রাজনীতি

পৌর নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি খালেদার

প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে যে পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।‘নির্বাসিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সাহসী মানুষের ঐক্য ও আন্দোলনের বিকল্প নেই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া বলেন, ‘প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে। এ নির্বাচন নিয়ে সরকার নতুন ফন্দি এটেছে। এনিয়ে তাদের গভীর ষড়যন্ত্র আছে।’ তারা দেখাতে চায় ধানের শীষের পক্ষে জনগণ নেই। সব নৌকাতে। কিন্তু নৌকা যে ডুবতে বসেছে তা তারা ভুলে গেছে। নৌকার মধ্যে কত গণ্ডগোল।’তিনি বলেন, ‘আমি বলে দিতে পারি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির ৮০ ভাগ প্রার্থী জয়লাভ করবে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না।’খালেদা জিয়া বলেন, ‘হাসিনা নিজে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করেছে। কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, বোবা হয়েছে।’তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। কিন্তু হাসিনা সেনা মোতায়েন করবে না। এছাড়া পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে রূপান্তরিত করেছে।’‘ক্ষমতাসীনদের দেশের প্রতি মায়া নেই। দেশের প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই তাদের।’-যোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।তিনি বলেন, ‘তারা কখনও স্বাধীনতা চায়নি। তারা ক্ষমতা চেয়েছে সবসময়। তারা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলো। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না।মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে উল্লেখ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একে খন্দকার বইয়ে সত্য কথা লিখেছে তা প্রত্যাহার না করায় তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’তিনি অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করেনি। চাটুকারদের জন্য শেখ সাহেব মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনতে পারেনি।’বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ভালোভাবে বিশ্লেষণ না করলে বোঝা যাবে না তারা কত নোংড়া আর হিংস্র।’রাজকারদের মন্ত্রী বানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী বিএনপির প্রতি যে অভিযোগ করেছেন তা অস্বীকার না করলেও এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া।তিনি বলেন, ‘ সত্যিকারের রাজাকারদের বিচার চাই, তবে সে বিচার হতে হবে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের।’ তাদের ঘরে যুদ্ধাপরাধী পালছে। তাদের ঘরে যুদ্ধাপরাধী রয়েছে। আরো বড় অপরাধী রয়েছে। সরিষা বাড়ির নুরুল ইসলাম রাজাকার তাকে মন্ত্রী বানানো হয়েছে। আরো অনেকে আছে। শুধু বিএনপিকে বলা হয়। ভুলে যান নাকি মুছে দিতে চান। জনগণ এসব ভুলেনি।’ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘বিএনপি এবং আমার ওপর জুলুম অত্যাচার করা হয়েছে। তাদেরকে কি অবস্থা করেছে আপনারা দেখেছেন। এখনো তাদের চিকিৎসা চলছে। লন্ডনে সপ্তাহে ২ বার ডাক্তার দেখাতে হয়।’খালেদা জিয়ার মা মারা যাওয়ার ৭দিন আগে তারেক রহমান এবং কোকোর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলো। কিন্তু দেখা করতে দেয়া হয়নি বলেও জানান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও পরবর্তীতে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নেয়ার ব্যাখা দেন বিএনপি প্রধান।তিনি বলেন, ‘আমরা পরবর্তী নির্বাচনে গিয়েছি কারণ এগুলো স্থানীয় নির্বাচন স্থানীয় নির্বাচনে সবার মাঝে একটা আমেজ থাকে।’২০ দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।পাট, বস্ত্র, টেক্সটাইল শিল্পে ধ্বংসের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে খালেদা জিয়া তার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন।তিনি বলেন, স্বপ্নের পদ্মাসেতু স্বপ্নই থেকে যাবে। আমরা এসে ২টি সেতু করব। ’বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘হাসিনার হাতে রক্ত, রক্ত আর রক্ত। আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি। আল্লাহ আমাদের সহযোগিতা করবে। আমাদেরও চেষ্টা করতে হবে। মা-বোনসহ কোনো স্তরের মানুষ ভালো নেই। আসুন আমরা আরেক বার জেগে উঠি।’মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অ্যাডভোকেট শিরিন সুলতানা, শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।এর আগে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধাদের এ সভায় উপস্থিত হন খালেদা জিয়া। ডায়াসে আসন গ্রহণ করার পর মুক্তিযোদ্ধা দলের পক্ষ থেকে তাকে ক্রেস্ট দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের পক্ষ থেকে জানানো হয় ফুলেল শুভেচ্ছা।এমএম/একে/আরআইপি

Advertisement