পাথরখণ্ডের ভাঁজে ভাঁজে সরু পাহাড়ি পথে পা ফেলে চূড়ায় উঠতে হবে। চূড়ায় ওঠার পথে নিচের দিকে তাকালেই শরীর শিউরে উঠবে। ভয়ে আঁতকে উঠবেন আপনি। বিপজ্জনক পথ মাড়িয়ে কংলাকপাড়ার চূড়ায় দাঁড়িয়ে মনে হবে আপনি যেন কোনো স্বর্গরাজ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। চারপাশের আকাশচুম্বী পাহাড়ে সবুজ বনানীর বুকে সাদা মেঘের ছুটে চলাসহ অপরূপ দৃশ্য আপনাকে বিমোহিত করবে।
Advertisement
বলছিলাম পাহাড়ের বুকে একখণ্ড সবুজে ঘেরা কংলাকপাড়ার কথা। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতার সাজেক ভ্যালির সর্বোচ্চ চূড়া। সাজেকের শেষ গ্রাম কংলাকপাড়া। এরপর শুধু পাহাড় আর পাহাড়।
কংলাক পাহাড় থেকে কিছুটা দূরে তাকালেই চোখের পর্দায় ভেসে উঠবে লুসাই পাহাড়। যেখান থেকে কর্ণফুলী নদীর উৎপন্ন। সেখানে দাঁড়িয়ে চারদিকে পাহাড়, সবুজ বনানী আর মেঘের অকৃত্রিম মিতালি চোখে পড়ে। কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে পুরো সাজেক উপত্যকার সৌন্দর্য দেখা যায়। শুভ্র মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ায় পাহাড়ের চূড়ায়, সবুজের বুকে। এ যেন এক স্বপ্নরাজ্য।
সাজেক ভ্রমণরত দেশি-বিদেশি নানা বয়সী পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে কংলাকপাড়া। রুইলুইপাড়া থেকে অন্তত দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থান এটি। সাজেকের হ্যালিপ্যাড বা জিরো পয়েন্ট থেকে ৩০-৪০ মিনিটের পথ। কিছুটা পথ চাঁদের গাড়ি বা মোটরসাইকেলে যেতে পারলেও বাকি পথ ট্রেকিং করে পৌঁছাতে হবে কংলাকপাড়ায়।
Advertisement
মেঘের সমুদ্রবেষ্টিত পাহাড় দর্শনের জন্য সাজেক উপত্যকার সর্বোচ্চ চূড়া কংলাকপাড়া অনন্য। সর্বোচ্চ এ চূড়ায় দাঁড়িয়ে খুব কাছ থেকেই দেখা যায় সূর্যাস্ত। সাজেক উপত্যকার সর্বোচ্চ চূড়ার কংলাকপাড়াকে অনেকেই ‘রাঙ্গামাটির ছাদ’ও বলেন।
স্বামীর সঙ্গে ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটক প্রীতিলতা রায় ঝর্ণা জাগো নিউজকে বলেন, বিয়ের পরে স্বামীর মুখে সাজেক ও কংলাকপাড়ার গল্প শুনেছি। আজ নিজের চোখে দেখলাম।
তিনি বলেন, কংলাকপাড়ায় উঠতে কষ্ট হলেও পাহাড়, মেঘ আর সূর্যাস্ত দেখে সব কষ্ট ভুলে গেছি। এখানে না এলে জানতেই পারতাম না যে পাহাড়ে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে দিগন্তজোড়া পাহাড়, মেঘ আর সূর্যাস্ত দেখা যায়।
নোয়াখালী থেকে আসা কলেজ শিক্ষার্থী ফারহান বলেন, সাজেক আসবো আর কংলাকপাড়ায় আসবো না, তা কী করে হয়? কংলাকপাড়ায় না এলে সাজেক ভ্রমণের সাধ অধরাই থেকে যাবে বলেও মনে করেন এ পর্যটক।
Advertisement
কংলাকপাড়া কমলাকপাড়া নামেও পরিচিত। স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, কংলাকপাড়ার পাশে বড় বড় কমলা বাগান ছিল বলে এ পাড়াকে কমলাকপাড়া বলা হয়। পাহাড়ের নিচে কংলাক ঝরনা বহমান। এ ঝরনার নামানুসারেই কংলাকপাড়া নামকরণ করা হয়েছে।
মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এসআর/এমএম