জাগো জবস

সায়েমের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প

সায়েম ইমরান ৩৮তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। চট্টগ্রামের পটিয়ায় জন্মগ্রহণ করলেও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে। বাবা মোস্তাফিজুর রহমান অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং মা কামরুন্নাহার গৃহিণী। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে বিজ্ঞানে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

Advertisement

বর্তমানে তিনি ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আনিসুল ইসলাম—

জাগো নিউজ: আপনার শৈশবের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই—সায়েম ইমরান: ছোটবেলায় মোটামুটি পড়াশোনায় ভালো ছিলাম। ক্রিকেট খেলা পছন্দ করতাম। আমি খুব ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। নদী, পাহাড় আমার ভালো লাগে। দেশের অনেক জায়গায় ঘোরা হয়েছে। মানুষ অনেক কিছু হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়। আমি একেক সময় একেকটা হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যখন এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলো; তখন থেকে গান-বাজনা শুরু করি। পাশাপাশি টিউশনি করতাম। অনেক গান করেছি। সারাদিন কনসার্ট বা স্টুডিওতে থাকা হতো। সবাই ভাবতেন, আমি গান-বাজনার বাইরে কিছু করতে পারবো না। কিন্তু এখন আমাদের কালচারাল পোগ্রামে গান-বাজনার পাশাপাশি উপস্থাপনাও করি। এসব কারণে স্যাররাও আমাকে পছন্দ করেন।

জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?সায়েম ইমরান: আমার এইচএসসি পরীক্ষার পর ইচ্ছে ছিল বুয়েটে ভর্তি হওয়ার। তবে পর্যাপ্ত প্রস্তুতির কারণে সুযোগ পাইনি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছিলাম। পরে পরিবারের অনিচ্ছার কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেখানে বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও বিষয় পরিবর্তন করে ইংরেজি নিয়ে পড়তে হয়েছে।

Advertisement

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?সায়েম ইমরান: অনার্স পরীক্ষার শেষের দিকে বিসিএসের স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। আমার এক বন্ধু ৩৬তম বিসিএসে নন-ক্যাডার হন। তিনি আমাকে বিসিএস পরীক্ষার জন্য তাগাদা দিতে থাকেন। কারণ আমি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম। তাছাড়া ইংরেজি নিয়ে অনার্স করছি। পাশাপাশি গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের পড়াই। মূলত বন্ধুর অনুপ্রেরণায় বিসিএস দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?সায়েম ইমরান: প্রথমে ৩৭তমে প্রিলি দেই। প্রস্তুতি না থাকায় ফলাফল খারাপ আসে। তারপর থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। শিক্ষা ক্যাডারের এক বড় ভাইয়ের থেকে সব সময় অনুপ্রেরণা ও গাইডলাইন পেয়েছি। আমি গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান ও কম্পিউটার ভালো পারতাম। বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি কীভাবে নেবো বুঝতে পারছিলাম না। তখন ওই বড় ভাইয়ের গাইডলাইনে পড়া শুরু করি। সাধারণ জ্ঞান ও বাংলাদেশ বিষয়াবলী ভুলে যেতাম। যেহেতু বিসিএস দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তাই প্রায়ই আমি হতাশ হয়ে যেতাম, আমি পারবো কিনা। যতক্ষণ আমার চোখ খোলা থাকতো; ততক্ষণ পড়তাম। কোচিংয়ে শিক্ষার্থীদের পড়া দিয়ে আমি নিজে পড়তাম। প্রিলির ক্ষেত্রে অনেক পড়তাম কিন্তু পরে সব ভুলে যেতাম। বুঝতে পারি, এভাবে মনে রাখা সম্ভব নয়। তখন থেকে নির্দিষ্ট কিছু গাইড ও মেইন বই ফলো করতাম। অল্প অল্প পড়তাম কিন্তু ভালো করে পড়া হতো। জিনিসটি প্রিলির ক্ষেত্রে খুব কাজে দিয়েছে। যা হোক, প্রিলিতে পাস করলাম। বিজ্ঞানে পড়ার কারণে বেসিক খুব ভালো পারতাম। বিসিএসের প্রিলি সিরিয়াসলি পড়তে পড়তে রিটেনের জন্য প্রস্তুতি হয়ে যায়। রিটেন পরীক্ষায় দেখলাম গণিত, ইংরেজি, বাংলা সাহিত্য ভালো পারি। তবে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীতে একটু সমস্যা ছিল। এখানে অনেক ডাটা মনে রাখতে হয়। এসবের জন্য নিজে সাজেশন তৈরি করে পড়েছি। রিটেনে দুই বিষয় ছাড়া বাকিগুলোয় খুব ভালো পরীক্ষা হয়েছে। তারপর রিটেনেও টিকে গেলাম। ভাইবার ক্ষেত্রে মূলত পড়াশোনার বিষয় কম। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে পারার দক্ষতা থাকতে হয়। স্যাররা আমাকে নানা প্রশ্ন করে যাচাই করার চেষ্টা করেন। আমি সুন্দরভাবে উত্তরগুলো দিয়েছিলাম। আমি তাদের গান গেয়ে শোনাই। আমি আগে ব্যাংকে ভাইবা দিয়েছি। টোটাল ৪টি ব্যাংকে জব হয়েছিল। কোথায়ও গদবাধা প্রশ্ন করা হয়নি। তারা পরীক্ষা করেছেন, আমি যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা ও হ্যান্ডেল করতে পারবো কিনা। বিসিএসে ৩৩ মিনিট ভাইবা হয়েছিল। ভাইবার পর বুঝতে পেরেছিলাম আমার কিছু হবে। কারণ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাইবা ছিল বিসিএস ভাইবা।

