বিশ্বকাপের প্রথম আসরে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হারিয়েছিলো টি-টোয়েন্টির পাওয়ার হাউজ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। কিন্তু সেই আসরে পরের চার ম্যাচে আর জয়ের দেখা পায়নি টাইগাররা। এমনকি জয় মেলেনি পরের তিন বিশ্বকাপের ছয়টি ম্যাচেও।
Advertisement
এর মধ্যে ছিলো ২০০৯ সালের আসরে তখনকার আইসিসি সহযোগী সদস্য দেশ আয়ারল্যান্ডের কাছে ৬ উইকেটে হেরে যাওয়ার হতাশাও। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপে টানা ১০টি ম্যাচ হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে বিশ্ব আসরের আয়োজন করে বাংলাদেশ।
উদ্বোধনী ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিলো আফগানিস্তান। বিশ্ব ক্রিকেটে তখন নতুন মুখ তারা। সহযোগী দেশগুলোর বিপক্ষে দাপুটে পারফরম্যান্স করেই খেলতে এসেছিলো বিশ্বকাপে। তাই মনে সাহস ছিলো প্রচুর। সেই সাহস থেকেই বাংলাদেশকে হারানোর কথা জানায় তারা।
এমনকি টাইগারদের যদি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান থেকে থাকে, তাহলে তাদেরও দশজন অলরাউন্ডার আছে বলে জানিয়ে দেন অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি। পরে অবশ্য ম্যাচে সেই সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সেই ধরাশায়ী হয় দশ অলরাউন্ডারের আফগানিস্তান।
Advertisement
দিনটি ছিলো ১৬ মার্চ, ২০১৪ সাল। সেদিন ফুরোয় বাংলাদেশের দীর্ঘ সাত বছরের অপেক্ষা। তিন আসর ও দশ ম্যাচ পর বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। তাও কি না আফগানদের মাত্র ৭২ রানে গুড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে। পরে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জিতে নেয় টাইগাররা।
ম্যাচে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। প্রথম ওভারে বল হাতে তুলে নেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ম্যাচের প্রথম বলেই আফগান উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদকে সাজঘরের পথ ধরিয়ে দেন মাশরাফি।
সেই যে প্রথম বল থেকে শুরু, এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি আফগানরা। গুলবদিন নাইব ২২ বলে ২১, করিম সাদিক ২৩ বলে ১০ ও শফিকউল্লাহ ১৬ বলে ১৬ ব্যতীত আর কেউই দুই অঙ্কে যেতে পারেননি। সবমিলিয়ে তারা করতে পারে মাত্র ৭২ রান।
তখনকার সময়ে যা ছিলো বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। আর এর প্রধান রুপকার ছিলেন সাকিব। যিনি ৩.১ ওভারে মাত্র ৮ রান খরচায় নেন ৩টি উইকেট। এছাড়া আব্দুর রাজ্জাক ২, মাশরাফি ১, মাহমুদউল্লাহ ১ ও ফরহাদ রেজা নেন ১টি উইকেট।
Advertisement
লক্ষ্য মাত্র ৭৩ রানের, তাই রান তাড়ায় তাড়াহুড়ো করেননি বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয়। মনে হচ্ছিলো পূর্ণ ১০ উইকেটেই জিতে যাবে বাংলাদেশ। কিন্তু ইনিংসের অষ্টম ওভারে সামিউল্লাহ শিনওয়ারির লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন ২৭ বলে ২১ রান করা তামিম।
দলের রান ৪৫, জয়ের জন্য বাকি ছিলো ২৮ রান। এই বাকি পথটুকু পাড়ি দিতে আর কোনো বিপদ ঘটতে দেননি বিজয় ও সাকিব। ইনিংসের ১২তম ওভারের শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়েই ম্যাচ শেষ করেন বিজয়। তিনি শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৩৩ বলে ৪৪ রান করে। সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ১০ রান।
স্কোরকার্ড
আফগানিস্তান: ৭২/১০ (১৭.১ ওভার; শাহজাদ ০, নাজিব ৭, নাইব ২১, নওরোজ ০, নবি ৩, করিম ১০, শফিকউল্লাহ ১৬, সামিউল্লাহ ১, দাওলার ১, শাপুর ১ ও আফতাব ০*; মাশরাফি ২-০-৮-১, আলআমিন ২-০-১৮-০, সাকিব ৩.১-০-৮-৩, মাহমুদউল্লাহ ৪-১-৮-১, রাজ্জাক ৪-০-২০-২, সাব্বির ১-০-১-০, ফরহাদ ১-০-২-১)।
বাংলাদেশ: ৭৮/১ (১২ ওভার; তামিম ২১, এনামুল ৪৪*, সাকিব ১০*, নবি ৩-০-১১-০, শাপুর ১-০-৭-০, করিম ২-০-১৭-০, দাওলাত ২-০-১৩-০, সামিউল্লাহ ৩-০-১৪-১, আফতাব ১-০-১৫-০)।
ফলাফল: বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ীম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
এসএএস/আইএইচএস