বিশেষ প্রতিবেদন

চাঁনখারপুল-বঙ্গবাজারের সংকীর্ণ ফুটপাতে চরম দুর্ভোগ

চাঁনখারপুল থেকে বঙ্গবাজারের মাঝের নিমতলী পোল্ট্রি মার্কেটের সামনের ফুটপাত দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে হাজারো মানুষ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন এ ফুটপাতটি অতি সংকীর্ণ। চলাচলকারীরা বলেন, এত সংকীর্ণ ফুটপাত দিয়ে দুজন হাঁটতে গেলেই গায়ে গা লাগে। আর ব্যবসায়ীদের বক্তব্য এত টাকা দিয়ে দোকান ভাড়া নিয়ে একটু জায়গা তো নিতেই পারি। এতে ভোগান্তি বাড়ছে সব শ্রেণির মানুষের।

Advertisement

এই ফুটপাত দিয়ে নিয়মিত চলাচল করা মো. নূরে আলম কাজল বলেন, এতটুকু ফুটপাতে দুজন মানুষই চলতে পারে না, তার ওপর আবার দোকানের জিনিসপত্র রাখে।

আর দোকানের সামনে জিনিসপত্র রাখা নিয়ে প্রশ্ন করলে ব্যবসায়ী আব্দুর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, দোকানের সামনে রাখবো না তো কী করবো? এত টাকা দোকান ভাড়া ও অ্যাডভান্স দিয়ে দুই হাত জায়গা তো ব্যবহার করতেই পারি। কীসের দোকান কাস্টমারদের (ক্রেতা) জানানোর জন্য হলেও তো দু’একটি জিনিস বাইরে রাখতে হয়।

এই এলাকা দিয়েই গেছে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার। এর পশ্চিম অংশে ডিএসসিসির ৩৩ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের চাঁনখারপুল মোড় থেকে ফুলবাড়িয়ার বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স হেড কোয়াটার মোড় পর্যন্ত নিচের ফুটপাত দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। এসব ফুটপাতের রাস্তা অনেক সংকীর্ণ হওয়ায় প্রায় সময়ই সেখানে জ্যাম লেগে থাকে।

Advertisement

এছাড়াও পথচারীদের স্বাভাবিক চলাচলের জন্য রয়েছে পোল্ট্রি মার্কেট সংলগ্ন সংকীর্ণ ফুটপাত। দক্ষিণ পাশে যা রয়েছে, তা ফুটপাত না ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ জায়গা তা বুঝে ওঠা দুষ্কর। দোকান ঘেঁষে সরু ফুটপাত হওয়ায় ভালোভাবে ব্যবসাও করতে পারছেন না দোকানিরা। প্রতিদিন এই ফুটপাত দিয়ে কয়েক হাজার পথচারী বঙ্গবাজার-গুলিস্তান- নাজিরা বাজারে চলাচল করেন। এতে রিকশা, বাস কখন যে গায়ের ওপর তুলে দেয় সেই আতঙ্কে থাকতে হয় পথচারীদের।

চাঁনখারপুল মোড় থেকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদরদপ্তর মোড় পর্যন্ত প্রায় ১২০টির মতো দোকান রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে নিমতলী পোল্ট্রি মার্কেটেই রয়েছে ৯৭টি দোকান। ডিএসসিসির এই মার্কেটে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে সেলুনে কাজ করেন শামীম। একেবারে সাদামাটা দোকানটিতে কাস্টমার না থাকায় চেয়ারে বসেই সময় পার করছিলেন তিনি। অবস্থা জানতে চাইলে অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেই জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাস্টমার পাই না, সমস্যা ফ্লাইওভার। এটা বকশিবাজার পর্যন্ত নিলে আমরা সমস্যায় পড়তাম না। রাস্তাটা বড় থাকতো, ফুটপাতও ছোট হতো না।’

সরেজমিনে গত কয়েকদিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা ঘেঁষে ২-২.৫ ফুট প্রস্থের ফুটপাতের পোল্ট্রি মার্কেটটিতে কোনো কোনো দোকানির জিনিসপত্র রাখার জায়গা নেই, কেউ কেউ দোকান ঘেঁষে ফুটপাতের মধ্যে খাঁচা, পাখির খাবারের বস্তাসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল রেখেছেন। এতে আড়াই ফুট প্রস্থের ফুটপাতে দুজন মানুষ চলাচল করতে সমস্যা তো হয়ই, অনেক সময় একজন মানুষও চলতে পারে না। তার ওপর ফুটপাত ঘেঁষে কিছুদূর পরপরই বৈদ্যুতিক খুঁটি। ফলে সড়ক দিয়েই হাঁটতে হয় পথচারীদের।

অনিক কর্মকার নামে এক পথচারী ক্ষোভ জানিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, এমনিতেই হাঁটার রাস্তা কম, তার ওপর পিলার। প্রতিদিন শরীর ঘেঁষে চলতে হয় আমাদের।

Advertisement

পথচারী ও ব্যবসায়ীদের এই অসহায়ত্ব, দুর্ভোগ কমানোর দাবি তাদের। মার্কেটে পাখি, কবুতর ও মুরগির খাবার বিক্রি করা দোকানি মোহাম্মদ ফাহিম জানান, ফুটপাত দিয়ে নারী ও বৃদ্ধ মানুষ চলতে পারে না। ফুটপাত ও রাস্তা বড় হলে আমাদের ব্যবসা করতে যেমন সুবিধা হতো মানুষও স্বাভাবিকভাবে চলতে পারতো। কিন্তু সামনে কোনো জায়গা নেই, কীভাবে সমাধান করবে জানি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মার্কেটটা একটু ভেতরে দিলে ভালো হতো। কাস্টমাররা এখানে দাঁড়াতে পারে না, পথচারীদের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। গাড়ি এলে অনেক ধুলাবালি ওঠে।

অনেক দোকানিকে ক্রেতা ও পথচারীদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে কাজের সুবিধার জন্য ফ্লাইওভারের নিচে জিনিসপত্র ডেলিভারির কাজ করতে দেখা যায়। কোনো কোনো দোকানি ছোট পিকআপ ও ভ্যানে করে মালামাল ডেলিভারি দেন।

জানতে চাইলে পোল্ট্রি ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, দোকানের সামনে কিছু রাখতে পারি না। মানুষের অসুবিধা হয়। ফ্লাইওভার হওয়ার আগে ফুটপাতটি আরও দুই ফুট প্রশস্ত ছিল। কমে যাওয়ায় এখন মালামাল ওঠানামা করতে সমস্যা হচ্ছে।

ফ্লাইওভার হওয়ার আগে ফুটপাতটি আরও প্রশস্ত ছিল। এটি হওয়ার পর রাস্তা একেবারে সরু হওয়ায় ফুটপাত ছোট করা হয় বলে জানা যায়। ফলে এখন দুজন মানুষেরও চলাচল করতে বেগ পেতে হয়।

নিমতলী পোল্ট্রি মার্কেট সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক এরফান আহমেদ সোহেল বলেন, আগে দোকানের সামনে গাড়ি আসতে পারতো মালামাল আনা নেওয়ার জন্য, এখন সেটা পারছি না। মাল ক্যারি (বহন) করতে হয়। এতে খরচ ও কষ্ট বেশি। আর ফুটপাতে জিনিসপত্র রাখার কথা বহুবার নিষেধ করেছি। প্রথমে মানলেও কয়েকদিন পরই তা আগের মতো হয়ে যায়।

সামনে জায়গা না থাকায় বিকল্প কী ব্যবস্থা থাকতে পারে জানতে চাইলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল জানান, বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার একটাই পথ আছে। মার্কেটের পিছনে কিছু জায়গা আছে যদি সেটা নিয়ে মার্কেট বড় করা যায় তাহলে পথচারীদের চলাচল ও ব্যবসায়ীদের ভালোভাবে ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএসসিসির ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মামুন জগো নিউজকে বলেন, অপরিকল্পিত কাজের জন্য পথচারী ও ব্যবসায়ীদের এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও জায়গাটি ছিটমহলের (২০ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝে) মতো হয়ে গেছে।

‘উন্নয়ন করতে চাই। মেয়র (তাপস) মহোদয় এলে বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করবো। উনি (তাপস) যে নির্দেশনা দেবেন সেই অনুযায়ী কাজ করবো।’

আরএসএম/এআরএ/এএ/এএসএম