দেশজুড়ে

করোনাকালে থাকা নিয়ে সঙ্কটে রাবি ভর্তি পরীক্ষার্থী-অভিভাবকরা

আগামী ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষা। এ কারণে নগরীতে আসবেন লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক। বাইরে থেকে আসা এত পরিমাণ মানুষের জন্য এ শহরে আবাসনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। এর উপর করোনাকালে মেসগুলো বন্ধ থাকায় বাড়তি সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

Advertisement

আগামী ৪ অক্টোবর রাবিতে ‘সি’ ইউনিটের (বিজ্ঞান) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন ৫ অক্টোবর ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষাও তিনটি শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। ৬ অক্টোবর হবে ‘বি’ ইউনিটের (বাণিজ্য) পরীক্ষা। সবমিলিয়ে আসবেন প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পরীক্ষার প্রায় ১ মাস আগে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই নগরীর হোটেলগুলোতে রুম বুকিং শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে রাজশাহীর সবগুলো হোটেলে রুম বুকিং শেষ। এখন হোটেলে রুম বুকিং দিতে গিয়ে ব্যর্থ হচ্ছেন।

এ বিষয়ে সাহেববাজার এলাকার হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনালের মালিক ও রাজশাহী আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার হাসান কবির বলেন, ‘নগরীতে রাজশাহী হোটেল মালিক সমিতিভুক্ত হোটেল রয়েছে ৩০টি। এর বাইরে আরও ৩৫ থেকে ৪০টি হোটেল রয়েছে। নগরীতে সব মিলিয়ে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০টি হোটেল। এতে প্রায় ১৮০০ থেকে ২০০০ মানুষ থাকা সম্ভব।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘রাবির ভর্তি পরীক্ষার সময় হলেই প্রতিবছর রাজশাহী নগরীর হোটেলগুলোতে চাপ বাড়ে। লোকজন রুমের জন্য এক হোটেল থেকে আরেক হোটেলে দৌড়ঝাঁপ করেন। বিভিন্ন মহল থেকে রুম বুকিংয়ের জন্য ফোন আসে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টির মতো। অথচ আমাদের এখানে পরীক্ষার এক মাস আগেই রুম বুকিং শেষ হয়ে যায়।’

নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকার হোটেল আঞ্জুম ইন্টারন্যাশনালের মালিক মেহেদী মারুফ বলেন,‘আমাদের রুমগুলো অধিকাংশই এসি। রাবি পরীক্ষার কারণে দু-সপ্তাহ আগেই বুকিং শেষ। তবুও প্রতিদিন শত শত ফোন আসছে। অনেকে সশরীরেও আসছেন রুম খুঁজতে। নিরুপায় হয়ে তাদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’

আগের বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, রিডিং রুম, পেপার রুম, মসজিদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই বিভিন্ন স্থানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান করতে পারতেন। তবে এবার করোনার কারণে কোথাও তাদের থাকতে না দেওয়া হবে কি না তা জানা যায়নি।

অন্যদিকে, রাজশাহীতে ছোট-বড় মিলিয়ে মেস রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। সেখানে এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী থাকেন। তবে এবার করোনার কারণে অধিকাংশ মেসই বন্ধ রয়েছে।

Advertisement

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতির সভাপতি এনায়েতুর রহমান বলেন, রাবির পরীক্ষা নিয়ে যে সমস্যা সেটি নিয়ে আমরাও ভাবছি। এ বিষয়ে রাবি উপাচার্য, জেলা প্রশাসক ও নগর পুলিশের কমিশনার বসে একটি গঠনমূলক আলোচনা করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।

এ অবস্থায় বেশ বেকায়দায় পড়েছেন রাজশাহীর বাসিন্দারা যাদের আত্মীয়-স্বজন বিভিন্ন জেলায় রয়েছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে কাজলা মোড়ের বাসিন্দা আবু হেনা মোস্তফা জামান।

তিনি বলেন, ‘আমার শ্বশুরবাড়ি ঢাকায়। সেখান থেকে আমার শ্যালিকা এবং তার দুই বান্ধবী ও তাদের পরিবার ভর্তি পরীক্ষার জন্য আসবে রাজশাহীতে। বাসায় শ্যালিকার থাকার ব্যবস্থা হলেও অন্যদের স্থান সংকুলান করার মতো জায়গা নেই। আর তাই তাদের জন্য দুই সপ্তাহ ধরে হোটেলে রুম খুঁজে ব্যর্থ হয়েছি।’

নগরীর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহিদ হাসান। রাজনীতি করার কারণে পরিচয় রয়েছে সারাদেশে।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা, খুলনা, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জসহ কয়েকটি জায়গা থেকে কয়েকজন বড়ভাই ও ছাত্রলীগের ছোট ভাইরা ফোন দিচ্ছে হোটেল রুমের জন্য। কিন্তু এখানে অবস্থা একেবারেই খারাপ। একটা রুমও ফাঁকা নেই। এ নিয়ে বড় বিড়ম্বনায় রয়েছি।’

এ বিষয়ে হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর বলেন, ‘পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাস দেড়েক আগেই অনেকে রুম বুকিং করে ফেলে। এখনও অনেক মেস খোলেনি। আবার মেসে অভিভাবকদেরও থাকার সুযোগ নেই। রাজশাহী শহরে যতগুলো হোটেল আছে তার খুব সামান্য অংশই স্থান দিতে পারে। সে কারণেই রাবির ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের খুব বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এদিকে করোনার কারণে অনেক বাড়িতেই লোকজন নিতে চাইবে না। সবমিলিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বাইরে থেকে আসা পরীক্ষার্থী-স্বজনদের।’

এ বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ সময় এটি একটি বড় সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ বলা যেতে পারে। এ বিষয়ে আমরাও বেশ চিন্তিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামীকাল নগর ভবনে এ বিষয়ে একটি আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। সেখানে মেয়র, মহানগর পুলিশ কমিশনার, রাজশাহীর বিভিন্ন হোটেল মালিক এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমি নিজেও উপস্থিত থাকবো। সেখানে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

ফয়সাল আহমেদ/এমএএইচআর/জিকেএস