তিস্তার ভাঙনের আশঙ্কায় থাকা স্বামী সাবেদ আলীর কবরের পাশে সারারাত বসে থাকলেন স্ত্রী বিবিজন। স্বামীর শেষ চিহ্নটুকু হারানোর আশঙ্কায় দিশেহারা তিনি। রাতদিন তাকিয়ে থাকছেন ভাঙনের মুখে থাকা প্রিয়জনের কবরটির দিকে।
Advertisement
জানা যায়, দীর্ঘ দুই মাস ধরে তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার শত শত পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আগ্রাসী ভাঙনের মুখে ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম মৌজার বগুড়াপাড়া এলাকার গৃহবধূ বিবিজনের স্বামী সাবেদ আলীর কবরও। তার স্ত্রী সারারাত স্বামীর কবরের পাশে বসে আহাজারি করেন। স্থানীয়রা শত চেষ্টা চালান কবরটি রক্ষার জন্য। কিন্তু তিস্তার কাছে যেন হার মেনেছেন সবাই।
শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে এ তথ্য জানান স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) শহিদুল ইসলাম।
ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে জানান, দুই মাস ধরে তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে কোনো কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না। কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘অসংখ্য কবর নদীগর্ভে চলে গেছে। না জানি কখন ওই বিবিজনের স্বামীর কবরও নদীগর্ভে চলে যায়।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, জিও ব্যাগ এবং জিও টিউব ফেলে অস্থায়ীভাবে তিস্তার ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করতে ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য প্রায় ৮২০০ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে তিস্তা নদীর ভাঙন স্থায়ীভাবে রোধ করা সম্ভব হবে।
দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙনে রাজারহাট উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের শত শত পরিবারের বাড়িঘরসহ বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীগর্ভে চলে গেছে এসব এলাকার পাঁচটি মসজিদ, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি সেতু, পাঁচটি কালভার্ট, বাঁধ, এক কিলোমিটার পাকা সড়কসহ দুটি স্পার। হুমকির মুখে তিন ইউনিয়নের তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কয়েকটি মসজিদ, একটি গুচ্ছগ্রাম, এক কিলোমিটার পাকা সড়কসহ শত শত পরিবারের বসতভিটা।
মো. মাসুদ রানা/ এফআরএম/এএসএম
Advertisement