পানামা পেপারসের পর এবার আলোচনায় এসেছে প্যানডোরা পেপারস। এ যাবৎকালের অন্যতম বৃহৎ এই আর্থিক দলিল ফাঁসের ঘটনায় এখন তোলপাড় বিশ্ব। হবেই বা না কেন? একের পর এক বিশ্বের বড় বড় নেতা, রাজনীতিবিদ ও ধনকুবেরদের গোপন সম্পদ ও লেনদেনের তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
Advertisement
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চেক প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেই বাবিস, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ বহু নেতার গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস হয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন আল হুসেইন ৭ কোটি পাউণ্ড (১০ কোটি ডলার) ব্যয় করে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে বিরাট সাম্রাজ্যের মালিক হয়েছেন।
তবে জর্ডানের বাদশাহ’র আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তার জমি এবং বাড়িগুলো ব্যক্তিগত অর্থ ব্যয় করেই কেনা। নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থেই এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্পত্তি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়। এটা অনৈতিক নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
Advertisement
গত সাত বছরে প্যারাডাইস পেপারস, পানামা পেপারস ইত্যাদি নামে যেসব গোপন দলিলপত্র ফাঁস হয়েছে প্যানডোরা পেপারস হচ্ছে এর মধ্যে সর্বশেষ ঘটনা। বিবিসি প্যানোরামা, ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এবং আরও কিছু মিডিয়া অংশীদার মিলে বিশ্বের ১৪টি কোম্পানির ১ কোটি ২০ লাখ দলিলপত্র হাতে পেয়েছে। এই দলিলপত্র উদঘাটন করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)। ৬ শতাধিক সাংবাদিক এবং দেড় শতাধিক মিডিয়া আউটলেটের দুই বছরের প্রচেষ্টায় এসব গোপন নথি হাতে এসেছে।
গোপন মালিকানাধীন সংস্থাগুলোর একটি নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এটি ব্যবহার করেই ১৫টি বাড়ি কিনেছেন বাদশাহ আবদুল্লাহ। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের মালিবু এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডন ও অ্যাসকট শহরে বেশ কিছু বাড়ির মালিক হয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর আন্তর্জাতিক সহায়তা পেয়ে থাকে জর্ডান। দেশটিতে আর্থিক সহায়তা দেওয়া অন্যতম দেশ হিসেবে বিবেচিত যুক্তরাজ্য। ২০১৯ সালে দেশটি তাদের সহায়তা দ্বিগুণ করেছে। বাদশাহ আবদুল্লাহ’কে মধ্যপ্রাচ্যে মধ্যপন্থী পশ্চিমা মিত্র হিসেবেই দেখা হয়। বিদেশি সহায়তা নিয়ে চলা একটি দেশের বাদশাহ বিদেশি কোটি কোটি ডলার অর্থ ব্যয় সম্পদ গড়েছেন।
২০০৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যেই মূলত তার এই বিশাল সম্পদ গড়ে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে জর্ডানে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। কঠোর ব্যবস্থা এবং কর বৃদ্ধির কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রতিবাদ করছে সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে বাদশাহ’র গোপন সম্পদের নথি ফাঁস হওয়ার ঘটনা জনমনে আরও ক্ষোভের জন্ম দিতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
Advertisement
গত বছরের জুনে অভিযান শুরু করে জর্ডান কর্তৃপক্ষ। সে সময় বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।
জর্ডানের রাজপরিবারের ওপর ক্ষুব্ধ এক ব্যক্তি জানান, বাদশাহ আবদুল্লাহ রিমোট কন্ট্রোলের মতো জর্ডান শাসন করছেন। এক প্রাক্তন সরকারি কর্মচারী প্যানোরামাকে জানিয়েছেন, বাদশাহ বছরে চার থেকে ছয় মাস দেশের বাইরেই থাকেন।
১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। তিনি সাবেক বাদশাহ হুসেইনের বড় ছেলে। ১৯৯৩ সালে রানিয়াকে বিয়ে করেন দ্বিতীয় আবদুল্লাহ।
২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসির ব্যয়বহুল অংশ জর্জটাউনে চারটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন বাদশাহ আবদুল্লাহ। এটা হতে পারে যে এক কোটি ৬০ লাখ ডলারের ওই সম্পদ হয়তো তার ছেলে ক্রাউন প্রিন্স হোসেইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কারণ সে সময় তিনি জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
শুধু মালিবুতেই নয়, প্যানডোরা পেপারস বলছে, গোপনে লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে বহু সম্পদের মালিক হয়েছেন বাদশাহ আবদুল্লাহ। এসব জায়গায় তার নামে প্রায় আটটি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চারটিই ব্যয়বহুল কেনসিংটন এবং বেলগ্রেভিয়ায়। অ্যাসকটেও তার দুটি বাড়ি আছে। অপরদিকে ওয়াশিংটন ডিসির জর্জটাউনে চারটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি।
টিটিএন/জেআইএম