আমি রাজনীতিবিদ নই। কখনো ছিলাম না। কলেজ জীবনে নিজ ইচ্ছায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। দুটো কারণে। প্রথমটি ছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ। দ্বিতীয়টি ছিল প্রগতিশীল রাজনীতি করে নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করা। রাজনীতির নেতৃত্বের চাইতেও সাহিত্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং একাডেমিক কাজে আমার উৎসাহ ছিল অপরিসীম।
Advertisement
১৯৮৬ সালে সামনাসামনি আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা হয়। তখন তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রী। তাঁকে সামনাসামনি দেখবার এবং কথা বলবার খুব ইচ্ছে ছিল। চট্টগ্রামের একজন আওয়ামী লীগের নেতার বাসায় খুব ভোরে তার সাথে দেখা করতে গেলাম আমরা কয়েকজন। আপা সবার কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে বললেন। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এবং স্বৈরাচার সম্পর্কে খুব চমৎকার কিছু কথা খুব সহজভাবে বললেন। আপা নিজেই সকালের চা নাস্তা আমাদের সাথে সারলেন। তারপর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। আমি আপার ভক্ত হয়ে গেলাম। তাঁর জ্ঞানের গভীরতা, সারল্য এবং কঠিন ব্যক্তিত্ব আমাকে আকর্ষণ করেছিল।
এরপর আবার দেখা হলো খুব কঠিন সময়ে। আপা লালখাঁনবাজারে বিশাল সমাবেশে এসেছিলেন। তাঁকে হত্যার প্রচেষ্টায় তাঁর সমাবেশে গুলি করা হলে অনেকেই শহীদ হলেন , আহত হলেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আপা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত এবং নিহতদের দেখতে এলেন। সেদিন কান্না বিজড়িত চোখে তিনি মেডিক্যাল কলেজের চত্বরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের জন্য জীবন দেবার কথা আবারো মনে করিয়ে দিয়েছিলেন।
জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতির শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। খেটে খাওয়া মানুষের জন্য তিনি যেভাবে ভাবেন তা খুব কম রাজনীতিবিদই ভাবেন। তিনি কেবল ভাবেন না, তিনি আজীবন সংগ্রাম করছেন দারিদ্র্য, সমঅধিকার আর ন্যায্যতার জন্য।
Advertisement
শারীরিক অসুস্থতা আর স্বৈরাচারী সরকারের অত্যাচারে বেশ কিছুদিন তিনি ফ্লোরিডায় তার মেয়ে পুতুলের কাছে কাটান। সে সময় বেশ কবার তাঁর সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আবার। একটি ঘটনার কথা কোনো দিনই ভুলবো না। একবার ঘরোয়া পরিবেশে দীর্ঘ সময় তিনি আমাদের পরিবারের সাথে সময় দিয়েছিলেন। সে সময় আমেরিকায় বড় হওয়া আমার চিকিৎসক স্ত্রীকে তিনি উপদেশ দিয়েছিলেন কীভাবে ওভেনে মাছ সহজে রান্না করা যায়। কীভাবে প্রাত্যহিক জীবনটা সহজ করা যায়। তিনি সব সময়ই মনে করিয়ে দেন তিনি আমাদেরই একজন।
আমি একবার বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির জন্য বেশকিছু মেডিক্যাল সরঞ্জাম আমেরিকা থেকে নিয়ে গিয়েছিলাম উপহার হিসেবে। অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত দাদা তখন সেখানকার ভিসি। তিনি আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে গেলেন। সে যাত্রায় আবার তাঁর সাথে দেখা। তিনি মনে করিয়ে দিলেন তিনি কিছুই ভোলেননি।
তাঁর বড় পরিচয় তিনি সারাজীবন উৎসর্গ করেছেন এ দেশের জন্য, এ দেশের মানুষের জন্য। মৃত্যুভয় তাঁকে কখনোই দমাতে পারেনি।
আজ বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে সারা বিশ্বের কাছে। তাঁর অবদান অবিসংবাদিত। তার পরম শত্রুরাও তা অস্বীকার করতে পারেন না। বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। সে ঝুঁকি তিনি প্রতিদিন মোকাবিলা করেন শক্তহাতে, মমতার সাথে।
Advertisement
জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সেই ছাত্রজীবন থেকে আপা বলেই ডাকি। আপার ৭৫তম জন্মদিনে তাঁর শতায়ু কামনা করি। তাঁর নেতৃত্বে এগিয়ে যাক প্রিয় দেশ সে প্রার্থনা করি।
এইচআর/এমএস