টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে দেওহাটা-ধানতারা আঞ্চলিক সড়কের বেহাল দশা। বেশিরভাগ অংশে নেই কার্পেটিং। সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্তের। বৃষ্টি হলেই ওইসব গর্তে পানি জমে। বিকল্প না থাকায় সড়কটি দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল কতে হচ্ছে যানবাহন ও পথচারীদের।
Advertisement
উপজেলা প্রকৌশল অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা যাওয়ার অন্যতম সড়ক দেওহাটা-ধানতারা আঞ্চলিক সড়ক। এ সড়কটি মির্জাপুর উপজেলার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ধামরাই, মানিকগঞ্জ, সাভার, সাটুরিয়া, ঢাকা ও কালিয়াকৈরের কয়েকটি ইউনিয়নে যোগাযোগের সহজ মাধ্যম। প্রতিদিন কয়েকশ যানবাহন ও হাজারো মানুষ এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে থাকে।
মির্জাপুর এলজিইডি অফিস ২০১৮ সালে দেওহাটা থেকে চান্দুলিয়া আলহাজ শিল্পপতি নুরুল ইসলাম ব্রিজ পর্যন্ত সোয়া ৪ কিলোমিটার সড়কটি সংস্কার করে। টাঙ্গাইলের আর এস এন্টারপ্রাইজ টেন্ডারের মাধ্যমে ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটির সংস্কার বাস্তবায়ন করে।
সংস্কারের ১৫ দিনের মধ্যেই এলাকাবাসী হাত দিয়ে কার্পেটিং টেনে তোলেন। এছাড়া কাজের মান নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ করেন তারা।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেওহাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে শিল্পপতি নুরুল ইসলাম সেতু পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে ২০টি ইটভাটা। ওইসব ভাটায় মাটি, কয়লা, কাঠ ও ইট বহনে প্রতিদিন কয়েকশ ভারী যানবাহন চলাচল করছে। এতে সড়কের ইট, পিচ ও খোয়া উঠে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই পাকা সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, সড়কের গর্তে পড়ে প্রতিদিন একাধিক যান বিকল হচ্ছে। এছাড়া পথচারীদের চলাচলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে, বহুরিয়া ইউনিয়নের গেড়ামাড়া এলাকায় ২০১৮ সালে বন্যার পানিতে সড়কের ২৩০ ফুট অংশ ভেঙে যায়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন বরাদ্দ দিয়ে ভাঙা রাস্তার মাটি ভরাট করান। কিন্তু গত বছরের বন্যায় পানির স্রোতে সড়কটির ওই জায়গায় আবারো ভেঙে যায়। এতে বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল।
মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে বহুরিয়া ইউপির পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সামাদ দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ করে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। সাঁকোটি ভেঙে বর্তমানে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন কয়েকশ চলাচল করছে। রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় দক্ষিণ মির্জাপুরসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহনের সরাসরি চলাচলও বন্ধ রয়েছে। সেখানে সেতু না হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
Advertisement
সড়কটি দিয়ে ইউপি কার্যালয়, গেড়ামাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, গেড়ামাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, গেড়ামাড়া বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শিক্ষার্থীসহ ইউনিয়নবাসী চলাচল করে থাকে। এতে দক্ষিণ মির্জাপুরে ফসলি জমিতে উৎপাদিত ধান, পাট, সরিষা, আখ, গম ও সবজিসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল বিক্রিতে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক।
কদিম দেওহাটা গ্রামের সঞ্জিত, ছবুর মিয়া, ফিরোজ আল মামুন, আব্দুল কাদের, বান্দু মিয়া জানান, সড়কটি ব্যস্ততম। সময় বাঁচাতে ও দুর্ঘটনা এড়াতে ঢাকা, ধামরাই, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ, কালিয়াকৈর ও মির্জাপুরের লোকজন এই সড়কটি ব্যবহার করে থাকেন। তিন বছর আগে সড়কটি নির্মাণ করা হলেও নিন্মমানের কাজ হওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছিল। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে সড়ক দিয়ে ভাটার মালিকরা ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি নেওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
.
ওই সড়কে নিয়মিত চলাচলরত যানবাহনের চালক শওকত হোসেন, আরজু মিয়া, মফিজ উদ্দিন জানান, দেখে বুঝার উপায় নেই যে সড়কটি কখনো কার্পেটিং করা হয়েছিল। ঝুঁকি নিয়ে যান চালাতে হচ্ছে। সড়কটি দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী ধামরাই উপজেলার যাদবপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, ধামরাইয়ের যাদবপুর, বাইশাকান্দা, কুশুরিয়া, বাইল্যা, চৌহাট, সুতিপাড়া ও কালিয়াকৈর উপজেলার ডালজোড়া ও আটবহর ইউনিয়নের লোকজন এই সড়ক ব্যবহার করে থাকেন। ওইসব ইউনিয়নের মানুষ চিকিৎসাসেবা নিয়ে বিশেষ করে কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়মিত আসেন। তাদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মির্জাপুরের কয়েকজন ঠিকাদার বলেন, সড়কটিতে ৮/১০ টনের যানবাহন চলাচলের উপযোগী। সেখানে ২০/২৫ টনের যানবাহন চলাচল করছে। সড়কটি দিয়ে ২০টি ভাটা ও একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভারী ট্রাক চলাচল করে থাকে। এছাড়া প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে মাটি ভর্তি কয়েকশ বড় ড্রাম ট্রাক ভাটায় চলাচল করে। এ কারণে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রশস্ত ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে এবং বিশ্বব্যাংকের ব্রিজ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে তথ্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গেড়ামাড়া গ্রামের ওই স্থানে ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে টেন্ডার হবে।
এস এম এরশাদ/এসজে/এএসএম