<> ৭৩ ভাগ মোটরসাইকেলচালক ও ৮৬ ভাগ অটোরিকশাচালকের নিবন্ধন নেই<> বিড়ম্বনায় নিবন্ধনে আগ্রহ নেই চালকদের<> লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা মাত্র ৮২১১ জন
Advertisement
ফেনীতে অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন পরিবহন চালকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ক্ষেত্রে এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ফেনীর হিসাব অনুযায়ী, ফেনীতে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল ও সিএনজির সংখ্যা ৩৫ হাজার ৫২১টি। এর বিপরীতে লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা মাত্র আট হাজার ২১১ জন। অর্থাৎ লাইসেন্স ছাড়াই ফেনীর সড়কে-মহাসড়কে চালকের আসনে বসে আছেন ২৭ হাজার ৩১০ ব্যক্তি।
এসব পরিবহনে ফেনীতে মাত্র ২৩ ভাগ চালকের নিবন্ধন রয়েছে। বাকি ৭৭ ভাগ চালকের কোনো নিবন্ধন নেই। বিপুলসংখ্যক চালকের প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকা এবং অসচেতনতার কারণে সিএনজি-মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ, জেলায় অবৈধ ৭৭ ভাগ পরিবহনের চালককে নিবন্ধনের আওতায় আনতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বিআরটিএ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফেনীতে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ২৬ হাজার ৩২১টি। এসব মোটরসাইকেলের বৈধ চালকের সংখ্যা মাত্র ছয় হাজার ৯৫৬ জন। অর্থাৎ ১৯ হাজার ৩৬৫ জন চালকের অনুমোদন নেই। তবে সংখ্যাটি আরও কয়েকগুণ বেশি হবে। এর কারণ হিসেবে মোটরসাইকেল মালিকরা বলছেন, মোটরসাইকেলের সংখ্যা দিয়ে এর চালকের সংখ্যা নিরূপন করা যায় না। কারণ কোনো পরিবারে যদি একটি মোটরসাইকেল থাকে, তাহলে ওই পরিবারের অন্য সদস্যরাও ব্যবহার করেন। এমনও পরিবার আছে যেখানে একটি মোটরসাইকেল ৫-৭ জন ব্যবহার করেন।
Advertisement
ফেনী বিআরটিএর তথ্য বলছে, জেলায় ৯ হাজার ২০০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স আছে। এর বিপরীতে মাত্র এক হাজার ২৫৫ জন চালকের লাইসেন্স রয়েছে। তবে এ পরিসংখ্যানের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের সংগৃহীত তথ্যে বড় ধরনের ফারাক রয়েছে।
সিএনজি মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের তথ্য বলছে, ফেনীতে বিগত কয়েক বছর ধরে সিএনজিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। যে কারণে ফেনীতে কী পরিমাণ সিএনজি রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান বিআরটিএর কাছে নেই। প্রকৃতপক্ষে ফেনীর সড়ক ও মহাসড়কে অন্তত ২০ হাজার সিএনজি চলাচল করে। এসব সিএনজির বেশিরভাগই লাইসেন্স করা হয়নি।
অটোরিকশা শ্রমিকরা বলছেন, গাড়ির লাইসেন্স না থাকলে চালকের লাইসেন্স তেমন কোনো কাজে আসে না। পুলিশ ধরলে টাকা দিতেই হবে। তাই গাড়ির লাইসেন্স না আসার আগে চালকের লাইসেন্স বানানোর প্রয়োজন মনে করেন না তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক ও মালিক জাগো নিউজকে বলেন, ফেনীতে বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল ও অটোচালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই এটা সত্য। এজন্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নজরদারির দুর্বলতা, প্রাতিষ্ঠানিক অক্ষমতা ও দুর্নীতি দায়ী। লাইসেন্স ছাড়া যদি রাস্তায় গাড়ি চালানো যায় তাহলে লাইসেন্স নেওয়ার প্রয়োজন কী?
Advertisement
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের ফেনী জেলার সভাপতি রাসেল চৌধুরী বলেন, বিআরটিএ লাইসেন্স তৈরিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে না নিলে ফেনীতে দিন দিন লাইসেন্সহীন চালক ও পরিবহনের সংখ্যা বাড়বে। এরসঙ্গে পাল্লা দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যাও বাড়বে।
ফেনী অঞ্চলের বিআরটিএর সহকারী পরিচালক পার্কন পাল চৌধুরী বলেন, ফেনীতে ২৭ হাজারের বেশি চালকের লাইসেন্স না থাকার বিষয়টি সত্য। প্রয়োজনীয় আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো গেলে এ সংখ্যা আরও কমতো। সড়ক নিরাপদ রাখতে অভিভাবক ও সিএনজি মালিকদেরকে অদক্ষ ও নিবন্ধনহীন চালকদের হাতে পরিবহন না দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
নুর উল্লাহ কায়সার/এসআর/জিকেএস