দেশজুড়ে

যশোরে তুলা চাষে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

বিলিয়ন ডলারের তুলার আমদানি নির্ভরতা কমাতে পারেন এদেশের তুলা চাষিরা। দেশে তুলা ঘাটতি ও আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে তুলা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার বিকল্প নেই। চলতি আবাদ মৌসুমে যশোরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে তুলা চাষের সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের হাতছানি দিচ্ছে। দেশের বস্ত্র খাতের অন্যতম কাঁচামাল তুলার চাহিদা প্রায় ৫৫ লাখ বেল। যার সিংহভাগ আমদানি নির্ভর। ভারত ও পাকিস্তান আমাদের দেশে তুলার প্রধান যোগানদাতা। সারাদেশে তুলা উৎপন্ন হয় দেড় থেকে পৌনে দুই লাখ বেল। কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, আগামী ৫ বছরে ১০ লাখ বেল তুলা উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এতে বস্ত্র খাতে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ঘটবে। আমদানিকৃত এই বিপুল পরিমাণ তুলার বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার) গুণতে হয় মিলিয়ন ডলার। তুলার উৎপাদন বাড়ানো গেলে বিলিয়ন ডলারের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা অসম্ভব নয়। আমদানিকৃত তুলার বাংলাদেশি টাকার অঙ্কে দাঁড়ায় প্রায় ১০ হাজার ৮শ` ৯০ কোটি টাকা। গোটা দেশে মোট তুলার উৎপাদন হয় পৌনে ২ লাখ বেল। এ বছর ৩ হাজার ৫শ` হেক্টর জমিতে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে ২ হাজার ৯শ` ৬০ হেক্টর জমিতে তুলা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত। কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের দাবি, এ বছর উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) তুলার ফলন প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি হতে যাচ্ছে। যা আগামী দেড় দু’মাসের মাথায় কৃষক তার উৎপাদিত কাঙ্খিত তুলা ঘরে তুলতে পারবেন। বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য মিলেছে।জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর জোনের আওতাধীনে ২১টি ইউনিটে প্রায় ১৩ হাজার কৃষক এবার তুলার আবাদ করেছেন। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা ড. আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, তুলার উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের নানাভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ‘মাঠ দিবস’ পালনসহ মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত তদারকি ছাড়াও মানসম্মত তুলা উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তুলা প্রদর্শনী প্লটগুলোতে বিনামূল্যে সার, সেচ, কীটনাশকসহ বিভিন্ন প্রকারের কৃষি উপকরণ ও সহজ শর্তে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এ বছর যশোরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে তুলা চাষের নতুন দিগন্তের সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে। সেই আশির দশকের তুলা চাষের যুগ ফিরে আসছে সম্ভাবনার তুলা উৎপাদন খাত। কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন বিশেষ করে বস্ত্রশিল্পের অন্যতম কাঁচামাল তুলার যোগানদাতা হতে পারেন এই অঞ্চলের কৃষক। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে তুলা আমদানির নির্ভরতা বহুলাংশে কমে আসবে বলে জানান অনেকে। শুধু দরকার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রদান, কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করাসহ উৎপাদিত তুলার কৃষকের ন্যায্যমূল্যের নিশ্চিত করা। এমনটাই জানালেন তুলাচাষের সাথে জড়িত কৃষক এবং তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য মতে, এ বছর যশোর জোনের ২১টি ইউনিটের অধীনে বিপুল পরিমাণ জমি তুলা চাষের আওতায় এসেছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন, যশোরের ঝিকরগাছা ১ ও ২ সম্প্রসারণ ইউনিট, শার্শা, উলাশি, বাঁকড়া, মণিরামপুর, রাজগঞ্জ ও ঝাপা কোমলপুর, কেশবপুর, চুকনগর, ছাতিয়ানতলা, খাজুরা, বাঘারপাড়া, গোপালগঞ্জ, কাশিয়ানি, ঝালকাঠি, নারকেলবাড়িয়া, চৌগাছা, হাকিমপুর, ঝিনাইদহ, বারবাজার, কালিগঞ্জ ও ফুলতলা, খুলনা অঞ্চলের তুলাচাষের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি বিঘাতে ১৮ থেকে ২০ মণ। যা সরকার নির্ধারিত সম্ভাব্য ক্রয়মূল্য প্রতি ৪০ কেজি বা এক মণ ২ হাজার টাকা। প্রতি ৪০ কেজি সাধারণ তুলা (বীজসহ) ১৯শ` ২০ টাকা। কৃষকের উৎপাদন ব্যয় হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ঝিকরগাছা উপজেলা ইউনিটের কটন ইউনিট অফিসার মোস্তফা আবুল বাশার ও সহকারী কটন ইউনিট অফিসার বিধান চন্দ্র সরকার দাবি করেছেন, তারা নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে তুলা ক্ষেত পরিদর্শন ও কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কর্মকর্তাদের দাবি সারাদেশে ১০ থেকে ১৫টি জিনিং ফ্যাক্টরিতে তুলার মজুদ রয়েছে। সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার প্রতিটি তুলা গাছের শাখা-প্রশাখায় ২০/২৫ বা ততধিক বীজতুলার গুটি বেধেছে। গুটির ভারে ন্যুয়ে পড়েছে কিছু কিছু তুলা গাছ। মো. জামাল হোসেন/এমজেড/এমএস

Advertisement