সৌদি সফর শেষে আগামীকাল সকালে দেশে ফিরছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। সৌদি আরবে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় থাকার পর তারা দেশে ফিরছেন। সারাদেশে ওমরাহ পালন করতে ইচ্ছুক হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি তাদের ফিরে আসা এবং ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে টিকাদান সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সুখবর শোনার অপেক্ষায় রয়েছেন।
Advertisement
গত ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল সৌদি আরবে যান। সফরকালে প্রতিনিধি দল ১৪৪৩ হিজরি সালের ওমরাহ ও সম্ভাব্য হজ কার্যক্রম নিয়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন এমন তথ্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল। এ ব্যাপারে কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে তা জানার জন্য ওমরাহ পালনেচ্ছুরা প্রতিনিধি দলের ফেরার অপেক্ষা করছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় এক বছরেরও বেশি সময় বন্ধ রাখার পর সম্প্রতি সৌদি সরকার বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ওমরাহ পালনের অনুমতি দিয়েছে। বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরা ওমরাহ করতে সৌদি যেতে পারলেও করোনার টিকা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বাংলাদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যেতে পারছেন না।
সৌদি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, ওমরাহ পালনে ইচ্ছুক সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে করোনা টিকার (ফাইজার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা জনসন অ্যান্ড জনসন) সম্পূর্ণ ডোজ টিকা নিতে হবে। এসব টিকার দুই ডোজ গ্রহণ করা ছাড়া সৌদিতে প্রবেশ করা যাবে না। এছাড়া কেউ যদি চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকার দুই ডোজ নিয়ে থাকেন, তাহলে তাদের ফাইজার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার বাড়তি বুস্টার ডোজ নিতে হবে।
Advertisement
চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি দেশে করোনা প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন চার কোটি ২৫ লাখ ৯৫ হাজার ১৫০ জন। তাদের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে চার কোটি ২০ লাখ আট হাজার ৮৭৬ জন ও পাসপোর্টের মাধ্যমে পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ২৭৪ জন নিবন্ধন করেন।
গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে মোট টিকা নিয়েছেন তিন কোটি ৭৩ লাখ ১৫ হাজার সাতজন। টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এক কোটি ২৪ লাখ ২৭ হাজার ৮৬৬ জন, ফাইজার এক লাখ ৩১১ জন, মডার্না ৪৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬২ জন ও সিনোফার্মের এক কোটি ৯৮ লাখ ৩৬ হাজার ৭৮ জন টিকা নিয়েছেন।
দেশে টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে অধিকাংশই চীনের সিনোফার্মের টিকা নিয়েছেন। ফলে তাদের মধ্যে যারা ওমরাহ করতে ইচ্ছুক তাদের সৌদি নির্দেশনা অনুযায়ী টিকার দুই ডোজ নেওয়ার পরও বুস্টার ডোজ হিসেবে মর্ডানা, ফাইজার কিংবা জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে ইচ্ছা সত্ত্বেও তারা ওমরাহ করতে যেতে পারছেন না।
Advertisement
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার ওমরাহ পালনেচ্ছু ধর্মপ্রাণ মুসল্লি সৌদি যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। সম্প্রতি সৌদি সরকার বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও টিকার বুস্টার ডোজ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে হাজার হাজার মুসল্লি যেতে পারছেন না। খুব স্বল্প সংখ্যক যাত্রী ওমরাহ করতে যাচ্ছেন।
সঠিক সংখ্যা বলতে না পারলেও এ সংখ্যা ৫শ হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল আগামীকাল দেশে ফিরছেন। তাদের কাছ থেকেও সর্বশেষ খবর জানা যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন জানান, সৌদি সফর শেষে আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও সচিবসহ সফরকারি দলের অন্যান্য সদস্যদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তারা ফিরে এসে গণমাধ্যমকে সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জানাতে পারেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এমইউ/এআরএ/জেআইএম