বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার তুষখালী সীমান্ত থেকে উদ্ধার মহাবিপন্ন প্রাণী দুটি পাটাগোনিয়ান মারাকে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) রাতে প্রাণী দুটি পার্কে হস্তান্তর করা হয়।
Advertisement
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক সূত্র জানায়, ভারতে পাচারের সময় গত ৩ মার্চ তুষখালী সীমান্ত থেকে সাতটি পাটাগোনিয়ান মারা উদ্ধার করে বিজিবি। মাঝারি গড়নের এ প্রাণীটি আসলে পাটাগোনিয়ান মারা কি না তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন বিজিবি সদস্যরা। অনেকেই ভেবেছিলেন এটি বন্য খরগোশ। সাড়ে পাঁচমাস প্রাণীগুলো ছিল বিজিবির তত্ত্বাবধানে। গত ২২ আগস্ট তারা প্রাণীগুলো বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন। তখনই জানা যায় প্রাণীগুলো পাটাগোনিয়ান মারা।
পাটাগোনিয়ান মারা আর্জেন্টিনার প্রাণী। বৈশ্বিক তালিকায় এরা মহাবিপন্ন। এদের চোখ দুটি দেখতে হরিণের মতো। আর কান খরগোশের মতো।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, বিজিবি সাতটি পাটাগোনিয়ান মারা উদ্ধার করলেও তাদের কাছে থাকার পর একটি মারা যায়। পরে ছয়টি পাটাগোনিয়ান তারা বুঝে পান। এ সময় এ প্রাণীগুলোকে বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হলে গত ৩১ আগস্ট সেখানে একটি নতুন অতিথির জন্ম হয়। পরে একে একে পাচটি প্রাণীই মারা যায়। অবশিষ্ট দুটি প্রাণীকে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়।
Advertisement
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন হাতেম সাজ্জাদ মোহাম্মদ জুলকারনাইন প্রথমে দেশে এ প্রাণীটি শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, খরগোশ বা গিনিপিগ গোত্রীয় পাটাগোনিয়ান মারা স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা তৃণভোজী। এদের সামনের পায়ের তুলনায় পেছনের পা দুটো বেশ দীর্ঘ। গায়ের রং সাধারণত বাদামি। তবে মাঝে মধ্যে কালোর মিশেলেও দেখা যায়। এরা হাঁটাহাঁটি করে চলাচল করলেও সুযোগ পেলে খরগোশ বা ক্যাঙারুর মতো লাফালাফি করে। বছরে এক থেকে দুইবার বাচ্চা প্রসব করে। আকারের দিক দিয়ে সাধারণত ২৭ ইঞ্চি দীর্ঘ হয়। ওজনে ৮ থেকে ১৬ কেজি পর্যন্ত হয়। আয়ু ১৪ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, উদ্ধারের পর প্রাণীগুলোর ওপর বেশ ধকল গেছে। মূলত এ কারণেই ছয়টি প্রাণী মারা গেছে। সঠিক পরিচর্যা পেলে আমাদের পরিবেশেও এদের টিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েরছ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাতে দুটি পাটাগোনিয়ান মারা সাফারি পার্কে দেওয়া হয়। পরে তাদের বসবাসের উপযোগী বেষ্টনী তৈরি করে সেখানে তাদের রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এদের লিঙ্গ এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। তবে প্রাণীগুলো সুস্থ রয়েছে। তারা স্বাভাবিক খাবারও খাচ্ছে।
Advertisement
এসআর/জিকেএস