কমলা রঙয়ের জার্সি কিংবা ক্যাপ- একটু বেশিই যেন টেনেছিল রায়ান টেন ডেসকাটকে। জন্ম তার দক্ষিণ আফ্রিকায়। তবে ক্রিকেটে হাতেখড়ির পর রায়ান টেন ডেসকাটের পরিণত হওয়া, খ্যাতি পাওয়া সবই যুক্তরাজ্যে। কাউন্টিতে এসেক্সের হয়ে খেলার সময়ই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সিটিজেনশিপ পেয়ে যান এই অলরাউন্ডার। পরে আর জন্মভূমি নয়, নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় টেন ডেসকাটের।
Advertisement
ছোট দলের বড় তারকা। রায়ান টেন ডেসকাটের পাশে এই কথাগুলো বড় মানানসই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডাচরা কখনো সেভাবে আধিপত্য দেখাতে পারেনি। তবে ব্যতিক্রম এই অলরাউন্ডার। ব্যাট-বল হাতে সব সময়ই ছিলেন ধারাবাহিক। তাতে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে দলের প্রধান অস্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যান।
বাইরেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। ২০১১ সালে আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে জনপ্রিয় ফ্যাঞ্চাইজি লিগ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলার সুযোগ পান তিনি। ডার্ক ন্যানেসের পর দ্বিতীয় ডাচ হিসেবে। তবে ন্যানেস আইপিএলে খেলার সুযোগ পাওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পেয়ে গিয়েছিলেন। ফলে অসি ক্রিকেটার হিসেবেই আইপিএল মাতান এই বাঁ-হাতি পেসার।
আইপিএলে কলকাতার হয়ে সফলতার সঙ্গেই টানা পাঁচ মৌসুম খেলেছেন। শুধু আইপিএল কেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) চট্টগ্রাম কিংস, ঢাকা ডায়নামাইটস, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস, রাজশাহী কিংসের হয়ে খেলেছেন টেন ডেসকাট। খেলেছেন পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) করাচি কিংস, লাহোর কালান্দার্সে। এই ফরম্যাটে টেন ডেসকাট আরও বেশি কার্যকরী কি-না, এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য তাই হঠাৎ করেই জাতীয় দলে ফেরা তার।
Advertisement
ডাচদের হয়ে টেন ডেসকাট সবশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন ২০১৯ সালে। এরপর নেদারল্যান্ডস ব্যস্ত সূচির মধ্যে থাকলেও, জাতীয় দলের হয়ে খেলা হয়নি তার। তবে তার অভিজ্ঞতাকে বিশ্বকাপে কাজে লাগাতে মরিয়া ডাচরা। এবারের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে অনেক দলই তাদের পুরনো, অভিজ্ঞ সেনানীদের দলে ফিরিয়েছে। তার দেখাদেখিই কি-না, ৪১ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারকে ডাকা। যিনি কি-না দলের হয়ে দুই বছর আগে শেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন, আর ওয়ানডে খেলেছেন ১০ বছর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপে।
টেন ডেসকাটও হয়তো আরেকটাবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়াতে চেয়েছিলেন। সেই কামনা পূর্ণ হয়েছে বলে, বিশ্বকাপ শেষে কাউন্টি মৌসুম শেষ করেই সবধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়ার আগাম ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে কিংবা ঘরোয়া টুর্নামেন্টে, আর কখনো ব্যাট-বল হাতে দলের জন্য ২২ গজে লড়বেন না টেন ডেসকাট। শেষটা তাই দারুণ করেই রাঙাতে চাইবেন তিনি। যেটা তিনি একবার নেদারল্যান্ডসের হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে করতে পারেননি।
জাতীয় দলের হয়ে ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই টেন ডেসকাটের এখন পর্যন্ত খেলা প্রথম এবং একমাত্র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়ে রয়েছে। ওই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই নিজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে আলো কাড়েন তিনি। নেদারল্যান্ডস ঐতিহ্যবাহী লর্ডসে হারিয়ে দেয় ইংল্যান্ডকে।
মহাকাব্য লেখার সেই ম্যাচে দুই ইংলিশ ওপেনার রবি বোপারা এবং লুক রাইটের উইকেট দুটি পকেটে পুরেছিলেন মিডিয়াম পেস করা এই ক্রিকেটার। পরে ব্যাট হাতেও রাখেন দলের জয়ে অবদান। ১৭ বলের অপরাজিত ২২ রানের ইনিংসে কমলা জার্সিধারীদের জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি।
Advertisement
সেই বিশ্বকাপে তিন দলের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে বড় ব্যবধানেই হেরেছিল নেদারল্যান্ডস। ফলে রানরেটে পিছিয়ে পড়ে আসর থেকেই ছিটকে যেতে হয় ডাচদের। ওই ম্যাচে আলো ছড়াতে পারেননি টেন ডেসকাটও। ফলে একরাশ হতাশা ভর করে তাকেও। যে হতাশা এবার দূর করার সুযোগ তার সামনে।
প্রায় দেড় যুগের ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা জাতীয় দলের হয়ে শেষবার কাজে লাগাতে চাইবেন তিনি। ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে টেন ডেসকাট যদি সেটা পারেন, তবে প্রথম রাউন্ডের বাধা পেরোনো খুব একটা কঠিন হওয়ার কথা নয় তার দল নেদারল্যান্ডসের। যে লক্ষ্য নিয়ে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবে ডাচরা।
এসএস/আইএইচএস/