অর্থনীতি

চিনিতে অস্বস্তি বাড়ছে, নির্ধারিত দাম ‘কোথাও নেই’

খোলা চিনির দাম প্রতি কেজি ৭৪ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। প্যাকেটজাত হলে কেজি প্রতি দাম পড়বে ৭৫ টাকা। কিন্তু সরকার দাম ঠিক করলেও বাজারে এ দামে চিনির দেখা পাচ্ছেন না সাধারণ ক্রেতারা। দাম নির্ধারণের পর তিন সপ্তাহ পেরুলেও চিনির দামে স্বস্তি ফেরেনি।

Advertisement

বাজারে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বমূল্য রোধে গত ৯ সেপ্টেম্বর চিনির দাম নির্ধারণ করেছিল বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারস অ্যাসোসিয়েশন।

সরেজমিনে সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৮০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ৮৪ থেকে ৮৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা নির্ধারিত দামের অনেক বেশি।

বাড়তি দামে চিনি বিক্রির দায় খুচরা বিক্রেতারা চাপাচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপর। তারা দুষছেন মিল মালিকদের। তবে এ নিয়ে মুখ খুলছেন না মিল মালিকরা।

Advertisement

রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজারে সাদ্দাম স্টোরের মালিক মুনির হোসেনের কাছে চিনির দাম জানতে চাইলে তিনি কেজিপ্রতি ৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলে জাগো নিউজকে জানান।

সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি না করার কারণ জানতে চাইলে এ খুচরা বিক্রেতা চিনি কেনার রসিদ দেখিয়ে বলেন, প্রতি কেজি চিনি পাইকারি ৭৬ টাকা কেজি দরে কিনেছি। পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ দিয়ে ৭৭ টাকা পড়েছে। ওই (নির্ধারিত) দামে কীভাবে বিক্রি করবো?

ওই বাজারে মাহিন জেনারেল স্টোরে দুদিন আগে বাড়তি দামে চিনি বিক্রি করায় ম্যাজিস্ট্রেট দোকান মালিককে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। ওই দোকানের মালিক মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, কেন জরিমানা করা হচ্ছে। আমরা বেশি দামে কিনেছি, লোকসান দিয়ে বিক্রি করবো? ম্যাজিস্ট্রেটকে সব কাগজপত্র দেখিয়েছিলাম, তারপরও জরিমানা করেছেন। আমরা খুব বিপদে আছি।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, দাম নির্ধারণ করা হলেও সেটা মিল পর্যায় থেকে হোক। মিল বেশি দামে বিক্রি করলে, পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হলে, খুচরা বিক্রেতাদের অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।

Advertisement

বাজারে সরকারের চিনির মিলে উৎপাদিত লাল চিনির দাম কেজিপ্রতি ৯৫ টাকায় উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে অনেক দোকানে ‘চিনি নেই’ বলা হচ্ছে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর অপরিশোধিত চিনির আন্তর্জাতিক বাজারদর এবং স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলসমূহের উৎপাদন ব্যয় বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে চিনির দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারস অ্যাসোসিয়েশন।

আন্তর্জাতিক বাজারে গত ৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে চিনির দাম বাড়ায় প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ৮৫ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৮ টাকা করার প্রস্তাব করেছিল সুগার রিফাইনারস অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার পর কেজিপ্রতি খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৭৪ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

গত ১০ অক্টোবর বাজারে নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রির কথা থাকলেও সেটা হয়নি। এমনকি এ সিদ্ধান্তের কোনো প্রভাবও পড়েনি বাজারে। উল্টো প্রতিদিনই এ নিত্যপণ্যটির দাম বাড়ছে। ৮০ টাকা কেজির কম কোথাও চিনি মিলছে না। এ নিয়ে কদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় জরিমানাও করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর।

ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে প্যাকেটজাত কোম্পানিগুলোও সুযোগ বুঝে চিনির দাম বাড়িয়েছে। কোম্পানিভেদে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা গায়ের দাম রাখা হয়েছে। আবার অনেক দোকানে পুরোনো চিনির প্যাকেটে আগের সংখ্যাগুলো মুছে বসানো হচ্ছে নতুন দাম।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে প্রতি কেজি চিনি ৭৬ টাকায় কিনলেও পরিবহন ও অন্যান্য খরচ মিলে সামান্য লাভ ধরে কেজিপ্রতি চিনি ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্যাকেটজাত চিনিতে প্যাকেটপ্রতি তাদের লাভ হচ্ছে মাত্র দু-এক টাকা।

অন্যদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম বছরের ব্যবধানে ২৪ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরও এসব চিনি বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে।

এনএইচ/এমকেআর/এএসএম