নববিবাতিদের জন্য নেক সন্তান চেয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উত্তম। যারা নতুন বিয়ে করেছেন, তারা কীভাবে আল্লাহর কাছে নেক সন্তান চেয়ে প্রার্থনা করবেন; সে দিকনির্দেশনাও এসেছে কুরআনে। ইসলাম প্রত্যেক নবদম্পতিকে আল্লাহর কাছে সুসন্তান কামনায় এভাবে দোয়া করার শিক্ষা দেয়-رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّ اجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًاউচ্চারণ : রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াঝিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুর্রাতা আইয়ুনিও ওয়াঝআলনা লিলমুত্তাক্বিনা ইমামা।’অর্থ : ‘হে আমাদের রব! আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি দান করুন যারা আমাদের চোখ শীতল করবে। আর আমাদেরকে মুত্তাকিদের জন্য আদর্শ করুন।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৭৪)
Advertisement
দুনিয়াতে নেককার স্ত্রী স্বামীর জন্য নয়নপ্রীতিকর। আর সন্তান-সন্তুতি বাবা-মার জন্য চোখের শীতলতা আনয়নকারী ও সৌন্দর্যের প্রতীক। এ সন্তান যদি সঠিক পথে চলে তবে তারা হবে পরকালের পাথেয়। এমনটি এসেছে কোরআন ও সুন্নায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-اَلۡمَالُ وَ الۡبَنُوۡنَ زِیۡنَۃُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ الۡبٰقِیٰتُ الصّٰلِحٰتُ خَیۡرٌ عِنۡدَ رَبِّکَ ثَوَابًا وَّ خَیۡرٌ اَمَلًا‘সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য; স্থায়ী সৎ কাজ তোমার প্রতিপালকের কাছে পুরস্কারপ্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং কাঙ্ক্ষিত হিসেবেও শ্রেষ্ঠতর।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ৪৬)
তাই সব বাবা-মার চাওয়া হলো-সন্তান যেন হয় এমন আমলকারী; যার নেক কাজের কল্যাণে দুনিয়াতে বাবা-মার চোখ ও অন্তর শীতলতা ও আনন্দে ভরে যাবে। আর পরকালেও তারা পাবে সর্বোত্তম পাথেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে থেকেই তা প্রমাণিত-‘মানুষ যখন মারা যায় তখন তিনটি বস্তু ছাড়া তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। তাহলো-১. সাদকায়ে জারিয়া (কল্যাণ অব্যাহত থাকে এমন দান);২. (এমন ইলম) জ্ঞান : যা দ্বারা অন্য মানুষ উপকৃত হয়;৩. নেককার সন্তান : যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম)
সুতরাং দুনিয়ার সব স্বামী-স্ত্রী তথা নবদম্পতির উচিত, আল্লাহর কাছ নেক সন্তান কামনা করা। এছাড়াও বাবা-মা সন্তানের জন্য আরও যেসব দোয়া করতে পারেন; সে সম্পর্কে রয়েছে কোরআনে একাধিক দোয়া। তাহলো-১. নেক সন্তানের জন্য দোয়াرَبِّ هَبۡ لِیۡ مِنَ الصّٰلِحِیۡنَউচ্চারণ : ‘রাব্বি হাবলি মিনাস সালিহিন।’অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নেককার সন্তান দিন।’ (সুরা সফফাত : আয়াত ১০০)
Advertisement
২. নামাজি সন্তান কামনা করাرَبِّ اجۡعَلۡنِیۡ مُقِیۡمَ الصَّلٰوۃِ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ رَبَّنَا وَ تَقَبَّلۡ دُعَآءِউচ্চারণ : ‘রাব্বিঝআলনি মুক্বিমাসসালাতি ওয়া মিন জুররিয়্যাতি রাব্বানা ওয়া তাকাব্বাল দোয়ায়ি।’অর্থ : ‘(হে আমার) প্রভু! আমাকে নামাজ আদায়কারী করুন এবং আমার বংশধরদের (সন্তান-সন্তুতিদের) মধ্য থেকেও। হে আমার প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল করুন।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪০)
৩. সন্তানের জন্য শিরকমুক্ত শান্তিপূর্ণ জনপদের দোয়াرَبِّ اجۡعَلۡ هٰذَا الۡبَلَدَ اٰمِنًا وَّ اجۡنُبۡنِیۡ وَ بَنِیَّ اَنۡ نَّعۡبُدَ الۡاَصۡنَامَউচ্চারণ : ‘রাব্বিঝআল হাজা আমিনাও ওয়াঝনুবনি ওয়া বানিয়্যা আন-নাবুদাল আসনাম।’হে আমার প্রতিপালক! এ নগরকে নিরাপদ করুন এবং আমাকে ও আমার পুত্রদের প্রতিমাপূজা থেকে দূরে রাখুন।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩৫)
৪. উত্তম প্রতিবেশি ও জীবিকার দোয়াرَبَّنَاۤ اِنِّیۡۤ اَسۡکَنۡتُ مِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ بِوَادٍ غَیۡرِ ذِیۡ زَرۡعٍ عِنۡدَ بَیۡتِکَ الۡمُحَرَّمِ ۙ رَبَّنَا لِیُـقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ فَاجۡعَلۡ اَفۡئِدَۃً مِّنَ النَّاسِ تَهۡوِیۡۤ اِلَیۡهِمۡ وَارۡ زُقۡهُمۡ مِّنَ الثَّمَرٰتِ لَعَلَّهُمۡ یَشۡکُرُوۡنَউচ্চারণ : ‘রাব্বানা ইন্নি আসকাংতু মিন জুররিয়্যাতি বিওয়াদিন গাইরি জ্বি যারয়িন ইংদা বায়তিকাল মুহার্রাম; রাব্বানা লিইউক্বিমুস সালাতা ফাঝআল আফয়িদাতাম মিনান নাসি তাহওয়ি ইলাইহিম ওয়ারযুক্বহুম মিনাছ-ছামারাতি লাআল্লাহুম ইয়াশকুরুন।’অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদেরকে ফল-ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের কাছে বসতি স্থাপন করালাম। হে আমাদের প্রভু! এ জন্য যে তারা যেন নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। অতএব কিছু লোকের অন্তর তাদের অনুরাগী করে দাও এবং ফলমূল দ্বারা তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করে দাও। যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩৭)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কোরআনে উল্লেখিত দোয়ার মাধ্যমে নেক সন্তান পাওয়ার এবং তাদের কল্যাণে দোয়া করা।
Advertisement
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নেক সন্তান দান করুন। নামাজি সন্তান দান করুন। সন্তানের রিজিক প্রশস্ত করে দিন। শয়তানের ধোঁকা থেকে হেফাজত করুন। দুনিয়ার চোখ শীতলকারী এবং পরকালের মুক্তি উপায় হিসেবে সন্তানকে কবুল করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম