প্রতিবছর বর্ষা-শরৎকালে রৌমারি বিল হয়ে ওঠে পূর্ণযৌবনা। এসময় বিলের সৌন্দর্য বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তাই রৌমারি বিল ভ্রমণের উপযুক্ত সময় এ মৌসুম। যারা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য অন্যতম স্থান হতে পারে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের বিলটি।
Advertisement
রৌমারি বিলের দুই ধারে থই থই করছে পানি। মাঝ বরাবর চলে গেছে পিচঢালা-আধাপাকা সড়ক। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। পড়ন্ত বিকেলে বিলের মাঝখান দিয়ে চলা সড়কটি ব্যস্ত হয়ে উঠেছে দর্শনার্থীদের আনাগোনায়। সড়কে হাঁটতে হাঁটতে অনেকেই বিলের খোলা হাওয়া গায়ে লাগান। এছাড়াও মোটরসাইকেলে চড়ে বিলের দুই ধারের সৌন্দর্য উপভোগ করাটাও বেশ রোমাঞ্চকর।
যাতায়াত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো থাকায় দূরদূরান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন। বর্ষা মৌসুম চলে যাওয়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমে গেলেও ছুটির দিনে দেখা যায় মানুষের উপচেপড়া ভিড়।
চাইলে ছুটির দিনে পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে যে কেউ ঘুরে আসতে পারেন এ বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। জামালপুর সদর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে রৌমারি বিলের অবস্থান। বিলের বুকে ঘুরতে পারবেন নৌকায়। সড়কের পাশেই ভাড়া পাওয়া যায় নৌকা। নৌকা ভ্রমণের খরচও বেশ কম। জোৎস্না রাতেও বিলে ঘোরা যায়। ঘুরতে এসে কেনা যায় তাজা মাছ আর খাঁটি দুধ। পশ্চিম আকাশে রক্তিম সূর্যের আলোয় বিলের পানি হয়ে ওঠে রঙিন। বিলের তীরে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
Advertisement
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিলের দুই পাশে কাপাসহাটিয়া ও শেখসাদী গ্রাম। পশ্চিম অংশে টুপকার চর, ঘোষের পাড়া। আর দক্ষিণে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী ঝিনাই। বর্ষাকাল ছাড়া অন্য ঋতুতে বিলের সৌন্দর্য ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। দিগন্তজুড়ে তখন সবুজ-সোনালি আবার কখনো হলুদ শস্যের মাঠ। শীতকালে নানা রকম পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। সারাবছরই দেখা যায় চখা-চখী, পানমুরগি, শামুককেচা, সরালি, বক, মাছরাঙা, পাতিমাছরাঙা, বালিহাঁস, সারস, ডাহুক, পানকৌড়ি, সাদাচিল, ঈগল, শঙ্খচিল। অন্য প্রাণির মধ্যে দেখা যায় বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, কচ্ছপ, কাঁকড়া, গুঁইসাপ, উদবিড়াল। নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদ তো আছেই।
স্থানীয়রা জানান, বিলে সারাবছর মাছ পাওয়া যায়। জেলেরা নানা কায়দায় নৌকা ব্যবহার করে জাল ফেলে মাছ শিকার করেন। রাতের বেলাও জেলেরা হ্যাজাক, টর্চ, কেরোসিনের বড় কুপি জালিয়ে মাছ ধরেন। প্রতিবছর বিলে স্থানীয়দের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় নৌকাবাইচের। এসময় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে এ বিলে।
রৌমারি বিলে গেলে ঘুরে আসা যায় গান্ধী আশ্রমও। নৌকা কিংবা সড়কপথে মাত্র ১০-১৫ মিনিট সময় লাগবে গান্ধী আশ্রমে পৌঁছতে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইউনুস আলী জানান, রৌমারি বিল একশ বছরের পুরোনো। এ বিলের আগের নাম ছিল রৌমারি টুপকার চর বিল। আগে শীতের সময় এ বিলে বহু অতিথি পাখি এলেও এখন আর তেমন দেখা যায় না।
Advertisement
কথা হয় বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা সাইফুল ও রহমতের সঙ্গে। তারা জানান, দুই বছর আগেও জায়গাটি এমন ছিল না। শুধু পায়ে হেঁটে অথবা সাইকেল দিয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়া যেতো। কিন্তু এখন জায়গাটির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হিল্লোল সরকার জায়গাটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হিল্লোল সরকার জানান, একসময় এ বিলে প্রচুর রুই মাছ পাওয়া যেতো। আর জামালপুরবাসী রুই মাছকে রৌ মাছ বলার কারণে বিলের নাম হয় রৌমারি বিল। বিলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তারই প্রাথমিক পর্যায় এটি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, জায়গাটির অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এ বিলকে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে জামালপুর শহরে। সেখান থেকে সিএনজি কিংবা অটোরিকশায় হাজিপুর বাজার। তারপর অটোরিকশা কিংবা ভ্যানে যাওয়া যায় রৌমারি বিলে। এতে আপনার খরচ খুবই কম হবে।
এফআরএম/এসইউ/এমএস