জাগো নিউজ: কেউ অনুপ্রেরণা দিয়েছে? কাকে বেশি মনে পড়ে?সায়েম ইমরান: বাবা-মা সব সময় আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। আমাদের এখানে অনেক ব্যাংক ছিল। চাইলে আমি ব্যাংকে জব করতে পারতাম। কিন্তু পরিবারের কেউ বলেননি, ক্যাডার হওয়ার দরকার নেই; ব্যাংকে জব করো। তাছাড়া আমার স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। সে সব সময় আমাকে সমর্থন দিয়েছে। খারাপ সময়গুলোয় আমার পাশে ছিল।

জাগো নিউজ: যারা বিসিএসে আসতে চান, তাদের জন্য কী পরামর্শ থাকবে?সায়েম ইমরান: বিসিএস হচ্ছে প্রতিযোগিতার জায়গা। এখানে দেশের অত্যন্ত মেধাবীরা ক্যাডার হন। সুতরাং ক্যাডার পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করতে হবে। যুদ্ধের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। যাতে যুদ্ধে টেকা যায়। পড়াশোনার ক্ষেত্রে বেশি না পড়ে অল্প অল্প করে বারবার পড়া উচিত। বিসিএসে এখন গদবাধা প্রশ্ন আসে না। এর জন্য পুরোপুরি টেকনিক্যাল হতে হবে। প্রিলির জন্য ২০০ প্রশ্ন না দাগিয়ে ১৪০-১৫০ প্রশ্ন দাগানো উচিত বলে মনে করি। রিটেনের জন্য পুরো উত্তর করার চেষ্টা করতে হবে। গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি ভালোভাবে জানতে হবে। ভাইবায় পড়ার পাশাপাশি টেকনিক্যাল হতে হবে। অনেক সময় বিব্রতকর প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীদের কনফিউজড করা হয়। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে এগিয়ে যেতে হবে।

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?সায়েম ইমরান: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যেতে চাই। দেশের বাইরে থেকে ভালো কিছু শিখতে চাই। সেগুলো দেশ পরিচালনার জন্য কাজে লাগাতে চাই। বাইরে ল’ নিয়ে পড়ার ইচ্ছা আছে। আইন বিষয় নিয়ে দেশে কাজ করতে চাই।

জাগো নিউজ: করোনা দুর্যোগে আপনার ভূমিকা কী?সায়েম ইমরান: করোনায় ঝালকাঠিতে অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়। করোনায় প্রায় ১শ’র উপর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। সারাদিন মাঠে থেকে মানুষকে সচেতন করা, মাস্ক পরাসহ মাস্ক বিতরণ করেছি। তাছাড়া গরিব মানুষদের সহায়তা করার চেষ্টা করেছি।

এসইউ/এএসএম