মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এই মহান নেতাকে মওলানা ভাসানী নামে জানতো সবাই। এই নামেই তিনি সাধারণ মানুষের আপনজনে পরিনত হয়েছিলেন। তিনি রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময় মাওপন্থী কম্যুনিস্ট তথা বামধারা রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার অনুসারীরা এজন্য তাকে "লাল মওলানা" নামেও ডাকতেন।তার নাম মওলানা ভাসানী হওয়ার নেপথ্য অনেকের কাছেই অজানা। মওলানা ভাসানী ১৯২৯-এ আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এখান থেকে তার নাম রাখা হয় "ভাসানীর মওলানা"। এরপর থেকে তার নামের শেষে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয়।মওলানা ভাসানী ছিলেন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়ক, মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ চেয়ারম্যান। রাজনৈতিক জীবনে তিনি আজীবন শোষিত মানুষের পক্ষ নিয়ে শাসকগোষ্ঠীকে দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তিনি নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সব সময় থেকেছেন আপসহীন নেতৃত্বের ভূমিকায়।মওলানা ভাসানী ১৯৪৭-এ সৃষ্ট পাকিস্তান ও ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের মানুষের কাছে `মজলুম জননেতা` হিসাবে সমধিক পরিচিত। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে অন্যতম।মওলানা ভাসানী ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা এবং পঞ্চাশের দশকেই নিশ্চিত হয়েছিলেন যে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি অচল রাষ্ট্রকাঠামো। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের কাগমারী সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের `ওয়ালাকুমুসসালাম` বলে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন।মওলানা ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম হাজী শরাফত আলী ও মায়ের নাম মজিরন বিবি। মক্তব হতে শিক্ষাগ্রহণ করে কিছুদিন মক্তবেই শিক্ষকতা করেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে পীর সৈয়দ নাসীরুদ্দীনের সাথে আসাম গমন করেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ইসালামিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯০৭-এ দেওবন্দ যান। দুই বছর সেখানে অধ্যয়ন করে আসামে ফিরে আসেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ময়মনসিংহ সফরে গেলে তার ভাষণ শুনে ভাসানী অনুপ্রাণিত হন।দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ, তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে মুনাজাত, আলোচনা সভা ইত্যাদি।এ নেতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ আসাদ পরিষদ দুদিনব্যাপি কর্মসূচি গ্রহন করেছে। জাতীয় গনতান্ত্রিক লীগের পক্ষ থেকে নয়াপল্টনের ভাসানী ভবনকে বহুতল ভবন নির্মাণ ও মওলানা ভাসানী গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন।
Advertisement