খেলাধুলা

বিধ্বংসী রাসেল এবার জ্বলে উঠতে পারবেন?

আর পাঁচটা ক্যারবীয় ক্রিকেটারের মতো না তিনি। সব সময় হাসি-তামাশা, নাচ-গানে মত্ত থাকেন না আন্দ্রে রাসেল। তবে প্রাণচাঞ্চল্য ভরপুর তার মধ্যেও। আনন্দে-উৎফুল্লেও কখনো ভাটা পড়ে না। সেটা অবশ্য সব সময় পারফরম করার কারণে।

Advertisement

অলরাউন্ডার হওয়ার সুবাদে কখনো ব্যাটিংটা মনের মতো না হলেও, বল হাতে সেটা পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। আবার কোনোদিন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কায়দা করে ঘায়েল করতে না পারলে, ব্যাট হাতে ধারণ করেন রুদ্রমূর্তি। যার ঝাঁজে জ্বলে-পুড়ে খাক হয় অন্যপ্রান্ত থেকে বল ছোড়া বোলার।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের জন্ম যেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্যই। এর বৈশ্বিক আসরে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন তারা। আর সেটা সম্ভব হয়েছে এই রাসেলদের জন্যই। পাওয়ার-হিটিংয়ে দর্শকদের মনে এমনিতেই আনন্দের ফোয়ারা ছুটিয়ে দেন তারা। তাতে লাভ হয় দলেরও।

এবার অবশ্য অন্যসব ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারের মতো নয়, দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলাদা নজরে থাকবেন রাসেল। বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে যে কোনো খেলোয়াড়ের চাহিদা আকাশচুম্বী। তেমনই একজন হলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল।

Advertisement

পূর্বের তুলনায় বেশি সাম্প্রতিক সময়ে আরও বেশি ব্যাট হাতে নিজের অভূতপূর্ব উন্নতি করেছেন। চাইলেই এখন যেন বাঘা বাঘা বোলারদের বল উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করতে পারেন। তৃতীয়বারের মতো বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ রাসেলের কাছ থেকে তেমন কিছুই চায়।

জ্যামাইকান এই অলরাউন্ডার ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে এখনও পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন মাত্র একটি। ওয়ানডে ৫৬টি। এই দুই ফরম্যাটের চেয়ে টি-টোয়েন্টিতেই বেশি সপ্রতিভ রাসেল। সেটা হোক ‘মাসল-পাওয়ার’ কিংবা এই ফরম্যাটের সঙ্গে একেবারে আত্মার সম্পর্ক গড়ে তোলায়।

এই ফরম্যাটে রাসেল কতটা বিধ্বংসী হতে পারেন, অল্প কয়েকটা রেকর্ডই তার স্বপক্ষে কথা বলবে। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়র লিগে (সিপিএল) দ্রুততম ফিফটির মালিক তিনি। মাত্র ১৪ বলে সেই রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। এ ছাড়াও এই আসরে এক ম্যাচ সেঞ্চুরি ছাড়াও তিনি কীর্তি গড়েছিলেন হ্যাটট্রিক তুলে নেয়ার। বিশ্বের মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এমন মাইলফলক স্পর্শ করে রাসেল এখন বিশ্ব টি-টোয়েন্টির সর্বকালের সেরাদের একজন বলে বিবেচিত হন।

ওয়ানডে ক্রিকেটে ৯ম নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের মালিক আন্দ্রে রাসেল। ২০১১ সালে ভারতের বিপক্ষে ৬৪ বলে ৯২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন রাসেল।৮টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছক্কার মার মারেন ৫টি। শুধু তাই নয়, ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটের অধিকারী ব্যাটসম্যানটির নামও আন্দ্রে রাসেল। ২০১১ সালে অভিষেক হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ৫৬টি ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ ১৩০.২২ স্ট্রাইকরেটে ১০৩৪ রান করেছেন তিনি।

Advertisement

তবে টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাইক রেটে তিনি শীর্ষে থাকতে পারেননি। যদিও রয়েছেন শীর্ষ দশে। ৬২ ম্যাচে ১৫৬.৩৩ স্ট্রাইক রেটে ৭১৬ রান নিয়ে তিনি ৭ম স্থানে। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৭ বার শূন্য রানেও আউট হয়েছিলেন তিনি। যা তাকে ১০ নম্বরে ঠাঁই করে দিয়েছে। এমনকি বোলার হিসেবেও তার ইকনোমি রেট খুব বাজে। ৯.১৮ ইকনোমি রেট তার। যদিও এই স্থানে শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশের রুবেল হোসেন ৯.৪৫ করে ইকনোমি রেট রুবেলের।

সবধরনের টুর্নামেন্ট মিলিয়ে সাড়ে তিনশর বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন রাসেল। তার সে অভিজ্ঞতাই এবার কাজে লাগাতে চায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। ইনিংসের শেষের দিকে ব্যাট হাতে ঝড় তোলা কিংবা বল হাতে ডেথ ওভারে বাউন্সার কিংবা নিখুঁত ইয়র্কারে ব্যাটসম্যানদের পরাস্ত করা- দু’দিকেই পটু তিনি। ক্যারিবীয দলে ডোয়াইন ব্রাভো, কাইরন পোলার্ডের মতো অলরাউন্ডার থাকলেও বলাই বাহুল্য, এবারের বিশ্বকাপে কি-ফ্যাক্টর হতে যাচ্ছেন রাসেল।

আগের বিশ্বকাপগুলোতে রাসেলের পারফরম্যান্স ছিল বড়ই খাপছাড়া। যা তার নামের পাশে একদমই শোভা পায় না। দুটি বিশ্বকাপ খেলে ১৭ ম্যাচে তার নামের পাশে মাত্র ১৩৩ রান। উইকেট সংখ্যা ১৫টি। সেই খেদ মেটানোর বড় সুযোগ এবার তার সামনে, যখন তিনি আছেন ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে।

সেরা সময়টাকে কাজে লাগিয়ে রাসেল নিজেও ক্যারিবিয়ানদের হয়ে জ্বলে উঠতে চাইবেন। যার ফলে, টি-টোয়েন্টি রাজাদের আরও একবার বিশ্বজয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে।

এসএস/আইএইচএস/