খেলাধুলা

ধ্রুবতারা হয়ে জ্বলুক আফিফ

বছর পাঁচেক আগের কথা। ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপকে সামনে রেখে কক্সবাজারে চলছিল যুব দলের প্রস্তুতি ক্যাম্প। সেখানেই আফিফ হোসেন ধ্রুবকে আবিষ্কার করেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফ্যাঞ্চাইজি রাজশাহী কিংসের একজন কোচ। ছোট-খাট গড়নের বাঁ-হাতি এই ব্যাটসম্যানের হাতে দারুণ সব শট দেখে সরাসরি দলেই নিয়ে নেন তাকে। বর্তমানে রাজশাহী রয়্যালস, তৎকালীন রাজশাহী কিংসের অধিনায়ক ছিলেন তামিম ইকবাল। আগে কখনো আফিফকে দেখা হয়নি তার। তবে জানতেন যুব দলের টপ অর্ডারে দারুণ ব্যাটিং করে। দারুণ সব শটের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে বলও ঘুরাতে পারেন। আগে কেউ না চিনলেও, রাজশাহীর হয়ে নিজের অভিষেকের দিনই সবাইকে নিজের সম্পর্কে যেন জানান দিলেন আফিফ। অভিষেকেই তুলে নিলেন ফাইফার। সেটাও মাত্র ১৭ বছর বয়সে। তার বোলিং স্পেলটাও ছিল দেখার মতো, ৪-১-২১-৫! যার মধ্যে ছিল, তখনকার বিস্ফোরক ব্যাটার ক্যারিবিয়ান তারকা ক্রিস গেইলের উইকেটও।

Advertisement

এমন স্বপ্নের অভিষেকের পর গোটা বাংলাদেশ জানল ছোট্ট আফিফের কথা। বাতাসে বাতাসে দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ল তার নাম। সেটাকে আরেকটু ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিলেন রাজশাহীর অন্যতম কর্ণধার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখলেন, ‘আমাদের নতুন ধ্রুবতারা’! আফিফের আরেকটা নাম ধ্রুব। এমন সম্ভাষণ যেন তার সঙ্গেই যায়।

দুই বিপিএল খেলে ২০১৮ সালে স্বপ্নপূরণ হয় আফিফের। ডাক পান জাতীয় দলে। শুরুর দিকে একটু অনিয়মিত হলেও, ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকে টাইগার দলের নিয়মিত সদস্য বনে যান আফিফ। দলে থিতু হতেই প্রতিনিয়ত আস্থার প্রতিদান দিয়ে চলেছেন এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার। কখনো ব্যাট হাতে, কখনো আবার বল হাতে- প্রয়োজন পড়লেই আফিফ ঝলকানির দেখা মেলে।

আফিফের এই ঝলকানির দেখা মিলছিল তার যুব দলে থাকাকালীন। বাংলাদেশ দলের সহঅধিনায়ক হিসেবে যুব এশিয়া কাপ খেলা এই ক্রিকেটার ২০১৮ সালের যুব বিশ্বকাপে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২৭৬ রান করেছিলেন। তখনই খোদ আইসিসি থেকে তাকে দেয়া হয়েছিল রাইজিং স্টারের (উঠতি তারকা) খেতাব।

Advertisement

এর আগেই অবশ্য প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একের পর এক সেঞ্চুরি, ঘরোয়া টুর্নামেন্টে বল হাতে হ্যাটট্রিক তুলে নিয়ে দেশের উদীয়মান তারকাখ্যাতি পেয়ে গিয়েছিলেন আফিফ।

বর্তমান ক্রিকেটটা আফিফের সঙ্গেই যায়। আধুনিক ক্রিকেট বদলে গেছে সম্পূর্ণরূপে। এখন ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই চলে পেশির খেলা। মারকুটে ব্যাটিং করতে হয় সব সময়। এ কাজটাই বেশ পারেন আফিফ। গড়নে লিকলিকে হলেও, বল বাউন্ডারি ছাড়া করতে তার জুড়ি মেলা ভার। সঙ্গে বোলিংয়ে এসেই প্রতিপক্ষের রান চাপানো, ব্রেক-থ্রু এনে দেয়া আর চুম্বক ফিল্ডিং-আফিফকে অল্পতেই পরিণত করেছে তারকা।

জাতীয় দলের হয়ে ৭টি ওয়ানডে এবং ২৪ টি-টোয়েন্টি খেলা আফিফের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ইনিংস ৫২ রানের। এতদিনে বড় কোনো ইনিংস খেলতে না পারলেও, গেল দুই বছরে তার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ মুগ্ধ করেছে কমবেশি সবাইকে। টিম ম্যানেজমেন্টের পছন্দের তালিকায়ও তাই তার নাম।

এবারের বিশ্বকাপে বাকি ১৫ দলের চেয়ে বয়স্ক দল নিয়েই অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে দলে গুটিকয়েক যে কজন তরুণ ক্রিকেটার আছেন, তাদের একজন এই আফিফ। যার অভিজ্ঞতা নেই বিশ্বমঞ্চে খেলার।

Advertisement

কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার কবিতায় বলে গেছেন আঠারো বয়সের কথা। এ বয়স দুর্মর, নির্ভয়, দুরন্ত। আফিফের বয়স আঠারো আরো আগে পেরিয়ে গেছে বটে। তবে মানসিকতার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন যেন আসেনি। তাই তো অভিজ্ঞতাহীন আফিফকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন অনেকে। আফিফ রান করবেন, পিঞ্চ হিটিংয়ে প্রতিপক্ষ বোলারদের নাভিশ্বাস ছুটিয়ে তুলবেন- এমন কল্পনায় বিভোর টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীরা।

অভিজ্ঞ সাকিব-মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকদের ওপর সবার প্রত্যাশাই থাকবে বাড়তি কিছুর। তবে উদীয়মান ক্রিকেটার হিসেবে আলো কাড়তে চাইবেন আফিফ নিজেও। বিশ্বকাপ এমন একটা জায়গা, যেখান থেকে তৈরি হয় পরবর্তী বিশ্ব তারকার। আগে কখনো বিশ্বকাপ না খেলা আফিফের চোখ এখন হয়তো সেদিকেই। বাংলাদেশের কোটি ক্রিকেট রোম্যান্টিকদের চাওয়াও একটাই-বিশ্বমঞ্চে সমহিমায় ভাস্কর হোক আফিফ। জ্বলুক বাংলাদেশের সাফল্যের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে।

এসএস/আইএইচএস/