সমাজে প্রচলিত এমন অনেক নাম আছে; যেগুলো কারো নাম রাখা ঠিক নয়। এর মধ্যে একটি ‘মাহিন বা মুহিন’। কিন্তু কেন করো নাম ‘মাহিন-মুহিন’ রাখা যাবে না?
Advertisement
মানুষের নাম হবে সুন্দর এবং অর্থবহ। শুনতে সুন্দর হলেই হবে না; বরং এর অর্থও সুন্দর হতে হবে। কিন্তু ‘মাহিন-মুহিন’ এমন শব্দ; যা কোরআনের একাধিক স্থানে এসেছে। আবার শুনতেও ভালো লাগে। আর তা দেখেই অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানের নাম ‘মাহিন বা মুহিন’ রাখেন। অথচ শব্দ দুইটির অর্থ সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নয়। অনেকেই না জেনে তাদের সন্তানের নাম ‘মাহিন-মুহিন’ রাখেন।
‘মাহিন-মুহিন’এর অর্থ হচ্ছে- হীন, তুচ্ছ, লাঞ্ছিত, অপমানজনক, লাঞ্ছনাদায়ক। অনেকেই কোরআনের আয়াতে ‘মাহিন-মুহিন’ শব্দটি শুনেই সন্তানের নাম রাখেন। আসলে এটির অর্থ ভালো ও অর্থবহ নয়। তাই কারো নাম ‘মাহিন-মুহিন’ রাখা যাবে না।
‘মাহিন-মুহিন এবং মুহিনা’ শব্দটি কোরআনে যেসব অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাহলো-
Advertisement
১. সুরা বাকারা : আয়াত ৯০
فَبَآءُوۡ بِغَضَبٍ عَلٰی غَضَبٍ ؕ وَ لِلۡکٰفِرِیۡنَ عَذَابٌ مُّهِیۡنٌ
‘সুতরাং তারা ক্রোধের উপর ক্রোধের অধিকারী হল। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক আজাব।’
২. সুরা আল ইমরান : আয়াত ১৭৮
Advertisement
اِنَّمَا نُمۡلِیۡ لَهُمۡ لِیَزۡدَادُوۡۤا اِثۡمًا ۚ وَ لَهُمۡ عَذَابٌ مُّهِیۡنٌ
‘আমি তো তাদেরকে অবকাশ দেই যাতে তারা পাপ বৃদ্ধি করে। আর তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক আজাব। এ আয়াতে ‘মুহিন’ শব্দটি ‘অপমানজনক’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
৩. সুরা নিসা : আয়াত ১৪
وَ لَهٗ عَذَابٌ مُّهِیۡنٌ
‘আর তার জন্যই রয়েছে ‘অপমানজনক’ আজাব।’
৪. সুরা হজ : আয়াত ৫৭
وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا فَاُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ مُّهِیۡنٌ
‘আর যারা অস্বীকার করে এবং আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে, তাদের জন্যেই রয়েছে ‘লাঞ্ছনাদায়ক’ আজাব।’ এ আয়াতেও শব্দটি ‘লাঞ্ছনাদায়ক/অপমানজনক’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
৫. সুরা লোকমান : আয়াত ৬
اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ مُّهِیۡنٌ
‘তাদের জন্য রয়েছে ‘লাঞ্ছনাকর’ আজাব।’
৬. সুরা যাসিয়া : আয়াত ৯
اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ مُّهِیۡنٌ
‘এদের জন্য রয়েছে ‘লাঞ্ছনাদায়ক’ শাস্তি।’
৭. সুরা নিসা : আয়াত ১৫১
اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡکٰفِرُوۡنَ حَقًّا ۚ وَ اَعۡتَدۡنَا لِلۡکٰفِرِیۡنَ عَذَابًا مُّهِیۡنًا
‘তারাই প্রকৃত কাফির এবং আমি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছি ‘অপমানকর’ আজাব।’
৮. সুরা সাজদা : আয়াত ৮
ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهٗ مِنْ سُلٰلَةٍ مِّنْ مَّآءٍ مَّهِیْنٍ
‘তিনি কাদা হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। এরপর তিনি তার বংশ উৎপন্ন করেন ‘তুচ্ছ’ তরল পদার্থের নির্যাস থেকে।’ এ আয়াতে মাহিন শব্দটি ‘তুচ্ছ’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
৯. সুরা যুখরুফ : আয়াত ৫২
اَمۡ اَنَا خَیۡرٌ مِّنۡ هٰذَا الَّذِیۡ هُوَ مَهِیۡنٌ وَّ لَا یَکَادُ یُبِیۡنُ
‘আমি কি এই ব্যক্তি থেকে শ্রেষ্ঠ নই, যে ‘হীন’ এবং স্পষ্ট বর্ণনা করতে প্রায় অক্ষম’? এ আয়াতে ‘হীন’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
১০. সুরা কলাম : আয়াত ১০
وَ لَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَّهِیْنٍ
‘আর অনুসরণ করো না তার, যে কথায় কথায় শপথ করে, যে ‘লাঞ্ছিত’।’ এ আয়াতেও ‘মাহিন’ অর্থ ‘লাঞ্ছিত’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
১১. সুরা মুরসালাত : আয়াত ২০
اَلَمۡ نَخۡلُقۡکُّمۡ مِّنۡ مَّآءٍ مَّهِیۡنٍ
‘আমি কি তোমাদেরকে ‘তুচ্ছ’ পানি দিয়ে সৃষ্টি করিনি? এ আয়াতেও শব্দটি তুচ্ছ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
এছাড়াও এ শব্দটি কুরআনুল কারিমের যেসব সুরায় এসেছে; তাহলো- সুরা মুজাদালাহ : আয়াত ৫ ও ১৬; সুরা নিসা : আয়াত ৩৭, ১০২ ও ১৫১; সুরা আহজাব : আয়াত ৫৭; সুরা সাবা : আয়াত ১৪ এবং সুরা দুখান : আয়াত ৩০।
সুতরাং সন্তানের নাম- মাহিন, মুহিন বা মুহিনা’ রাখার আগে যদি কেউ অর্থের এ বিষয়টি জানতো তবে কি সে নিজ সন্তানের নাম ‘মাহিন, মুহিন বা মুহিনা; রাখতো?
না; কখনো নয়; বরং এ কারণেই তো মানুষ কারুন, ফেরাউন, হামান শব্দগুলো কুরআনে আসা সত্ত্বেও কেউ এগুলো সন্তানের নাম রাখে না। তাই কোরআনের শব্দ শুনতে ভালো লাগলেও আগে তার অর্থ জেনে নেওয়া জরুরি। অর্থ জেনেই কেবল সন্তানের উত্তম ও সুন্দর নাম রাখা যেতে পারে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাদের সন্তানের নাম কোরআনের সুন্দর ও অর্থবহ উত্তম শব্দে রাখার তাওফিক দান করুন। মন্দ অর্থ বা নিরর্থক নাম রাখা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম