জাতীয়

দর্শনার্থীর চাপে ‘পুরোনো রূপে’ চিড়িয়াখানা

করোনার প্রকোপ কমে আসায় আগস্টের শেষে খুলে দেওয়া হয় চিড়িয়াখানার দুয়ার। দীর্ঘ সাড়ে চার মাস বন্ধ থাকার পর গত ২৭ আগস্ট চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, সেদিন ছিল স্বাস্থ্য সুরক্ষার সব আয়োজন। মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করে ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ করেই কেবল প্রাণীদের খাঁচার কাছে যেতে পেরেছেন দর্শনার্থীরা।

Advertisement

ভেতরে-বাইরে হকারমুক্ত পরিবেশ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মুগ্ধ করেছে অতিথিদের। তবে একমাস না যেতেই পুরোনো রূপে ফিরতে শুরু করেছে চিড়িয়াখানা। আবর্জনা, হকারদের দৌরাত্ম্য আর স্বাস্থ্যবিধির লঙ্ঘন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিনোদন স্পটটিতে।

যদিও পরিচালক বলছেন, দর্শনার্থী বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প জনবল দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দর্শনার্থীদের ওপর দায় চাপিয়ে তিনি বলেন, আগে সচেতন হবে বিনোদন-প্রেমীদের।

শুক্রবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে চিড়িয়াখানা ঘুরে নানা অব্যবস্থাপনার চিত্র চোখে পড়ে। প্রবেশপথে সামাজিক দূরত্ব না মেনে মানুষের জটলার পাশাপাশি মাস্ক ছাড়া অনেককেই চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। অথচ চিড়িয়াখানার ফটকে লেখা ছিল নো মাস্ক, নো সার্ভিস। এমনকি যারা টিকেট দেখে প্রবেশ করাচ্ছেন তাদেরও কারো মুখে মাস্ক ছিল না।

Advertisement

জানা যায়, জ্বর মাপা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার বিনোদনকেন্দ্রটি খোলার পরদিন থেকেই উঠে গেছে। এ বিষয়ে টিকেট কাউন্টারের পাশে যারা টিকেট চেক করছেন তাদের মধ্যে একজন জানান, প্রথম দিকে মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। ধীরে ধীরে সেটা শিথিল হয়ে গেছে। তবুও তারা দর্শনার্থীদের মাস্ক নিয়ে প্রবেশ করতে বলেন।

চিড়িয়াখানার ভেতরে বাইরের খাবার নিয়ে প্রবেশ না করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেটা অমান্য করে কয়েকজনকে টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়। উত্তরা থেকে আসা রিয়াজুল বাসা থেকে খাবার এনেছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এখানে খাবারের দাম অনেক বেশি। আমরা পাঁচজন এসেছি। খাবার কিনে খেলে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাবে।

চিড়িয়াখানার প্রাণীদের উত্যক্ত না করতে ও বাদামসহ অন্যান্য খাবার না ছুড়তে বারবার মাইকিং করা হলেও বানর, হরিণ এমনকি বাঘের খাঁচায়ও দর্শনার্থীদের বাদাম, চিপস, শসা ও আমড়া ছুঁড়তে দেখা যায়।

চিড়িয়াখানার ভেতরে গোটাপাঁচেক হকারকে আমড়া, আইসক্রিম বিক্রি করতে দেখা গেছে। আমড়া বিক্রেতা সৌরভ জানান, ম্যানেজ করেই তারা ভেতরে বিক্রি করছেন। তবে পরিচালকসহ চিড়িয়াখানার ঊর্ধ্বতনরা ধরে প্রায়ই তাদের সব খাবার ফেলে দেন। চিপস, পানির বোতলসহ আবর্জনা লেকসহ বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এসময় কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মীর দেখা মেলেনি।

Advertisement

ব্যাংককর্মী মিনহাজ বলেন, প্রাণী আগের থেকে কমে গেছে। অনেক প্রাণী নেই। তবে আগের তুলনায় চিড়িয়াখানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়েছে। এছাড়া হকারদের উৎপাতও কমেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি তার।

চিড়িয়াখানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিনই ৭ থেকে ১০ হাজার দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করেন। আর ছুটির দিন ও শুক্রবার এই সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। সীমিত জনবল দিয়ে এত মানুষকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখা কঠিন বলে মত তাদের।

শুক্রবার চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতিফ জাগো নিউজকে বলেন, আজ দর্শনার্থী বেশি। ৩০ থেকে ২৫ হাজার দর্শনার্থী এসেছে আজ।

নড়বড়ে স্বাস্থ্যবিধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা একটু রিল্যাক্স হয়েছে। সব জায়গায়, শুধু চিড়িয়াখানায় হয়নি। আপনি মার্কেটে দেখেন, এখন আর ওই জিনিসগুলো মানুষ কেয়ার করতে চায় না। আমাদের তো চেষ্টার কমতি নেই।

তিনি বলেন, প্রতি ১৫ মিনিট পরপর আমরা মাইকিং করছি। আমার মোবাইল টিম ঘুরছে। আমি ডাস্টবিন দিয়েছি, তারপরও মানুষ যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। কিন্তু মানুষ কেন যেন একটা অবহেলা করে সবকিছুতে। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার একটা প্রবণতা রয়েছে।

হকারদের বিষয়ে তিনি বলেন, বাইরে পরিষ্কার করেছি। আজ আমি নিজেই চারজন হকারকে আইসক্রিম-বাদামসহ ধরেছি। আরও টিম ঘুরছে। বড় এরিয়া, অনেক মানুষ কন্ট্রোল করা একটু সমস্যা হয়ে পড়েছে। আমি কন্ট্রোল করতে পারছি না, তার চেষ্টার কমতি নেই বলে জানান তিনি।

জনবল সংকট রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জনবল যা দরকার তার চেয়ে অনেক কম আছে। ৩০ শতাংশ জনবল কম আছে। এসব ঠিক হলে সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবো বলে আশ্বাস দেন তিনি।

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির মোট ৪৬২টি পদের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির জনবল আছে ২৭০ জন। ১৯৭৪ সালে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এই বিনোদনকেন্দ্রটি। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় প্রাণী, পাখি ও অ্যাকুরিয়াম ফিশ সব মিলিয়ে তিন হাজার ১৩০টি প্রাণী রয়েছে।

এসএম/এআরএ/এএসএম