প্রাণঘাতী করোনার প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত রেমিট্যান্সের ওপর। বিশ্বের ৩০টি দেশ থেকে রেমিট্যান্স আসা দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া ছিল ৫ম স্থানে। মালয়েশিয়া থেকে বৈধপথে ২০২০-২১ অর্থ বছরে দেশে এসেছে ২ হাজার ২ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ৭ মে নেমে এসেছে মালয়েশিয়া। চলতি বছরের জুলাই মাসে ১১০.৭০ মিলিয়ন, আগস্টে ৯৬.২৪ মিলিয়ন, সেপ্টেম্বরে ৮৩.৮৪ মিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরে গড়ে পাঠানো রেমিট্যান্সের তুলনায় ৪২ শতাংশ কমেছে।
Advertisement
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অগ্রণী রেমিট্যান্স হাইসের মাধ্যমে প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠিয়েছেন, ২৬০.১১ কোটি টাকা। চলতি মাসের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স গেছে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা।
অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউসের চিফ এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা ও ডিরেক্টর খালেদ মোর্শেদ রিজভী বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে গত অর্থবছরের তুলনায় বর্তমান অর্থ বছরে ৪২ শতাংশ নেমে এসেছে। মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেগারার নির্দেশে গত বছরের ৪ মে থেকে সবকটি রেমিট্যান্স হাউস খুলে দেওয়া হলেও করোনায় রেমিট্যান্স খাতে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে সেটা কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে আগামী ৬ মাসের মধ্যে বিপর্যয় পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে করোনার কারণে কঠিন চ্যালেঞ্জে রয়েছেন মালয়েশিয়া প্রবাসীরা। এ কষ্টের কথা বলতেও পারছেন না কাউকে। এছাড়া তাদের উপার্জনের ওপর নির্ভর করে চলে দেশে থাকা পরিবার। দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকা প্রবাসীরা দেশটিতে শিথিলতা আসার পর কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়েছেন, প্রাণঘাতী করোনায় লন্ডভন্ড করে দেওয়া প্রবাসীদের আশা আকাঙ্ক্ষা হয়তবা কিছুটা লাঘব হবে মনে করছেন তারা।
Advertisement
সিলেটের আবুল মিয়া, চার বছর ধরে মালয়েশিয়ায় থাকেন। একটি কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ করেন। গত বছরের মার্চ থেকে কাজ বন্ধ ছিল। চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে কাজে যোগ দিয়েছেন।
আবুল বলেন, দেশে পরিবার রয়েছে তাদের খরচ পাঠানো দরকার। কিন্তু দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় দেশে টাকা পাঠাতে পারিনি। এখন কাজ করছি হয়তোবা আগামী মাসে বেতন পেলে দেশে টাকা পাঠাতে পারব। খোকন কাজ করেন কনস্ট্রাকশনে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ঘোষণা অনুযায়ী প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ চ্যানেলে পাঠানো রেমিট্যান্সের বিপরীতে ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মালয়েশিয়াস্থ অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ও ডাইরেক্টর খালেদ মোর্শেদ রিজভী।
তিনি বলেন, সরকার রেমিট্যান্সকে বৈধ চ্যানেলে আনার জন্য উৎসাহ দিতে ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল বাজেটে। তবে সিস্টেম ডেভেলপ করার জন্য এটার বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লেগেছিল। সবাইকে (রেমিট্যান্স প্রেরণ ও গ্রহণকারী) এই মুহূর্তে কেউ ব্যাংকে গেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন এবং ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা পাচ্ছেন।
Advertisement
অর্থাৎ ১ হাজার টাকা পাঠালে দেশে তার অ্যাকাউন্টে যোগ হবে ১ হাজার ২০ টাকা, লাখে ২ হাজার টাকা।
এদিকে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনবি এল মানি ট্রান্সফার থেকে ৮৬২ কোটি টাকা প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বর্তমানে চলমান করোনার কারণে প্রবাসীরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ রেমিট্যান্স কমে আসছে বলে জানালেন, এন বি এল মানি ট্রান্সফার মালয়েশিয়ার সিস্টেম অ্যানালিস্ট ম্যানেজার, এম.ডি. শামছুদ্দিন এনাম।
তিনি বলছেন, করোনার কারণে রেমিট্যান্স পাঠানোতে যে ক্ষতিসাধন হয়েছে সেটি পুষিয়ে উঠতে কমপক্ষে ৬ মাস সময় লাগবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হলে বিদেশে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা।
এমআরএম/জেআইএম