আন্তর্জাতিক

চিঠি-ডাকটিকিটে সেজেছে কলকাতার পূজামণ্ডপ

পশ্চিমবঙ্গ সংবাদদাতা

Advertisement

‘চিঠঠি আয়ি হ্যায় আয়ি হ্যায় চিঠঠি আয়ি হ্যায়’, এই গানের লাইনগুলো মনে থাকলেও বা মনে মনে গুণগুণ করে আওড়ালেও পরিচিতদের কুশল জানতে চিঠি লেখার সেই পুরোনো অভ্যাস আজ আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। মেসেজ, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার হয়ে উঠেছে নিত্যসঙ্গী। নবীন থেকে প্রবীণ প্রায় সবারই এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সরব উপস্থিতি। তাই চিঠি লেখা আর হয়ে ওঠে না।

চিঠি লেখার সেই পুরোনো অভ্যাসকে অন্তত মনে ফিরিয়ে আনতে অরবিন্দ সেতু সর্বজনীনের এবারের সেরা ভাবনা তাক লাগিয়েছে আপামর জনসাধারণকে। পূজামণ্ডপে ঢুকলেই মনে হবে ডিজিটাল দুনিয়া থেকে বেরিয়ে আপনি আরও একবার পৌঁছেছেন হাতেলেখা চিঠির দুনিয়ায়। এ বছরের পূজায় তাদের থিম ‘ডাকযোগ’। এই অভিনব প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়েছে স্বয়ং ডাক বিভাগই। আগামী বুধবার অষ্টমীর দিন উত্তর কলকাতার ওই বিশেষ মণ্ডপেই খোলা হবে একটি অস্থায়ী ডাকঘর।

রানারকে আজকাল খবরের বোঝা নিয়ে আর বাড়িতে বাড়িতে ছুটতে হয় না। আজকের ডিজিটাল জগতে স্মার্টফোনের দাপটে ‘চিঠি’ লেখা হয়ে উঠেছে হাস্যকর। পোস্ট অফিস আর ডাকবাক্সগুলোর অবস্থা আজ বিলুপ্তপ্রায়। কিন্তু তা হলেও চিঠি বা ডাকব্যবস্থা আজও প্রাসঙ্গিক হয়ে রয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে।

Advertisement

মানুষের কাছে চিঠি আবেগের আরেক নাম। পোস্টম্যানের আগমনের জন্য অপেক্ষা হয়তো আজ আর নেই। কিন্তু সেই নস্টালজিয়া ব্যাপারটা রয়ে গেছে সবার মনে। পূজায় সেই নস্টালজিয়াকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছে উত্তর কলকাতার অরবিন্দ সেতু সর্বজনীন।

৪৫ বছরে পদার্পণ করছে অরবিন্দ সেতু সর্বজনীনের এবারের পূজা। রাজু সূত্রধরের থিম ভাবনায় পুরো মণ্ডপ সেজেছে চিঠি, ডাকটিকিট ও পোস্টকার্ড দিয়ে। মণ্ডপে ঢুকে এক নিমেষের জন্য মনে হতে পারে, আপনি হয়তো কোনো পোস্ট অফিস বা ডাক বিভাগের কোনো পুরোনো কিন্তু সুসজ্জিত অফিসে ঢুকে পড়েছেন। মণ্ডপজুড়ে ছোট ছোট চিঠি, যা আপনাকে ফেরাবে ছোটবেলার সেই পুরোনো স্মৃতির আঙিনায়। সেই সঙ্গে থাকছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রকাশিত ডাকটিকিট, যা একেকটি ঐতিহাসিক ঘটনার স্মারক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

ডাকটিকিটের আদলে তৈরি হয়েছে মা-দুর্গার মূর্তি। হঠাৎ দৃষ্টি পড়লে মনে হয় মা যেন স্বয়ং ডাকটিকিটের মধ্যেই বসে আছেন। প্রতিমা তৈরি করেছেন শিল্পী গোপাল পাল।

অরবিন্দ সেতু সর্বজনীনের পূজার অন্যতম উদ্যোক্তা মিন্টু পাত্র বলেন, ডিজিটাল যুগে হারিয়ে গেছে চিঠি লেখার রীতি। চিঠিতে লেখা সেই সম্বোধনের ভাষা আজকের তরুণ প্রজন্মের জানা নেই। ধীরে ধীরে কালের নিয়মে কমেছে মানুষের ডাকটিকিট জমানোর শখও। পাড়ার মোড় থেকে হারিয়ে যাওয়া সেই সব ডাকবাক্সের কথাই মনে করাবে এই মণ্ডপ।

Advertisement

অদ্ভুতভাবে ঘটনাচক্রে এই মাহেন্দ্রক্ষণে ডাক বিভাগের ডাক সপ্তাহ উদযাপন চলছে। অরবিন্দ সেতুর পূজার থিমের কথা জানতে পেরে ভারতীয় ডাক বিভাগের উত্তর কলকাতার সদরদপ্তর থেকে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ডাক বিভাগ পূজা উদ্যোক্তাদের থিম ভাবনার স্বীকৃতিস্বরূপ পূজার অষ্টমীর দিন প্যান্ডেলেই আস্ত একটি অস্থায়ী ডাকঘর খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেখানে সাধারণ মানুষ এসে চিঠি পোস্ট করতে পারবেন। কিনতে পারবেন ডাকটিকিটও। শুধু তাই নয়, এই পূজামণ্ডপের আদলে একটি বিশেষ ডাকটিকিট প্রকাশেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ডাক বিভাগ। তাদের এ উদ্যোগে স্বভাবতই আপ্লুত আয়োজকরা।

বিএ/এএসএম