`পরিবর্তনের জন্য জাতীয় পার্টি’ এ স্লোগানে আজ (রোববার) অনুষ্ঠিত হচ্ছে কক্সবাজার জেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। সম্মেলনে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি আসছেন না বলে জানা গেছে। পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সালমা ইসলাম, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াসহ কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা সম্মেলনে যোগ দিতে ইতোমধ্যে কক্সবাজার পৌঁছেছেন। দুপুর ৩ টায় কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। সেভাবে প্রস্তুতি চলছে। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নেতারা দাবি করেন, জেলার ৪ পৌরসভা, ৭ উপজেলা ও একটি সাংগঠনিক উপজেলাসহ ১২টি শাখার কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে। বাকী উখিয়া উপজেলায় আগের কমিটিই বিদ্যমান রয়েছে। প্রত্যেক কমিটির ২৫ জন কাউন্সিলরসহ মোট ৩৯৮ জন কাউন্সিলর জেলা শাখার নেতৃত্ব নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন। সম্মেলন সুষ্ঠু করতে আনুষঙ্গিক কাজও প্রায় সমাপ্ত হয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকী। সন্ধ্যার পরেই নির্বাচিত হবে মহাজোট সরকারের প্রধান বিরোধীদলের জেলা শাখার নেতৃত্ব।তবে নেতৃত্ব নিয়ে জেলা জাতীয় পার্টির বিরোধ চরমে রয়েছ। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এমপি ইলিয়াছ ও সচিব অ্যাডভোকেট তারেকের নেতৃত্বে মাঠে রয়েছে একটি গ্রুপ। তাদের নিয়ন্ত্রণেই সক্রিয় রয়েছে দলীয় কর্মকণ্ডে। অন্যদিকে সাবেক জেলা সভাপতি কবির আহমদ সওদাগর ও মুফিজুর রহমান মুফিজের নেতৃত্বে অপর এক গ্রুপ জেলার শীর্ষ পদে আসীন হতে জোর তোড়জোড় চালাচ্ছে। ক্ষমতার ব্যাপারে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। তৃণমূল থেকে হাইকমান্ড পর্যন্ত সম্পর্ক সমান্তরাল রেখে চলেছে দুই গ্রুপই। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের শুভদৃষ্টি কাদের উপর আলো ছড়াচ্ছে তা দেখতে হলে রোববার রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কৌতুহলী সবাইকে। অপর একটি সূত্র দাবি করেছে, নেতৃত্ব বন্টনে কোনো বৈষম্য হলে জেলা জাপার শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি)-তে যোগদানের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। আগ্রহীরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। যে কোনো সময় তারা আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। সূত্র মতে, জেলা জাপার সম্মেলন হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে আলহাজ কবির আহমদ সওদাগর সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট মো. তারেক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কমিটি গঠনের পর কিছুদিন তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে। এ সময় লালদীঘিরপাড়ের দলীয় অফিসও সরগরম হয়ে ওঠতো। কিন্তু কিছুদিন না পেরুতেই ফাঁটল তৈরি হয় নেতৃত্বে। সভাপতির নেতৃত্বে সী-কুইন কেন্দ্রিক সক্রিয় থাকে দলের একটি অংশ। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক এর নেতৃত্বে বাকী নেতাকর্মীদের সংগঠিত হয়ে মাঠে তৎপর ছিলেন। ইতোমধ্যে কবির-তারেক কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় হাজী মো. ইলিয়াছ এমপিকে আহ্বায়ক ও অ্যাডভোকেট মো. তারেককে সদস্য সচিব করে গঠন করা হয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি। ১০ নভেম্বর এ কমিটির অনুমোদন দেন পার্টির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তাদের অধীনেই আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন। এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা নিজেদের মতো করে কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। লবিং রেখেছেন দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও। জাপার কেন্দ্রীয় সদস্য ও কক্সবাজার সদর সংসদীয় আসন দলের মনোনীত প্রার্থী মুফিজুর রহমান বলেন, দল বড় হলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকে এটা স্বাভাবিক। তবে দলের মালিক পল্লীবন্ধু ও সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ যে সিদ্ধান্ত দিবেন সবাই এটি মেনে নেবেন বলে বিশ্বাস। দলীয় চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সুতারাং তার অবমাননা হয় এমন কোনো ঘটনা যাতে জন্ম না নেয় সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।আগামীর জেলা কমিটি ইতোমধ্যে গঠন হয়েছে ইঙ্গিত দিয়ে তিনি আরও বলেন, শনিবার রাতে সব কিছু গঠন হয়েছে। দলের চেয়ারম্যানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়াটা বাকি রয়েছে। দলের তৃণমূলের অনেকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, জাতীয় পার্টি দেশের বৃহৎ একটি দল। নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবার মতামত নেয়া দরকার। বিশেষ ব্যক্তিদের হাতে কমিটি তুলে দিলে তারা মানবে না।এক কালের ছাত্রনেতা মাস্টার মনজুর আলম বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান আলহাজ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের প্রতি অবিচল বিশ্বাস ও ভালবাসা রেখে দলের সঙ্গে এখনও আছি। ত্যাগী নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হলে পার্টির সঙ্গে থাকবো।সূত্র মতে, জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশীদার হওয়ার পর থেকে জেলা কমিটি নিয়ে প্রত্যেক বারই বিরোধ তৈরি হয়েছে। বরাবরই দুইটি অংশ মাঠে সক্রিয় রয়েছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার জেলা পর্যায়ের এক নেতা জানিয়েছেন, অযোগ্য নেতাদের কারণে তৃণমূলকে খেসারত দিতে হচ্ছে। এক নেতা আরেক নেতার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। এমনকি দলীয় এমপিকেও লাঞ্ছিত করছে। অথচ এসবের কোনো প্রতিকার নেই।জেলা জাতীয় পর্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. তারেক দল ত্যাগের বিষয়ে বলেন, যার যেখানে ভাল লাগে তারা সেখানে যেতে পারেন। এতে কেউ বাধা দিবে না। তবে দলের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্তদাতা চেয়ারম্যান স্যার। তার নির্দেশনায় দল পরিচালিত হবে। তিনি যাকে যোগ্য মনে করবেন, তিনিই দলের নেতৃত্ব দেবেন। তিনি বলেন, গঠনতান্ত্রিক পন্থায় শাখা সংগঠনসমূহের কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে। কাউন্সিলর তালিকাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। যথা সময়ে সম্মেলন হবে। সবার মতামত নিয়েই নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কেউ কিছু করলে ছাড় দেয়া হবে না।সায়ীদ আলমগীর/এসএস/এমএস
Advertisement