দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনায় ছাত্রলীগের নাম আসছিল ব্যাপকভাবে। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। নতুন নেতৃত্ব অনেক আশার বাণী শুনিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণায় আবারো এল ছাত্রলীগের নাম। একটি ঐহিত্যবাহী ছাত্র সংগঠনের নাম নেতিবাচকভাবে গণমাধ্যমে আসা সেই সংগঠনটির জন্য মোটেও গৌরবের নয়। এটি ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ যতো তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে দেশ ও জাতির জন্য তা ততোই মঙ্গল। একটি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করাকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার এই সংঘর্ষ হয়েছে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে। সংঘর্ষে ইটপাটকেল, লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার ছাড়াও উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়। পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা এবং দুই ঘণ্টার নোটিশে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম গ্রুপ এবং সহসভাপতি মিজানুর রহমান মিজু গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। এর মধ্যে সভাপতি গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকারের পক্ষের এবং সহসভাপতি গ্রুপ উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমানের পক্ষের বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত।বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা রাজনীতি করবে তাদের দাবি দাওয়া এবং শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে। কিন্তু স্পষ্টতই ছাত্র রাজনীতি এখন লেজুড়বৃত্তিক হয়ে গেছে। সেটি বিশ্ববিদ্যালয় বা জাতীয় যে পর্যায়েই হোক না কেন। রাজনৈতিক দলগুলোর ক্যাডার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলো। অথচ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যতম শর্ত হচ্ছে তাদের কোনো অঙ্গ সংগঠন থাকতে পারবে না। কিন্তু প্রকাশ্যেই ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারাই। আর এটাই যতো নষ্টের মূল।লেজুড়বৃত্তি করে ছাত্রজীবনেই প্রতিষ্ঠা প্রতিপত্তি লাভ এখন অনেক ছাত্রনেতারই ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত হয়েছে। এ জন্য লাজ-লজ্জা, নীতি-নৈতিকতার মাথা খেয়ে তারা প্রকাশ্য অস্ত্রবাজিতেও নেমে পড়ে। এক শ্রেণির শিক্ষকরাও এদের ইন্ধনদাতা। ভিসি নিয়োগ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ন নিয়োগ- সবখানেই আছে সরকারি ছাত্রসংগঠনের আধিপত্য। এ কারণে তারা প্রশ্রয় পায় নানা মহল থেকেই। ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন হলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত হলে অবস্থার উন্নতি হত। কিন্তু এসব নিয়ে ভাবার কেউ নেই। সবাই আছে যার যার স্বার্থ উদ্ধারে। কিছু হলেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করাটাও কোনো সমাধান নয়। মাত্র ২ ঘণ্টার নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্র-ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষার্থীদের কী পরিমাণ দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে তা কি ভেবে দেখেছেন কর্তৃপক্ষ?অধ্যয়ন যে ছাত্রদের তপস্যা হওয়ার কথা তাদের কারো কারো হাতে অস্ত্র, লাঠিসোঁটা। প্রতিপক্ষের ওপর অবলীলায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে তারা। ঘটছে হতাহতের ঘটনা। এটি কেউ দেখতে চায় না। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, রাজনৈতিক মোড়কে কোনো অপরাধ হলে সেটিকে গৌণ করে দেখা হয়। ছাত্র সংঘর্ষের সময় অনেকের হাতেই ছিল অস্ত্র। সেসব ছবিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ববস্থা নেয়া কোনো কঠিন কাজ নয়। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলে এক্ষেত্রে সদিচ্ছার বড়ই অভাব রয়েছে। এছাড়া এখানেও রয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ। সবকিছুকে নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখলে অবস্থার উন্নতি হত। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা তো নিতেই হবে। এটিই দেখতে চায় দেশের মানুষ।এইচআর/এমএস
Advertisement