খেলাধুলা

ফোক্সওয়াগেনের গতিতে ছুটুক নর্তজে

সামনের মাসেই ২৮ বছরে পা দেবেন অ্যানরিখ নর্তজে। তবে গেল বছর অর্থাৎ, ২৭ বছর বয়সে এসে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের খেতাব পান তিনি! এতে দায় অবশ্য এই স্পিড স্টারের নিজেরই। ২২ গজে তার আসাই যে অনেক দেরি করে!

Advertisement

২০১৯ সালে ২৬ বছর বয়সে জাতীয় দলে অভিষেক। দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলের হয়ে ওই বছর তিন ফরম্যাটেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন নর্তজে।

অভিষেকের পর দুই বছরে এক গতি দিয়েই আফসোস বাড়িয়েছেন নর্তজে। এমন গতিশীল, সবচেয়ে বড় কথা প্রতিশ্রুতিশীল বোলার আগে পেলে আখেরে লাভটা তো দক্ষিণ আফ্রিকারই হতো। নর্তজে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইনের কাছ থেকে। স্টেইন গোলার মতো বল ছুঁড়তেন বলে খ্যাতি পেয়েছিলেন স্টেইনগান হিসেবে। আর নর্তজের বোলিং দেখে স্টেইনের উক্তি, খুব রোমাঞ্চকর।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শখ করে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন নর্তজে। একটা পর্যায়ে ক্রিকেট মনে ধরে যায় বিধায়, পেশাদার ক্রিকেট ক্যারিয়ার গড়ার পথে হাঁটেন তিনি। ২০১৬-১৭ মৌসুমে প্রথম শ্রেণির ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অভিষেক তার। সেই টুর্নামেন্টে ওয়ারিয়র্সের হয়ে চার ম্যাচ খেলেই ২০ উইকেট তুলে নিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন নর্তজে।

Advertisement

পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেরা পাঁচ উইকেট শিকারিদের তালিকায় নিজের নাম লেখান। পেসার হিসেবে নেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট। লঙ্গার ভারসন দিয়ে আলো কাড়লেও, সংক্ষিপ্ত ওভারের ক্রিকেটে বড় ব্রেকটা পান এই দীর্ঘদেহি পেসার।

২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট এমজানসি সুপার লিগে বল হাতে গতির ঝড় তুলে তিন ম্যাচেই তুলে নেন ৮ উইকেট। তবে কেপটাউন ব্লিটজের হয়ে তার সুখের সময় খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। গোড়ালির চোট নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করা হয়নি তার। করতে হয় অস্ত্রোপচারও।

তবে ২০১৯ সালে ফিরতেই এমজানসি সুপার লিগে তার এমন পারফরম্যান্সের সুবাদে দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দল থেকে ডাক পড়ে তার। ওয়ানডে অভিষেক সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ পারফরম্যান্স করেন। ফলে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে ফেলেন তিনি।

তবে এরপর থেকেই নর্তজের জীবনে দুঃসময় নেমে আসে। কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে বেশ কার্যকর বলেই, ২০১৯ সালে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি দল কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে ভেড়ায় তাকে। তবে কাঁধের চোটের কারণে আসর থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে হয় নর্তজেকে।

Advertisement

সেই চোট থেকে সেরে উঠতে থাকায় তাকে রেখেই বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করে ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে বিশ্বকাপের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার আগে অনুশীলন করার সময় হাতে আঙুল ভেঙে যায় তার। ফলে দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বকাপ যাত্রা থেমে যায় তার।

ওই চোটের পরই দুর্দান্তভাবে ২২ গজের ময়দানে ফেরেন নর্তজে। হয়ে ওঠেন দক্ষিণ আফ্রিকার আস্থার প্রতীক, ভরসার পাত্র। বিশেষ করে প্রতিনিয়ত ঘণ্টায় ১৫০ কি.মি গতিতে বল ছুঁড়তে পারেন বলে বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের স্পিডস্টার তকমা লেগে গেছে তার গায়ে। সেই দুরন্ত গতির সঙ্গে লাইন-লেন্থ, বাউন্সার-ইয়র্কারেও সিদ্ধহস্ত বলে, নর্তজে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিং অ্যাটাকের নেতৃত্ব দিবেন।

খুব বড় শহর থেক উঠে আসেননি বলেই হয়তো ক্রিকেট ক্যারিয়ার গড়তে সময় লেগেছে নর্তজের। তার বাড়ি পোর্ট এলিজাবেথের উইটেনহাগে। যেখানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোক্সওয়াগনের সবচেয়ে বড় (আফ্রিকা অঞ্চলের) কারখানা অবস্থিত। ফোক্সওয়াগেন দ্রুত গতির গাড়ি বানানোর জন্য বিখ্যাত। একই শহর থেকে উঠে আসা বলে, নর্তজের বলও হয়তো গতির সীমা না মেনেই কথা বলে!

এবারের বিশ্বকাপে প্রোটিয়ারাও চাইবে, নর্তজের বল চলুক ফোক্সওয়াগেনের গতির মতো। তবেই না বিশ্বমঞ্চে ভালো ফলাফলের সম্ভাবনা বাড়বে এবি ডি ভিলিয়ার্স, ডেল স্টেইনদের পরবর্তী যুগের দক্ষিণ আফ্রিকার।

এসএস/আইএইচএস/