তাপস হালদার
Advertisement
দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী কিংবা একজন রাজনৈতিক নেতার চেয়েও বড় পরিচয় তিনি একজন যোদ্ধা, একজন অভিভাবক, একজন ক্রাইসিস ম্যানেজার। তিনি হার মানতে জানেন না। বাংলাদেশে এখন প্রায় সব মানুষই স্বীকার করেন, হার না মানার যোদ্ধার নামই শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে যখনই কোন সংকট দেখা দেয়,সবাই যখন অজানা আশংকায় প্রহর গুণতে থাকে তখনই একজন মানুষ অদম্য দৃঢ়তায় সেই আশংকাকে দূর করে দেন,তিনিই শেখ হাসিনা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের পাঁচ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা। ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীর তীরে ছোট্ট গ্রাম টুঙ্গীপাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন।ছোট বেলা থেকেই একটি রাজনৈতিক পরিবেশে বড় হন। পিতা তখন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের প্রধান মুখ। পরিবারের প্রথম সন্তান হয়ে ঘরে বসে শুধু রাজনীতিকে দেখেন নি, নিজেও জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দিয়েছেন ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব, হয়েছেন নির্বাচিত প্রতিনিধি। মহান পিতার আদর্শকে ধারণ করে রাজনীতির প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করে তিনি আজকের অবস্থানে এসেছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ সপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের সময় বিদেশে অবস্থান করার কারণে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। সেসময় দীর্ঘ ৬ বছর ভারতে নির্বাসিত ছিলেন।১৯৮১ সালে ১৭ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন।তখন তিনি লক্ষ লক্ষ জনতার সংবর্ধনা সভায় বলেছিলেন, ‘আমি বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য এসেছি। আপনাদের বোন হিসেবে,মেয়ে হিসেবে,আমি বঞ্চিত মানুষের পাশে থাকতে এসেছি। বাবা, মা, ভাই সব হারিয়েছি। আপনারাই আমার পরম আত্মীয়। আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে মুক্তির সংগ্রামে নামতে চাই। মৃত্যুকে ভয় পাইনা। বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য আমার বাবা আজীবন সংগ্রাম করেছেন। বাংলার মানুষের জন্যই জীবন দিয়েছেন। আমিও প্রয়োজনে বাবার মতো আপনাদের জন্য জীবন দিব।' সেদিন থেকেই তিনি বাংলার মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকারের সংগ্রামে নেমে পড়েন।
Advertisement
দেশরত্ন শেখ হাসিনার সংগ্রামকে বাধাগ্রস্ত করতে তাঁকে বারবার আটক কিংবা গৃহবন্দি করা হয়। এমনকি ১৯ বার হত্যা চেষ্টাও করা হয়েছে। শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।
১৯৮১ সাল থেকে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক ভাবে চার দশক দলীয় সভাপতি, টানা তৃতীয় মেয়াদসহ প্রায় ১৮ বছর সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। শুধু বাংলাদেশ নয় বর্তমান বিশ্বের আর কোন রাজনৈতিক নেতার এমন ইতিহাস নেই। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা বার বার রাজনীতি থেকে অবসরের ইচ্ছা পোষণ করলেও দলীয় নেতাকর্মীদের আবেগ, ভালোবাসার কাছে হার মেনে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য হচ্ছেন। পিতার মতই তাঁর মানুষের প্রতি আছে অপরিশীম ভালোবাসা ও সহমর্মিতা। এজন্যই তিনি বাঙালির অতি আপনজন হতে পেরেছেন।ছোট বেলা থেকে তিনি এই গুণটি বাবা-মার কাছ থেকে পেয়েছেন। প্রতিটি নেতাকর্মীদের কাছে তিনি প্রিয় ‘আপা’ এবং অসহায়,সম্বলহীন মানুষের কাছে ‘মমতাময়ী মা' হিসেবে বাঙালির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা একজন ভিশনারী লিডার। তিনি একটা ভিশন নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করেন। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে বসে দিনবদলের সনদের পরিকল্পনা করেছিলেন। আর ক্ষমতায় এসে সেটারই বাস্তবায়ন করেছন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ‘২০০৭ সালে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমাকে তখন রাজনীতি থেকে বিতাড়নের ষড়যন্ত্র চলছিল। কিন্তু জেলখানায় বসে ক্ষমতায় গেলে দেশের উন্নয়নে কী করতে হবে, সেই ইশতেহারের পয়েন্ট আমি লিখে রাখি। পরে তা নির্বাচনের সময় দিনবদলের ইশতেহারে যোগ করি।’
দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন অগ্রগতির সব সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোল মডেল। অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রের বেশির ভাগ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করছে। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বে অনুকরণীয় রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ।
Advertisement
