রাজশাহী নগরীতে ক্রমেই বেড়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা থাকছে না বিদ্যুৎ। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবন-যাপন। এ নিয়ে অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করে বা সশরীরে গিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান গ্রাহকরা।
Advertisement
রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেলে ৩টা পর্যন্ত নগরীর শিরোইল কাঁচাবাজার, শিরোইল কলোনি, সাগরপাড়া, বোশপাড়া, হেতেম খান, নিউ মার্কেট, বালিয়াপুকুর, ভদ্র, উপশহর সহ নগরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং দেখা দেয়। সোম ও মঙ্গলবার (২০-২১ সেপ্টেম্বর) প্রায় ৫-৭ বার লোডশেডিং ছিল। বুধবারও (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনবার লোডশেডিং হয়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাড়ি-ঘর, হাট-বাজার ও অফিস-আদালতের সবাই।
নগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা ইফতেখার আলম বিশাল বলেন, ‘প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা বিদ্যুতের কোনো নাগাল থাকে না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লোডশেডিং লেগেই থাকে। এছাড়া রাতে তো আছেই।
ক্ষোভের স্বরে তিনি বলেন, যখনই অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করি তখনই বলা হয় লাইনের কাজ চলছে। লাইনের সমস্যার কাজ কী প্রতিদিনই হয়?
Advertisement
নগরীর অক্টোর হেতেমখান এলাকার বাসিন্দা ওয়াহিদুজ্জামান জনি। হেতেম খান মহিলা কলেজের পাশেই তার কম্পিউটার ও ফটোকপির দোকান। তিনি বলেন, করোনায় প্রায় ১৮ মাস দোকান খুলতে পারিনি। এরপর ৩০ দিনই বিদ্যুতের সমস্যা। এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে কাজ করব কী, আর খাবো কী।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় একের পর এক ক্রেতা ফিরে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ঠিকভাবে সরবরাহ করতে না পারলেও বিল মাসে মাসে ঠিকই গুনতে হচ্ছে।
শিরোইল মোল্লামিলের বাসিন্দা আশিকুজ্জামান জীম বলেন, ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যেই আছে। সবমিলিয়ে নেসকোর সেবায় বিরক্তি চলে এসেছে। এসব নিয়ে প্রতিবাদ জানানোরও কোনো উপায় নেই।
একই এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষিকা মোতাহারা জাহান, ১২ তারিখ থেকে স্কুলের ক্লাস নেওয়া, বাসায় প্রাইভেট পড়ানো, বাড়ির রান্না-বান্না ও শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের খাতা দেখতে হয়। কিন্তু এতো কাজের মধ্যে এই গরমে যদি বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে তবে যে কোনো মানুষই রাগান্বিত হবেন স্বাভাবিক।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ির দোতলায় থাকেন পিটিআইয়ের শিক্ষক। তিনি দীর্ঘদিন যাবত বিছানায় পড়ে আছেন। এই গরমে লোডশেডিংয়ে তার কষ্টের সীমা থাকে না।
এ বিষয়ে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) অভিযোগ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ কুমার শাহা জানান, অতিরিক্ত চাপ পড়লে অনেক সময় ট্রান্সফরমার পুড়ে যায় কিংবা ফিউট নষ্ট হয়ে পড়ে, তখনই বিদ্যুৎ চলে যায়। এসব মেরামত করতেও বেশ সময় লাগে।
নগরীতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ জানতে চাইলে রাজশাহী নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ বলেন, কাটাখালী গ্রিডে একটি সমস্যার কারণে কয়েকদিন বিদ্যুৎ নিয়ে আমরা সমস্যায় ছিলাম। তবে এখন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যদি কোথাও কোনো সমস্যা ঘটে থাকে সেটি কোনো না কোনো সমস্যার কারণেই হবে হয়তো।
তিনি আরও বলেন, সত্যি বলতে আমাদের ডিমান্ডের তুলনায় সাপ্লাই কম। প্রতিদিন যেখানে ৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে, সেখানে আমরা পাচ্ছি ৭৯ মেগাওয়াট। কখনো ৭০, ৭২ কিংবা ৭৮ মেগাওয়াট। এ ক্ষেত্রে আমাদের একেক এলাকার লাইন ১০ থেকে ২০ মিনিটের জন্য বিরতি দিয়ে আবার অন্য ডিভিশনে সাপ্লাই দেওয়া হয়। এতে সামঞ্জস্যতাও আসে আবার ট্রান্সফরমারের ফিউজ পুড়ে যাওয়া থেকেও পরিত্রাণ মেলে।
এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য ভবিষ্যতে কোনো পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন কি-না জানতে চাইলে এই প্রকৌশলী বলেন, এ নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে এবং বর্তমানে কাজও চলছে। বর্তমানে প্রতিটি বাড়িতে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার লাগানো হচ্ছে। এতে করে কোনো বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুতের লোড নেয় তাহলে সেই বাড়ির বা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে মিটারে থাকা একটি ফাংশনের কারণে। পরে অভিযোগ কেন্দ্রে বিষয়টি জানালে তার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে। এতে করে ধীরে ধীরে অনাকাঙ্ক্ষিত লোডশেডিংও কমে আসবে এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ সরবরাহ করাও সম্ভব হবে।
ফয়সাল আহমেদ/এসজে/এএসএম