খেলাধুলা

তামিমের ব্যাটে এলো অধরা সেঞ্চুরি

ততদিনে ১১টি ভিন্ন দেশের ১৭ জন ব্যাটার পেয়ে গেছেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরির স্বাদ। যেখানে ছিলো স্কটল্যান্ড, আফগানিস্তান, হংকংয়ের ব্যাটারদের নামও। কিন্তু সে তালিকায় ছিলো না বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধি। প্রায় ১০ বছর টি-টোয়েন্টি খেলেও সেঞ্চুরি করতে পারেনি বাংলাদেশের কোনো ব্যাটার।

Advertisement

অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে ম্যাচ। আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর আগে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র ব্যাটার হিসেবে কুড়ি ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জাদুকরী তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল।

দেশসেরা ওপেনারের সেঞ্চুরির সুবাদে ওমানের বিপক্ষে বড় জয় পায় বাংলাদেশ। সেটিই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবশেষ জয় হয়ে আছে। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটিতে ৫৪ রানে হারায় বাংলাদেশ। মাত্র ১২ ওভারেই ওমানের ৯ উইকেট তুলে নেয় তারা। এর আগে নিজেরা দাঁড় করায় ১৮০ রানের বড় সংগ্রহ।

দিনটি ছিলো ১৩ মার্চ, ভেন্যু ধর্মশালা হিমাচল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম। প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় আর দ্বিতীয়টিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে উড়ন্ত সূচনার পর বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেসে যাওয়ায় বাংলাদেশের সুপার টেনের টিকিট নিয়ে তেমন চিন্তা ছিলো না।

Advertisement

কিন্তু ভিন্ন কিছুরই পরিকল্পনা ছিলো ওমানের। তাই তো টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ের শুরুটা খুব একটা মসৃণ ছিলো না। ওপেনার সৌম্য সরকার কিছুতেই ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত সপ্তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ২২ বলে মাত্র ১২ রান করেন তিনি।

সৌম্য আউট হওয়ার সময় বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ ৬.৫ ওভারে ১ উইকেটের বিনিময়ে ৪২ রান। অর্থাৎ তখন পর্যন্ত কোনোমতে ছয় রান রেটে খেলছিলো টাইগাররা। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ইনিংসের গতিপথ পুরোপুরি বদলে দেন সাব্বির রহমান ও তামিম ইকবাল।

দুজনের ৯.১ ওভারের জুটিতে আসে ৯৭ রান। দলকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দিয়ে ১৬তম ওভারের শেষ বলে আউট হন সাব্বির। তার ব্যাট থেকে আসে ৫ চার ও ১ ছয়ের মারে ২৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। পরে শেষ চার ওভারে ৪১ রান যোগ করেন তামিম ও সাকিব আল হাসান।

বাংলাদেশের ইনিংসের ১৮তম ওভার শেষে তামিম অপরাজিত ছিলেন ৯৭ রানে। তামিমকে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে দেখে দারুণ বোলিং করেন বিলাল খান। প্রথম তিন বল থেকে কোনো রানই আসেনি সেই ওভারে। যে কারণে ৫৬ বলে ৯৭ থেকে ৫৯ বলে ৯৭ হয়ে যায় তামিমের ইনিংস।

Advertisement

চতুর্থ বলে ফুরোয় অপেক্ষা, বিলালের লো ফুলটস ডেলিভারি কভার দিয়ে ড্রাইভ করেই উল্লাসে ফেটে পড়েন তামিম। হেলমেট খুলে ব্যাট হাওয়ায় ঘুরিয়ে উন্মত্ত উদযাপন করেন দেশসেরা ওপেনার। দেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়ে এমন উদযাপনই মানানসই ছিলো তার জন্য।

শতরান পূরণ করতে তামিম খেলেন ৬০ বল। যেখানে ছিলো ১০ চার ও ৫ ছয়ের মার। শেষ ওভারে একটি করে চার-ছয়ের মারে ১৫ রান তুলে বাংলাদেশকে ১৮০ রানে পৌঁছে দেন সাকিব। তিনি অপরাজিত থাকেন ৯ বলে ১৭ করে। প্রথম সেঞ্চুরিয়ান তামিমের ব্যাট থেকে আসে ১০৩* রান।

বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের মতোই ধীরেসুস্থে শুরু করে ওমান। প্রথম ৭ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৪১ রান করে তারা। তখনই নামে বৃষ্টি। ডি-এল মেথডে তখন তারা পিছিয়ে ছিলো ১৯ রানে। পরে বৃষ্টি থামলে নতুন লক্ষ্য দেয়া হয় ১৬ ওভারে ১৫২ রান।

অর্থাৎ বাকি থাকা ৯ ওভারে ১১১ রান করতে হতো ওমানকে। নতুন লক্ষ্যে খেলা শুরুর আট বল পর পুনরায় নামে বৃষ্টি। এই আট বলে মাত্র চার রান করতেই দুই উইকেট হারিয়ে বসে ওমান। যা ডি-এল মেথডে আরও পিছিয়ে দেয় তাদের।

বৃষ্টি থামার পর নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ১২ ওভারে ১২০ রান। বাকি থাকা ২২ বলে ৭৫ রান করতে হতো ওমানের, হাতে ছিলো ৬ উইকেট। তারা সেই ২২ বলে করতে পারে ২০ রান, হারায় আরও পাঁচটি উইকেট। তাদের ইনিংস থেমে যায় ৯ উইকেটে ৬৫ রানে। বাংলাদেশ পায় বৃষ্টি আইনে ৫৪ রানের জয়।

বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন সাকিব আল হাসান। তিনি নিজের তিন ওভারে মাত্র ১৫ রান খরচায় নেন ৪টি উইকেট। এছাড়া তাসকিন আহমেদ, আলআমিন হোসেন, মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাব্বির রহমান নেন একটি করে উইকেট।

স্কোরকার্ড

বাংলাদেশ: ১৮০/২ (২০ ওভার; তামিম ১০৩*, সৌম্য ১২, সাব্বির ৪৪, সাকিব ১৭*; বিলাল ৪-০-১৬-০, আমির আলি ৪-০-২৮-০, অজয় ৩-০-৩৫-১, মুনিস ৪-০-৫০-০, মেহরান ১-০-১১-০, খাওয়ার ৩-০-২৪-১, আমির কালিম ১-০-১৫-০)

ওমান: ৬৫/৯ (১২ ওভার; জিসান ০, খাওয়ার ৮, জাতিন্দার ২৫, আদনান ১৩, আমির কালিম ০, মেহরান ৩, সুলতান ১, অজয় ১, মুনিস ৩*, বিলাল ১*; তাসকিন ২-০-৮-১, আলআমিন ২-০-১০-১, আবু হায়দার ২-০-১৫-০, সাকিব ৩-০-১৫-৪, মাশরাফি ২-০-১০-১, সাব্বির ১-০-৫-১)

ফলাফল: বাংলাদেশ বৃষ্টি আইনে ৫৪ রানে জয়ীম্যান অব দ্য ম্যাচ: তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)

এসএএস/আইএইচএস