মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডানে পোশাককর্মীদের চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তাতে আকর্ষণীয় কিছু সুবিধার সঙ্গে মাসিক ২০-২৫ হাজার টাকা বেতনের কথা বলা হয়েছে।
Advertisement
এদিকে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ায় দেশের পোশাক শিল্পে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরও দক্ষ তিন লাখ শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। এ অবস্থায় দক্ষ শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যে পাঠালে পোশাক শিল্পে শ্রমিকের মারাত্মক সংকট তৈরি হবে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
পোশাক শিল্পের দেশীয় উদ্যোক্তারা বলছেন, জর্ডান, মরিসাসের মতো দেশগুলো পোশাক শিল্পে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। সেখানে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক গেলে দেশের পোশাক খাতে সংকট দেখা দেবে। কারণ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শুধু দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হবে তিন লাখের বেশি।
বোয়েসেলের মাধ্যমে জর্ডানে নারী গার্মেন্টস অপারেটর নিয়োগের জন্য নির্বাচিত কর্মীদের বিনা খরচে থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ নির্বাচিত কর্মীদের যাতায়াতসহ অন্যান্য খরচ বহন করবে। নিয়োগ হবে সম্পূর্ণ বিনা খরচে। ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ পেতে প্রার্থীর বয়স ১৮ থেকে ৩৯ বছরের মধ্যে হতে হবে।
Advertisement
পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা। ছবি: সংগৃহীত
বোয়েসেল এজন্য প্রতি শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে তিনটি স্থানে কর্মী বাছাই করবে। এগুলো হচ্ছে শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (এসএফএমএমটিটিসি) দারুস-সালাম, মিরপুর-১, বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (বিকেটিটিসি), দারুস-সালাম, মিরপুর-১ এবং বাংলাদেশ-জার্মান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (বিজিটিটিসি), মিরপুর-২, ঢাকা।।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতে জর্ডান একটি অনিশ্চিত একটি দেশ। যেখানে নারীরা কতটা নিরাপদে থাকবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাছাড়া কারও কারখানার দক্ষ শ্রমিক ভাগিয়ে নেওয়াটাও অন্যায়।
তাদের মতে, চলমান কারখানা থেকে শ্রমিক কৌশলে নিতে শুক্রবারকে টার্গেট করে শ্রমিক বাছাই করা হচ্ছে। সেদিন শ্রমিকের ছুটি থাকে আর এ সুযোগ নিচ্ছে বোয়েসেল। তাছাড়া বোয়েসেলের নিজস্ব কোনো ট্রেনিং সেন্টার না থাকার পরও নারীকর্মীদের অন্য দেশে পাঠানোকে অযৌক্তিক বলছেন গার্মেন্টস শিল্পের উদ্যোক্তারা।
Advertisement
এ নিয়ে কথা হয় বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলের সঙ্গে।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের বড় ধরনের কাজের অর্ডার আছে। সে তুলনায় শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে আমাদের শ্রমিক আমদানি করার অবস্থা। এ সময় শ্রমিক বাইরে রপ্তানি হলে পুরো পোশাক খাতের জন্য সুখকর পরিস্থিতি বয়ে আনবে না। সরকার অবশ্যই পরিস্থিতি বিবেচনায় এটা ভেবে দেখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এ বিষয়ে বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, নতুন কোনো শ্রমবাজার না ধরে পোশাক শিল্পের দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বোয়েসেল। যে দেশে নারী শ্রমিকদের পাঠানোর জন্য ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে সে দেশটি একটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশ হিসেবেই মনে করা হয়। তাছাড়া বোয়েসেল নারী শ্রমিক পাঠালে তাদের ট্রেনিং সেন্টার থাকা দরকার। আমাদের ট্রেনিং করা শ্রমিকদের তারা পাঠালে সেটা পোশাক শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলবে।
তিনি আরও বলেন, সামনের দিনগুলোতে আমাদের আরও ৩ লাখ দক্ষ শ্রমিক দরকার। এভাবে দক্ষ শ্রমিক দেশের বাইরে গেলে আমরা সংকটে পড়বো। তাছাড়া মরিসাস বা জর্ডানে ডিউটি ফ্রি আছে, পোশাক শিল্পে তারা আমাদের থেকে এগিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে বোয়েসেলের মহাব্যবস্থাপক (বৈদেশিক নিয়োগ) বনানি বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, পোশাক শিল্প মালিকদের অভিযোগ সঠিক নয়। জর্ডানে শুধু দক্ষ শ্রমিক নয়, অদক্ষ নারী শ্রমিকও যেতে পারবেন। তাদের পরবর্তীতে জর্ডানে ট্রেনিং দেওয়া হবে।
বোয়েসেলের ট্রেনিং সেন্টার নেই, এ নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ট্রেনিং সেন্টার আছে সাভারে, সেখানে ট্রেনিং হয়। ছুটির দিনে কারখানার শ্রমিকদের আমরা নিয়োগ দিচ্ছি, এটা অযৌক্তিক কথা। আমরা ২০১০ সাল থেকে শ্রমিকদের নিয়োগে শুক্রবার সাক্ষাৎ আহ্বান করি।
ইএআর/এমএইচআর/এসএইচএস/জেআইএম