মারায়ন তং মানেই মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া। আমরা তিন বন্ধু মিলে ঠিক করেছিলাম ব্যস্ত শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি নিয়ে একদিনের জন্য হারিয়ে যাবো মেঘের রাজ্যে।
Advertisement
ঢাকা থেকে রাতের বাসে রওনা দিলাম বান্দরবানের আলীকদমের উদ্দেশ্যে। সকালবেলা আলীকদমের বিখ্যাত ‘ইয়াছিন হোটেল’ এর সামনে বাস থেকে নেমে সেই হোটেলেই নাস্তা করে নিলাম।
নাস্তা শেষ করে আশেপাশের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখালেন ইমতিয়াজ নামের এক স্থানীয় শিশু। তার সঙ্গে বেশ সখ্যতা জমে গিয়েছিলো আমাদের সবার।
মারায়ন তং এর চূড়ায় রাত্রিযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলাম, দুপুরের পর থেকেই। বাজার করা, গাইড ঠিক করা এমনকি তাঁবু ঠিক করতে আমাদের সাহায্য করলেন ইয়াছিন মিয়া।
Advertisement
বারবিকিউ এর জন্য মুরগি, কাঠের গুঁড়া, তেল-মসলাসহ খাবার পানি নিয়ে আমরা রওনা দিলাম দুপুর ৩টার দিকে মারায়ন তং চূড়ার উদ্দেশ্যে।
পাহাড়ে উঠতে আমাদের সময় লেগেছিলো প্রায় দুই ঘণ্টা। এই সময়ের প্রতি মিনিটই ছিলো রোমাঞ্চকর ও বেশ কষ্টদায়ক। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬৬০ ফুট উচ্চতার এই পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে পার হতে হয়েছে ৫টি ট্রেইল।
সবচেয়ে খাড়া ট্রেইলটি ভূমি থেকে ৭২ ডিগ্রি কোণে চূড়ার দিকে চলে গিয়েছে। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছানোর আগেই আমরা আমাদের নিচে মেঘের দেখা পেয়েছিলাম। চূড়ায় পৌঁছানোর পর আমাদের সব কষ্ট নিমিষেই হারিয়ে গেলো মেঘের রাজ্যে।
মারায়ন তং এ আমরা যখন নিজেদের থাকার জন্য তাঁবু প্রস্তুত করছিলাম তখনই হঠাৎ করেই কালো মেঘে ঢেকে যেতে শুরু করে শুভ্র নীল আকাশ। তাড়াহুড়ো করে তাঁবু প্রস্তুত করে আমরা ঢুকে গেলাম তাঁবুর ভেতরে।
Advertisement
সারাদিনের ক্লান্তির সঙ্গে তখন আকাশ বেয়ে নেমে এলো অঝর ধারায় বৃষ্টি। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো বেশ বিকট আওয়াজের সাথে। বৃষ্টি এবং বজ্রপাতের সাথে যখন ধমকা হাওয়া শুরু হলো তখন আমাদের তাঁবুর অবস্থা টালমাটাল।
বাতাসের তীব্রতা এতোটাই বেশি ছিলো যে জলরোধী তাঁবু হওয়া স্বত্বেও পানি ভেতরে ঢুকে সব গেজেট ও ব্যাগ ভিজে যাচ্ছিলো। বাতাসের তীব্রতায় তাঁবু উড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিলো তখন আমি তাঁবু থেকে বেরিয়ে পড়লাম সাহায্যের খোঁজে।
ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে বজ্রপাতের আলোয় দেখতে পেলাম আশেপাশের সব তাঁবু ফাঁকা। সবাই আশ্রয় নিয়েছেন পাশের জুম ঘরে। তারপর আমি আবার তাঁবুতে ফিরে বাকি দুই বন্ধুকে নিয়ে সেই জুম ঘরে আশ্রয় নেই বাতাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে।
আমরা ৩ জন বৃষ্টিতে পুরোপুরি ভিজে গিয়েছিলাম। ঠান্ডা কিংবা ভয়ে আমরা তখনও থরথর করে কাঁপছিলাম। ঘণ্টা দুয়েক চলে প্রকৃতির এই তাণ্ডব। ঝড় শেষ হলে আমরা তাঁবু আবার ঠিক করে সবাই একসঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আশেপাশের পরিবেশ দেখে কোনোভাবেই অনুধাবন করার উপায় নেই গতরাতের প্রকৃতির তাণ্ডবলীলা। চারদিকে ঝলমলে রোদের আলো, আকাশে ভাসছে শুভ্র নীল মেঘ। তুলোর মতো মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে পায়ের নিচে। এক অসাধারণ অনুভূতি।
মারায়ন তং ভ্রমণে পরামর্শ ও সতর্কতা
>> পাহাড়ে যাওয়ার আগে অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি, শুকনো খাবার ও ক্যাম্পিং এর প্রয়োজনীয় রশদ সঙ্গে নিয়ে নিবেন।
>> অবশ্যই সঙ্গে একজন গাইড নেবেন। সে আপনার মালামাল বহন করতে ও ক্যাম্পিং এর কাজে সহযোগিতা করবে।
>> আদিবাসীদের সঙ্গে কথা কিংবা ছবি তোলা থেকে বিরত থাকুন। এতে তারা বিরক্ত হন।
>> বৃষ্টি কিংবা ঝড়ের সময় তাঁবু কিংবা মালামাল এর চিন্তা না করে দ্রুত পাশের জুম ঘরে আশ্রয় নিন।
জেএমএস/এমএস