দেশজুড়ে

কৃষ্ণপুর গণহত্যায় শহীদদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ওঠানোর দাবি

হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এ দিনে জেলায় সবচেয়ে বড় গণহত্যা সংঘটিত হয় কৃষ্ণপুর গ্রামে। সেদিন ১২৭ জন ব্যক্তিকে ব্রাশফায়ারে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তাই নিহতদের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

Advertisement

লাখাই সদর ইউনিয়নের অন্তর্গত হিন্দু অধ্যুষিত একটি গ্রাম কৃষ্ণপুর। ইউনিয়নের অন্যান্য গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন একটি এলাকা যেখানে শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে এবং বর্ষায় নৌকায় চলাচল করতে হয়। ১৯৭১ সালে দেশব্যাপী নারকীয় গণহত্যা চললে পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন প্রাণভয়ে আশ্রয় নেওয় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এ গ্রামটিতে।

এ খবর স্থানীয় রাজাকারদের মাধ্যমে পৌঁছে যায় অষ্টগ্রামে অবস্থিত পাক আর্মি ক্যাম্পে। ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে অমাবস্যার অন্ধকারের মতো কালো ছায়া নেমে আসে ওই গ্রামটিতে। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ক্যাম্প থেকে দুটি স্পিডবোটে ১০-১৫ জন পাক সৈন্য সেখানে আসে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় ৪০-৫০ জন রাজাকার-আলবদর।

নিরীহ ১৩১ জনকে ধরে নিয়ে স্থানীয় কমলাময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করা হয়। এতে নিহত হন ১২৭ জন। বাকি চারজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মৃতের অভিনয় করে পড়ে থাকেন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলা এ তাণ্ডব পুরো গ্রামটিকে কার্যত শ্মশানে রূপান্তর করে।

Advertisement

কমলাময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪৫ জন শহীদের নাম সম্বলিত স্মৃতিফলক আজও সেই ভয়াল স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়। বর্তমানে এখানে সরকারিভাবে বধ্যভূমিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তিনজন শহীদের ম্যুরাল ও স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে।

এ উপলক্ষ্যে শনিবার দুপুরে কৃষ্ণপুর গ্রামে উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে শহীদদের স্মরণে নির্মিত বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা অমরেন্দ্র লাল রায়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন- ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, লাখাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুল ইসলাম, কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র সূত্রধর, প্রকৌশলী প্রদীপ কান্তি রায় প্রমুখ।

বক্তারা একাত্তরে শহীদ ১২৭ জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য জোর দাবি জানান।

Advertisement

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির বলেন, পরিচয় পাওয়া ৪৫ জনের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তোলার বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে। আমি এরই মধ্যে তাদের তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। দ্রুত তাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এসজে/জেআইএম