‘লাইফ সাপোর্ট খুললেই আপনার বাবা মারা যাবে। যদি আইসিইউ থেকে নিয়ে যেতে চান তবে তার মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়, এই মর্মে রিস্ক বন্ডে স্বাক্ষর করতে হবে।’ -চিকিৎসকের এমন কথা শুনে কান্নার রোল উঠে। গ্রামের বাড়িতে নিশ্চিত মৃত্যুর খবর জানালে এলাকায় মাইকিং করা হয়। খোঁড়া হয়ে যায় কবরও। কিন্তু নিশ্চিত মৃত্যু মেনে নিয়ে লাইফ সাপোর্ট খুলে লিফটে উঠানোর সময় চোখ খুলে তাকান তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মকবুল খান।কথাগুলো বলছিলেন পাগল মন খ্যাত সংগীত শিল্পী দিলরুবা খানের মেয়ে শিমুল খান। আর এ ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর মালিবাগের বেসরকারি সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।তিনি আরো বলেন, তার (মকবুল খান) দু`চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। প্রাণ বাঁচাতে শেষ চেষ্টা হিসেবে বাবাকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে আসি। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বাবাকে দেখে কিছুতেই বিশ্বাসই করতে চাচ্ছিলেন না যে কিছুক্ষণ আগেও তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।শিমুল খান বলেন, হলি ফ্যামিলির চিকিৎসকরা তাকে জানান, সম্প্রতি স্ট্রোক করায় তার (মকবুল খান) মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেইসঙ্গে তিনি নিউমোনিয়ায়ও আক্রান্ত। একদিন পর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তারা আরো জানান, রোগীর সুচিকিৎসার্থে তাকে দুই চারদিন আইসিইউতে রাখতে হতে পারে। সম্প্রতি লাইফসাপোর্ট খুলে নেয়া হলেও বাবা এখনও বেঁচে আছেন।শিমুল খান জাগো নিউজকে আরো জানান, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মকবুল খান নাটোর থানাপাড়ায় থাকেন। তিনি উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত। এ মাসের প্রথম দিকে তিনি পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করলে পারিবারিক সিদ্ধান্তে তাকে ঢাকার একটি কমিউনিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসেন।তিনি বলেন, সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে আইসিইউ’র ৭ নম্বর বেডে ভর্তি করে চিকিৎসকরা জানান, লাইফ সাপোর্ট না দিলে রোগী বাঁচবে না। এমন কথা শুনে হতবিহবল হয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখার ব্যাপারে রাজি হই। কর্তব্যরত ডাক্তার জানান, রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিদিন ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকাসহ আনুষাঙ্গিক আরো কয়েক হাজার টাকা খরচ হবে। কিন্তু রোগী বাঁচবে এমন নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। এ কথা শুনে তারা মৃত্যু নিয়তি মেনে নিয়ে লাইফ সাপোর্ট খুলে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে চান বলে জানান। এ সময় চিকিৎসক বলেন, লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রোগীর মৃত্যু হবে। লাইফ সাপোর্টের নামে ১২ ঘণ্টারও কম সময়ে ৫৭ হাজার টাকার বিল কারে বলেও অভিযোগ করেন শিমুল খান। পরে রাত ১০টা থেকে পরদিন দুপুর ১টা পর্যন্ত আইসিইউতে চিকিৎসার জন্য ৫৭ হাজার টাকা পরিশোধ করেন।প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে শিমুল খান জানান, আর কোনো মানুষ যেন এমন অভিনব প্রতারণার শিকার না হন সেজন্য সাহস করে মিডিয়াতে প্রতারণার বিষয়টি স্বেচ্ছায় অবহিত করছেন।জানা গেছে, আইসিইউতে মকবুল খানকে যিনি দেখেছেন তিনি ডা. এম এ মামুন, এমবিবিএস, ডিএ, এমএসসি। এ ব্যাপারে জানতে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একাধিকবার যোগাযোগ করে ডা. মামুনের মোবাইল নম্বর দিতে রাজি হননি।এমইউ/আরএস/এমএস
Advertisement