জাতীয়

দুই কোটি অভ্যন্তরীণ পর্যটক দেশেই ভ্রমণ করেছেন

বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় পর্যটন শিল্পে গতি ফিরতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি বলেছেন, বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রমণ কমে আসায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন স্পটগুলো ও এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে সব পর্যটন কেন্দ্র।

Advertisement

সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে প্রতিমন্ত্রী বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কুকিং শো এবং ঘোড়ার গাড়ির র‌্যালি উদ্বোধন করেন।

পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন এদেশের গণমানুষের মুক্তি, উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পদ্ধতির মাধ্যমেই এ দেশের সাফল্য নিশ্চিত হবে। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে ইউএনডব্লিউটিও ঘোষিত এ বছরের প্রতিপাদ্য- ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সমৃদ্ধিতে পর্যটন’ আসলে বঙ্গবন্ধুর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন দর্শনকেই প্রতিফলিত করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দেশ। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ বৈচিত্র্যময় এবং সমৃদ্ধ পর্যটন পণ্য। পর্যটন শিল্পের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ধারাবাহিক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য কাজ করছে সরকার। সমগ্র দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের মাধ্যমে দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশে সৃষ্টি হয়েছে উপযুক্ত পরিবেশ।

Advertisement

প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে পর্যটন খাতে এখন পর্যন্ত মোট প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৯ সালে দেশের জাতীয় আয়ে পর্যটন খাতের অবদান ছিল ৯৫০ দশমিক ৭ বিলিয়ন টাকা যা জিডিপির ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। অদূর ভবিষ্যতে তা ৬ শতাংশে পরিণত হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে পর্যটনের অবদান বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণীয় এলাকায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। কেবল কক্সবাজারেই তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পার্ক তিনটির কাজ সমাপ্তির পর প্রতিবছরে এতে বাড়তি ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এছাড়া দেশের প্রান্তিক মানুষকে পর্যটন শিল্পে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করার জন্য আমরা বাংলাদেশের গ্রামীণ পর্যটন ও কমিউনিটি বেজড পর্যটন উন্নয়নে কাজ করছি। বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মসংস্থানের এই সুযোগ দেশের জাতীয় অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি তা জিডিপিতে পর্যটন শিল্পকে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে।

মাহবুব আলী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সারা পৃথিবীর পর্যটন শিল্প একটি বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংক্রমণের কারণে একটি দীর্ঘ সময় পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পসমূহের মধ্যে পর্যটন অন্যতম। বাংলাদেশও বৈশ্বিক এই পরিস্থিতির বাইরে নয়। দীর্ঘ সময় ব্যবসা করতে না পারায় আমাদের পর্যটন শিল্পের আর্থিক ক্ষতি অনেক। বর্তমানে দেশে সংক্রমণ কমে আসায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন স্পটগুলো ও এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে সব পর্যটন কেন্দ্র। করোনার এই সময়েও প্রায় দুই কোটি অভ্যন্তরীণ পর্যটক দেশের ভেতরে ভ্রমণ করেছেন। দেশের পর্যটন শিল্পের গতি ফিরতে শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আমাদের পর্যটন শিল্পের যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিভিন্ন উপ-খাতের ব্যবসায় জড়িত পর্যটন অংশীজনদের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। এছাড়া পর্যটন শিল্পের ক্ষতি চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের উপায় নির্ধারণের জন্য ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন, করোনাকালে পর্যটন শিল্প পুনরায় চালুকরণের জন্য অনুসরণীয় নির্দেশিকা প্রস্তুত ও বিতরণ, অনুসরণীয় নির্দেশিকার ওপর পর্যটন শিল্পের অংশীজনদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, ট্যুরিজম রিকভারি প্ল্যান প্রস্তুত, পর্যটন শিল্পে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়, পর্যটন শিল্পের বিভিন্ন অংশীজনদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া, জেলা ও উপজেলায় সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ, অন-অ্যারাইভাল ভিসার আওতা বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পত্র দেওয়া ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ যদি আর না বাড়ে তাহলে আমরা আমাদের এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে দেশের পর্যটন শিল্পকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. হান্নান মিয়া, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

Advertisement

এমইউ/এমআরআর/এএসএম