ভবানীপুরে উপ-নির্বাচন আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। চলছে জোর প্রচারণা। কিন্তু তাতে উঠে আসছে না স্থানীয়দের সমস্যার কথা। প্রার্থীরা শুধু একে অপরকে আক্রমণ আর গলাবাজি করেই ক্ষান্ত। খবর ডয়েচে ভেলের।
Advertisement
ভবানীপুরে এবারের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে ত্রিমুখী। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জীর বিপক্ষে প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বিজেপির প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল এবং সিপিএমের শ্রীজিব বিশ্বাস। কংগ্রেস সেখানে প্রার্থী দেয়নি, এখন পর্যন্ত কাউকে সমর্থনও জানায়নি।
নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া তিন দলই পুরোদমে প্রচার শুরু করে দিয়েছে। মমতা প্রায় প্রতিদিনই নবান্ন থেকে ফেরার পথে ভবানীপুরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কখনো যাচ্ছেন গুরুদ্বার, কখনো মন্দির, কখনো মসজিদে। তিনি সমানে বিজেপিকে আক্রমণ করছেন। বলছেন আগামী নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীকে হারানোর কথা। মমতার মূল প্রচারণাস্থল হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ধর্মস্থান। বক্তব্যে নিজেকে তুলে ধরছেন মোদীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। মমতা ব্যনার্জী বলেছেন, ভারত কখনোই পাকিস্তান হবে না। আর তালেবান মানসিকতা থেকেও দেশকে রক্ষা করবেন তিনি।
বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের প্রচারণাও চলছে নানা ধর্মপীঠ ঘিরে। মন্দিরে পূজা দিয়ে ধুনচি নেচে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। সেখানে প্রচুর মানুষ থাকায় নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে নোটিশও পেয়েছেন। তবে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর তাতে থোড়াই কেয়ার। বলেছেন, দিনে তিনি ১০০ নোটিশ পান, ১৫০ পড়েন, ২০০ ছিঁড়ে ফেলেন। এরপর সংকীর্তনে অংশ নিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা, খোল বাজিয়েছেন, গেয়েছেন। মমতার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেছেন, তাকে এত ভয় কেন মুখ্যমন্ত্রীর?
Advertisement
ডয়েচে ভেলের খবর অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। স্কুল-কলেজ ঠিকমতো খোলেনি। মরণব্যাধি কোভিড-১৯ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রেণে আনা যায়নি। পার্শ্ব-শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন, কয়েকজন বিষ পর্যন্ত খেয়েছিলেন। রাজ্যে চাকরির সুযোগ কমেছে। অথচ নির্বাচনী প্রচারণায় এসব নিয়ে শ্রীজিব বিশ্বাস ছাড়া আর কেউই তেমন কথা বলছেন না। যদিও ভবানীপুরে তিনি জিতবেন, এমন আশা কট্টর বাম সমর্থকরাও করছেন না। সেখানে সিপিএমের জনভিত্তি এতটাই দুর্বল যে, শ্রীজিবের কথা বেশি মানুষের কানে পৌঁছাচ্ছেও না। প্রধান দুই দল জনগণের সমস্যার কথা বলছে না।
সমস্যার কথা নেই কেনগত বিধানসভা নির্বাচনের সময় তৃণমূল ও বিজেপির একই ধরনের প্রচার দেখেছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। এবার ভবানীপুরে উপনির্বাচনেও সেটিই হচ্ছে।
প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী ডয়েচে ভেলেকে বলেন, বুদ্ধিজীবীদের ধারণা, ভোটে মানুষ তার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান নিয়ে ভাবে। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা গেছে, এই ধারণা ঠিক নয়। মানুষের চিন্তাভাবনা এর বাইরে।
দীপ্তেন্দ্রর মতে, ভোটে অনেক সময় ভাষাগত, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক পরিচয়টাই বড় হয়ে ওঠে। যেমন- গত বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বাঙালি পরিচয়ের তাস খেলেছেন এবং বিপুল ভোটে জিতেছেন। মুসলিম ভোটারদের কাছে ধর্মীয় বিষয়টা বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। তারা গণহারে বিজেপির বিরুদ্ধে ও তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সম্ভবত এবারই প্রথম পুরো মুসলিম সম্প্রদায় মমতার পাশে দাঁড়িয়েছে। ফলে খাবার, পানীয়, বাসস্থানের বিষয় নিয়ে ভোটাররা অবশ্যই প্রভাবিত হবেন, এমনটি নয়।
Advertisement
কিন্তু প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা মনে করেন, একটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সেখানকার সমস্যা ও উন্নয়নের বিষয়টিই প্রধান ইস্যু হওয়া উচিত। তা না হয়ে মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার যাওয়া প্রধান্য পাচ্ছে, মোদীর বিকল্প হয়ে ওঠার কথা বলে বাঙালির ভাবাবেগ উস্কে দিতে চাওয়া হচ্ছে, এটি কাম্য নয়।
শরদের কথায়, মমতা নন্দীগ্রামেও চণ্ডীপাঠ করেছিলেন। এখানে ধর্মস্থানে যাচ্ছেন। বিজেপি’ও এটাই করে। তাদের সঙ্গে উন্নয়নের কোনো সম্পর্ক নেই। এই বিষয়ে তৃণমূল ও বিজেপি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। উন্নয়ন ও সমস্যার প্রসঙ্গ না ওঠা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
কেএএ/জেআইএম