জাতীয়

ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ধর্মঘট প্রত্যাহার

১৫ দফা দাবি আদায়ে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-প্রাইম মুভার-ট্রেইলার-মিনি ট্রাক/পিকআপ মালিক ও শ্রমিকদের চলমান কর্মবিরতি (ধর্মঘট) প্রত্যাহার করা হয়েছে।

Advertisement

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক-প্রাইম মুভার পণ্যপরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুকবুল আহমদ ও বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মো. মনির সাংবাদিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের কথা জানান।

দুপুর ১২টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে কাভার্ডভ্যান-ট্রাক-প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের ১৮ জন নেতা অংশ নেন। বিকেল পৌনে ৩টায় বৈঠক শেষ হয়।

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে পণ্যবাহী যানবাহনের মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হয়। তিনদিন অর্থাৎ শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত তাদের এ ধর্মঘট চলার কথা ছিল। ধর্মঘটের কারণে ইতোমধ্যে বন্দরগুলোতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

Advertisement

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা (মালিক ও শ্রমিকরা) ১৫টি দাবি-দাওয়া আমাদের কাছে পাঠিয়ে ছিলেন। তারা একটা কর্মসূচিও (৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতি) ডিক্লেয়ার করেছিলেন। সভায় আমরা তাদের দাবি-দাওয়া শুনেছি। তারা যথাযথভাবে আমাদের কাছে উত্থাপন করেছেন।’

তিনি বলেন, যে দাবিগুলো তাৎক্ষণিক বা এখনই করা উচিত বলে আমরা মনে করেছি, সেগুলোর ক্ষেত্রে বলেছি- আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেগুলো মনে করেছি সময় লাগবে, আমাদের সচিব মহোদয়রা নোট নিয়েছেন এবং তাদের মন্ত্রণালয় থেকে সেগুলোর ব্যবস্থা নেবেন।’

‘এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে যেটি ছিল সেটার বিষয়ে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান একটি টাস্কফোর্স গঠন করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটি সমাধান করবেন’ বলেন আসাদুজ্জামান খান।

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘অন্য যে দাবি ছিল সবগুলো নিয়ে দীর্ঘ আলাপ হওয়ার পর তারা বলেছেন, তারা সন্তুষ্ট হয়েছেন। তারা যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, সেগুলো প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন, সেগুলো ওনাদের মুখে শোনেন।’

Advertisement

এরপর বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মো. মনির বলেন, ‘যে ৭২ ঘণ্টার কর্মসূচি ছিল আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের সভাপতিত্বে আজকের এ আলোচনা বৈঠকে অত্যন্ত সন্তুষ্ট ও আনন্দিত। কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিলাম।’

বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার পণ্যপরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুকবুল আহমদ বলেন, আজকের দীর্ঘ সময়ের বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট হয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলাম।

মালিক-শ্রমিকদের কিছু দাবি সড়ক নিরাপত্তার জন্য সঠিক নয়। এ বিষয়ে কী চিন্তা করছে সরকার- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ আলাপ হয়েছে। যে দাবিগুলো যৌক্তিক, একজন ১০ বছর ধরে প্রাইমমুভার চালায় কিন্তু তার লাইসেন্স হলো হালকা কিংবা মাঝারি। তাদের দাবি ছিল যারা চালাচ্ছেন তাদের একটা টেস্ট করে বিআরটিএ’র মাধ্যমে যদি পান তাহলে যেন সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেন। ওনারা অযৌক্তিক কিছু বলেনি।’

দাবিগুলোর মধ্যে যা আছে

মালিক-শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- মোটরযান মালিকদের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়করের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বর্ধিত আয়কর অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং ইতোমধ্যে আদায় করা বর্ধিত কর হর্স মালিককে ফেরত দিতে হবে।

পণ্য পরিবহন করা ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্সের বর্তমান বাৎসরিক ফি কমিয়ে আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করতে হবে।

যেসব চালক ভারী মোটরযান চালাচ্ছেন তাদের সহজশর্তে ও সরকারি ফি'র বিনিময়ে অবিলম্বে ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে পুনরায় হয়রানিমূলক ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। মোটরযান চালকদের আগামী দুই মাসের মধ্যে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে।

সরকারি খরচে মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুল চালু করতে হবে। প্রশিক্ষণ স্কুল থেকে উত্তীর্ণদের দেওয়া সনদের ভিত্তিতে বিআরটিএকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে।

পণ্য পরিবহন খাতের ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, প্রাইমমুভার, ট্রেইলার প্রভৃতি সরকার নিবন্ধিত শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর গঠনতন্ত্র সম্মত কল্যাণ তহবিলের চাঁদা সংগ্রহের ওপর কোনো অজুহাতেই বিধিনিষেধ আরোপ করা চলবে না।

চট্টগ্রাম প্রাইমমুভার-ট্রেইলার শ্রমিক ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা প্রস্তাব বা সুপারিশগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।

সব ধরনের মোটরযানে নিয়োজিত সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মতো রেশনিং সুবিধার আওতায় আনতে হবে। এর আগে ১০ টাকা দামে চাল ও ন্যায্যমূল্যে অন্যান্য খাদ্যপণ্য সরবরাহ করতে হবে।

অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী সড়ক পরিবহন আইনে সংশোধন করতে হবে।

চট্টগ্রামে ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মনোনীত প্রতিনিধি এবং সব ড্রাইভার ও সহকারীকে চট্টগ্রাম বন্দরে হয়রানিমুক্তভাবে প্রবেশের সুবিধার্থে প্রতি বছর নবায়নযোগ্য বায়োমেট্রিক স্মার্টকার্ড দিতে হবে।

সারাদেশের জন্য একই পরিমাণ নির্ধারণ করে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন বন্ধে লোডিং পয়েন্ট তথা পণ্য পরিবহনের উৎসস্থলে সরকার নির্ধারিত ওজন নিশ্চিত করে পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে মালামাল লোড করতে হবে।

কর্তব্যরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় বা চোর-ডাকাতের হাতে বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বা তাদের হেফাজতে মারা যাওয়া সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আহত হলে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা খরচ ও জীবিকা ভাতা দিতে হবে।

সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী ‘আর্থিক সহায়তা তহবিল’ থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সড়ক পরিবহন শ্রমিকের উত্তরাধিকারীকে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ ও আহত শ্রমিকের চিকিৎসা খরচ ঝামেলামুক্তভাবে দ্রুত দিতে হবে।

বৈঠকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিআরটিএ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, হাইওয়ে পুলিশের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আরএমএম/এমআরআর/জেআইএম