একসময়ের তলাবিহীন ঝুঁড়ি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে অপার বিস্ময়। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচকে বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর,কর্ণফুলি ট্যানেল, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জন করেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়নে রোল মডেল বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বের কাছে একজন প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হয়েছেন। এজন্য জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ইউনেস্কো, ইউনিসেফ,বিশ্বব্যাংক,এডিপি এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করা হচ্ছে। বিশ্ব নেতৃত্ব শেখ হাসিনাকে ‘স্টার অব ইস্ট’ বলে সম্মানিত করছেন।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন বহু আন্তর্জাতিক সম্মান। ১৯৯৬ সালে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘ দুই দশকের অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য পেয়েছেন ‘হুপে-বোয়ানি' শান্তি পুরস্কার। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রদান করেন সম্মানজনক ‘সেরেস' পুরস্কার। অন্যদিকে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তো অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য উইমেন ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি)ও ইউনেস্কো থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য ‘ডব্লিউআইপি) গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড’,নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য ‘ট্রি অব পিস’, গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ও ‘গ্লোবাল সামিট অব ওমেন’,জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার জন্য ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’,স্বাস্থ্য খাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদান রাখার দু’বার সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড, নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’, টিকাদান কর্মসূচিতে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই), জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আইসিটির ব্যবহারে প্রচারণার জন্য ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’। সর্বশেষ জাতিসংঘের ৭৬ তম অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে গ্রহণ করলেন জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের পথে বাংলাদেশের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড'।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তিনি একজন মমানবতাবাদী নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মায়ানমারে যখন জাতিগত নিধনে লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত, যখন বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো চুপ করে বসেছিল। আর তখনই ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ার সাহস দেখিয়ে সারা বিশ্বকে চমকিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির এখন বাংলাদেশে। এই মহান কাজটি করার ফলে বিশ্ব নেতৃত্ব, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রভাবশালী গণমাধ্যম গুলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ডেকিন ইউনিভার্সিটির ‘সেন্টার ফর হিউম্যান লিডারশিপ' তাঁকে ২০১৭ সালে ‘ মানবতার চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গণমাধ্যম চ্যানেল ফোর ‘মাদার অব হিউম্যানিটি' হিসেবে তুলে ধরেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয়ের সাথে তুলনা করেছিলেন কিউবার বিপ্লবী আন্দোলনের নেতা ফিদেল কাস্ট্রো। অন্যদিকে ইন্ডিয়া টুডে তাদের এক প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে বঙ্গোপসাগরের সাথে তুলনা করে বলেছে, ‘শেখ হাসিনার হৃদয় বঙ্গোপসাগরের চাইতে বড়’। মানুষের প্রতি ভালোবাসাটা তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কাজ থেকে পেয়েছেন। দেশের মানুষের জন্য সব সময় এই পরিবারটি সব কিছু উজাড় করে দিয়েছে, এখনও দিয়ে যাচ্ছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি অসহায় মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। পুরো বাংলাদেশটাই তাঁর পরিবার।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, বাঙালির আশা ভরসার নিরাপদ আশ্রয়স্থল দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭৫তম শুভ জন্মদিন। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনার শতায়ু কর্মময় জীবন প্রার্থনা করছি। শুভ জন্মদিনে আপনাকে জানাই অবনতমস্তকে প্রণতি।
লেখক: সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও সাবেক ছাত্রনেতা।haldertapas80@gmail.com
এইচআর/জেআইএম