নিং পিচে বেশ কিছু ম্যাচ খেলে তারা কেউই ফর্মে ফিরতে পারেনি। বরং আরও আড়ষ্ট হয়ে গেছে। বলা হচ্ছে ওমান ও আরব আমিরাতে গিয়ে ব্যাটসম্যানরা অ্যাডজাস্ট করে ফেলবে। আমার তা নিয়েও আছে সংশয়। অ্যাডজাস্ট করা, গিয়ে পরিবেশের সাথে অ্যাডজাস্ট হওয়া, আর আগেই অ্যাডজাস্ট করা আছে, সেটা ভিন্ন জিনিস।

জাগো নিউজ: তাহলে বাংলাদেশের বাস্তব ভিত্তিক সম্ভাবনা কতটা? মূল পর্বে ম্যাচ জেতা সম্ভব হবে এবার?ইমরান: ভারত, পাকিস্তান আর নিউজিল্যান্ডের সাথে জেতার সম্ভাবনা খুব কম। বাছাই পর্ব থেকে যদি আয়ারল্যান্ড উঠে আসে, তাহলে সেই ম্যাচটি হয়তো জিতবো। আর কারো কথা বলা যাচ্ছে না।

জাগো নিউজ: কেন আফগানিস্তানের সাথে জেতা যাবে না?ইমরান: চান্স আছে। কিন্তু আফগানদের আছে তিনটি খুব ভাল বোলার। যারা ম্যাচ ঘোরাতে পারে। আমাদের সেই মানের বোলার মাত্র দু’জন- সাকিব ও মোস্তাফিজ। জিততে হলে আফগান বোলারদের ভাল খেলতে হবে। তাদের ঠিকমত সামলাতে পারলে জেতা অসম্ভব না।

জাগো নিউজ: আপনার প্রিয় ছাত্র মুশফিকের দিনকাল ভাল কাটছে না। এবারের বিশ্বকাপে মুশফিক কেমন করতে পারে?

ইমরান: টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হয়ত ট্র্যাক রেকর্ড তত ভাল না। তারপরও আমার মনে হয় আমাদের মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের মেরুদন্ড হলো মুশফিক। দলের সে একজন অতি অপরিহার্য্য ও গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার। যার ভাল খেলা, রান করার ওপর আমাদের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে। আমার বিশ্বাস মুশফিক কামব্যাক করবে এ বিশ্বকাপে।

এআরবি/আইএইচএস