দেশজুড়ে

ঠাকুরগাঁওয়ে ভোটারদের ক্ষোভ প্রকাশ

উন্নয়নের কথা উঠলেই ক্ষেপে যাচ্ছেন ভোটাররা। তারা বলছেন, এখানে উন্নয়ন হয়নি। প্রসার হয়েছে দুর্নীতি। আর বেড়েছে বখাটেদের উৎপাত। ঠাকুরগাঁও পৌরসভাটি কাগজে কলমে প্রথম শ্রেণির। কিন্তু অনেকে বলছেন, প্রদীপের নিচে অন্ধকার। শহরে যানজট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপরিকল্পিত, অপর্যাপ্ত পানি সরবরাহ, অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ, নোংরা পরিবেশ, মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা, খেলার মাঠ, শিশুদের বিনোদন কেন্দ্রের অভাব, মাদকের ভয়াবহতা এবং বখাটেদের উৎপাতসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভাটি। এছাড়া নগর ভবনকেন্দ্রিক দুর্নীতির দিক থেকেও এই পৌরসভাটি পিছিয়ে নেই। এসব বিষয় এখন পৌর ভোটের রাজনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঠাকুরগাঁও পৌরসভাটি ১৯৫৮ সালে গঠিত হয়। এরপর ১৯৯৮ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায়। পৌরসভায় মোট ৫২ হাজার ৯৩০ জন ভোটারের মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা সামান্য বেশি। নারী ভোটার রয়েছেন ২৬ হাজার ৫৪৫ জন এবং পুরুষ ভোটার ২৬ হাজার ৩৩৮ জন। জনসংখ্যা ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫ শত ৪৮ জন। সরেজমিন ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কথা হলে বেরিয়ে আসে নানা কথা। প্রায় মানুষই তুলে ধরেন পৌর এলাকার মানুষের নাগরিক সুবিধা নিয়ে।পৌর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কাগজে কলমে ঠাকুরগাঁও পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির হলেও বাস্তবে তা উল্টো। উন্নয়নের দিক থেকে এ পৌরসভা কোনো ক্লাসের মধ্যে পড়ে না। আর ভোট এলেই যত উন্নয়নের বাণী শোনায় প্রার্থীরা। ভোট চলে গেলে আর কোনো খোঁজ থাকে না। তাই এবার আগে উন্নয়নের হিসাব মিলাবো তারপর দেখে শুনে ভোট দেবো।খালপাড়া এলাকার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির হলেও পৌরবাসীর কোনো উন্নয়নই হয়নি। এখানে পুরাতন লোকই বারবার নির্বাচিত হন। তারা যদি নির্বাচিত হন তাহলে পৌরসভার উন্নয়ন সম্ভব না। ঠাকুরগাঁওয়ের সমাজসেবক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে যে উন্নয়নের কথা ছিল আমরা সাধারণ পৌরবাসী ও ভোটার হিসেবে তা পাইনি। আমাদের পৌরসভায় উন্নতমানের শিশুপার্ক নেই। তাই এবার আমরা সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক প্রার্থীকে বেছে নেবো।পৌর এলাকার রিকশাচালক আবুল মিয়া বলেন, রাস্তাঘাটের অবস্থা নেই বললেই চলে। ভাঙাচোরা রাস্তায় রিকশা চালাতে খুবই কষ্ট হয়। ভোটের সময় হইছে তাই আমাদের কদর বাড়ছে প্রার্থীদের কাছে। এবার এমন একজনকে বেছে নেব যিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা ভাববেন।হাজীপাড়া এলাকার পারভীন বেগম বলেন, ভোটের সময় মুখে কথার ফুলঝুরি নিয়ে হাজির হন প্রার্থীরা। পর্যাপ্ত পানি পায় না। রান্নাবান্নায় কি যে কষ্ট তা জনপ্রতিনিধিদের বোঝানো যায় না। তাই এবার ভোটও সেইভাবেই দেবো। ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তাহমিনা আক্তার মোল্লা বলেন, আওয়ামী সমর্থিত মেয়র ক্ষমতায় থাকাকালীন পৌর এলাকায় কোটি কোটি টাকার কাজ করেছে। প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। তাই আশা করি এবার আরও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বেশি ভোটে জয়লাভ করবে।বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মির্জা ফয়সাল আমি বলেন, আমাদের এই পৌরসভাটি নামমাত্রই প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার তা থেকে পৌরবাসী সম্পূর্ণ বঞ্চিত। এই পৌরসভাটি দুর্নীতিপরায়ণ একটি পৌরসভা। দুর্নীতি থেকে পৌরসভাকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই একজন ভাল মেয়র প্রয়োজন। আমি যদি মেয়র হতে পারি আমার প্রথম কাজ হবে দুর্নীতিমুক্ত পৌরসভা গঠন করা। দুর্নীতিমুক্ত করা গেলে পৌরসভার উন্নতি হবে। নাগরিকরা প্রথম শ্রেণির সুবিধা পাবে।রবিউল এহসান রিপন/এসএস/এমএস

Advertisement