এবছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তানজানিয়ার ঔপন্যাসিক আব্দুলরাজাক গুরনাহ। উত্তর-উপনিবেশবাদী উপন্যাস প্যারডাইসের জন্য তার এ সম্মাননা। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে তার নিজ দেশের অনেকেই আনন্দিত হলেও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই কি গুরনাহ তাদের নিজ সম্প্রদায়ের লেখক।
Advertisement
আফ্রিকান এ ঔপন্যাসিকের নোবেল পুরস্কার অর্জনে অনেক তানজানিয়ান তার কাজের প্রশংসা করলেও দেশটির অনেক নাগরিক মনে করেন, সত্যিই কি ইংল্যান্ডভিত্তিক এই সাহিত্যিক তাদের নিজস্ব সাহিত্যের ধারক-বাহক।
আব্দুলরাজাক গুরনাহর প্রকাশিত ১০টি উপন্যাসে উপনিবেশিত মানুষের বস্তুনিষ্ঠ চিত্র অঙ্কিত হয়েছে, যিনি ১৯৬৭ সালে তার জন্মভিটা তানজানিয়ার জাঞ্জিবার ত্যাগ করে শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্যে যান।
তিনিই প্রথম উত্তর-উপনিবেশবাদী কথাসাহিত্যিক যাকে সুইডিশ একাডেমি নোবেল পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করলো। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) সুইডিস একাডেমি ঔপনিবেশিকতার দুর্দশা ও শরণার্থীদের কষ্টের গল্প চিত্রায়িত করায় এ পুরস্কার গেলো ৭৩ বছর বয়সী এ লেখকের ঘরে। নোবেল ঘোষণার পর তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত জাঞ্জিবারের মানুষ গুরনাহর কৃতিত্বের প্রশংসা করেন।
Advertisement
তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান এক টুইট বার্তায় বলেন, এই পুরস্কার আপনার জন্য, এমনকী আফ্রিকা ও আমাদের তানজানিয়ার জন্য সম্মানের।
জাঞ্জিবার নেতা হুসেইন আলি মউইনি বলেন, উপনিবেশিকতা সর্ম্পকিত আপনার লেখাগুলো আমরা স্বীকার করি। এ ধরনের লেখা শুধু আমাদের জন্য নয়, পুরো মানবজাতির সম্মান বয়ে আনে।
তবে গুরনাহর জন্মস্থান জাঞ্জিবারের মানুষ এখনো অধিকারবঞ্চিত। দেশটির সমাজ বিজ্ঞানী আইকান্দে কোয়ু টুইটারে বলেন, আব্দুলরাজাকের পরিচয়ের বিষয়টি খোলাসা হওয়া দরকার। যেখানে আমাদের জন্য ন্যায়বিচার, দ্বৈত নাগরিক, ইউনিয়ন ইস্যু, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণগুলো মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে কীভাবে আমরা লেখালেখি বা সাহিত্য রচনা করবো?
দ্বৈত-নাগরিকত্ব একটি দীর্ঘ-বিতর্কিত সমস্যা তানজানিয়ায়। যেখানে তানজানীয়দের, বিশেষ করে প্রবাসীদের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের পক্ষে মত দেয় সরকার। যদিও ধারাবাহিকভাবে দেশটির সরকার সাংবিধানিক বিধিনিষেধের উদ্ধৃতি দিয়ে এটি থেকে সরে এসেছে।
Advertisement
এরিক কাবেন্দ্রা নামে একজন সাংবাদিক লিখেছেন, জাঞ্জিবারে আরবরা থাকতে আফ্রিকানদের সঙ্গে বিপ্লবের সময় আব্দুলরাজাক ও তার পিতামহ জন্মভিটা ছেড়ে চলে যান। তানজানিয়া তার দ্বৈত নাগরিকের বিষয়টি সে কারণে স্বীকার করে না, কারণ আবারও যদি সম্পদ ফিরে পেতে চায়! আমরা নির্লজ্জভাবে তার বিজয় উদযাপন করছি?
গুরনাহ এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার সঙ্গে তানজানিয়ার নাড়ির সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমার পরিবার এখনো সেখানে বেঁচে আছে। ইউনিভার্সিটি অব কেন্টের সাবেক এ অধ্যাপক বলেন, আমি সেখানে যখন ইচ্ছা যেতে পারি। আমার এখনো সেখানে যোগাযোগ রয়েছে, আমি সেখান থেকেই এসেছি। আমি মানসিকভাবে সেখানেই থাকি।
সূত্র: আল জাজিরা
এসএনআর/এএ/জেআইএম